১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (একাত্তরে শহীদ) স্পষ্টভাবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। তাঁর সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ২৯ ফেব্রুয়ারি পাবনায় হরতাল পালিত হয়। দুর্বৃত্তরা হরতালকারীদের আক্রমণ করলে তার প্রতিবাদে কর্মচারী ও ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঢাকায় সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। গণপরিষদের সরকারি ভাষার তালিকা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। এবারও ধর্মঘটে সরকারের পুলিশ বাহিনী এবং তাদের গুন্ডাবাহিনী নির্যাতন চালায়। এর প্রতিবাদে এবং ভাষা আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, অত্যাচারের তদন্ত, বাংলাকে গণপরিষদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগ পরীক্ষায় উর্দুর সমমর্যাদা দানের বিশেষ প্রস্তাবসহ আটটি বিষয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও তত্কালীন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নাজিমউদ্দিন মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৫২ সালের আগের তিনটি বছর ১১ মার্চকে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হতো।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে পল্টনে এক সভা হয়। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ১৯৪৮ সালে ঢাকায় দেওয়া মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলা দরকার.
২০ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ এবং ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ অ্যাসেম্বলি ভবন ঘেরাও করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারীদের আসেম্বলি ভবন ঘেরাও, সদস্যদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদি কারণ এবং গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখিয়ে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোরেশী ১৪৪ ধারা জারি করেন। ঢাকা জেলার সর্বত্র ধর্মঘট, সভা ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়।
৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ ধর্মঘটের জন্য প্রচারণা চললেও সংগ্রামের কৌশল সম্পর্কে সর্বদলীয় কর্মপরিষদের সদস্যদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক চলে। শেষ পর্যন্ত ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। আর সেটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি করে এক নতুন দিগন্ত—জীবনের বিনিময়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষার অধ্যায়।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটার দিক থেকেই শিক্ষার্থীরা পুলিশের নিষেধ অমান্য করে কলাভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। শুরুতে পুলিশ বাধা দেয়নি। ক্রমে সমাবেশের আকার বড় হতে থাকে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গাজীউল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা শুরু হয়। এ সময় খবর আসে, লালবাগে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে। উত্তেজনা বাড়ে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন ও সভাপতি গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দেন। স্লোগান ওঠে, ‘১৪৪ ধারা মানি না, মানব না।’
বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এতে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
১৪৪ ধারা অমান্য করে আন্দোলনকারীরা ‘দশজনী মিছিল’ বের করেন। মোটা দড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করা হলেও দুপুর ১২টা থেকে ছাত্ররা সে বাধা পার হয়ে দলে দলে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের দিকে যাত্রা করেন। মিছিল বের হতেই পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে থাকে। দেখতে দেখতে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ট্রাকে ভর্তি করে ছাত্রদের লালবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরও ছাত্রদের দমন করতে না পেরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের লাঠিপেটা এবং ছাত্রদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে।
এই সংঘর্ষের মধ্যেই বেলা তিনটার দিকে পুলিশ গুলি ছোড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি ঠিক কতজন শহীদ হয়েছিলেন, তা আর স্পষ্টভাবে জানার উপায় নেই। পুলিশ লাশ সরিয়েছিল। সে দিন কে কে শহীদ হয়েছিলেন, তা নিয়েও মতান্তর আছে। কে প্রথম শহীদ হন, তা–ও বলা সহজ নয়।
২২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী শহীদ হয়েছিলেন: সালাউদ্দীন (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র), আবদুল জব্বার (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র), আবুল বরকত (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র) এবং রফিক উদ্দীন (বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের পুত্র)।
২২ ফেব্রুয়ারিতেও আন্দোলন চলতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রথখোলা ও নবাবপুর রোডে ভাষাশহীদদের স্মরণে জনসমাবেশ, গণমিছিল ও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভরত জনতার ওপর পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করতে থাকলে একপর্যায়ে শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরে অস্ত্রোপচার করা হলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
সরকার ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি নিহতদের একটি বিবরণ প্রকাশ করে। সেখানে দুজন মোটর দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এই সূত্র অনুযায়ী শহীদ হয়েছিলেন:
১. আবুল বরকত, ছাত্র। পিতার নাম জনাব শামসুদ্দীন, পশ্চিম বাঙলা, থানা ভরতপুর (মুর্শিদাবাদ), গুলির আঘাতে প্রাণ ত্যাগ করেছেন। আজিমপুর মসজিদের হাফেজ মোহাম্মদ আবদুল গফুরের ইমামতিতে জানাজা পড়া হয়। জানাজায় উপস্থিত আত্মীয়গণের মধ্যে এলএসজি ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি জনাব এ কাশেম এবং এসিসট্যান্ট একাউন্টস অফিসার জনাব মালিক ছিলেন।
২. রফিকউদ্দীন। পিতা কমার্শিয়াল প্রেসের মালিক। রফিকউদ্দীন ছাত্র নহেন, গুলির আঘাতে নিহত হন। উক্ত ইমামের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়া হয়। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
৩. আবদুল জব্বার, পিতার নাম আবদুল কাদের। গ্রাম পাঁচুয়া, পো. অ. গফরগাঁও, ময়মনসিংহ। উক্ত হাফেজ ও ম্যাজিস্ট্রেট জানাজায় ছিলেন।
৪. শফিউর রহমান, পিতা হাইকোর্টের কেরানি মাহবুবুর রহমান। বুলেটের আঘাতে নিহত। পিতা ও ভ্রাতা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
৫. আবদুল আওয়াল, পিতা মোহাম্মদ হাসিম। মোটর দুর্ঘটনায় নিহত।
৬. ১০ বত্সর বয়স্ক বালক। সম্ভবত মোটর দুর্ঘটনায় নিহত।
এরপর সারা দেশে ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সর্বস্তরের নারী-পুরুষ, পুরান ঢাকার বাংলাভাষী নন এমন সবাই এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন।
আজও প্রতি বসন্তে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আমরা ভাষা আন্দোলনের প্রতি নিবেদন করি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
সামিও শীশ: সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৪৪ ধ র আবদ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারে নিহত হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নিহতের সরকারি সংখ্যা ১০০২ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর-বিবিসি
নিহতদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের। মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর।
ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ২,৩৭৬ জন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৩০ জন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।
ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে।
সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’
ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।