যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তার অজ্ঞাতসংখ্যক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই কর্মীরা সংস্থাটির রিক্রুটিং ও ডাইভারসিটি নিয়ে কাজ করে থাকেন। সিআইএর সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, সংস্থাটির ইতিহাসে এটিই হবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাইয়ের অন্যতম ঘটনা।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের জনশক্তিতে বৈচিত্র্যের সন্নিবেশ ঘটানো বা ডাইভারসিটির প্রচেষ্টা নিষিদ্ধ করে এক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায় সম্ভাব্য গণছাঁটাইয়ের ওই উদ্যোগ তাঁর এ আদেশেরই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

বাধ্যতামূলক প্রশাসনিক ছুটিতে থাকা কর্মকর্তাদের গত শুক্রবার ডাকতে শুরু করে সিআইএ। এরপর তাঁদের পদত্যাগ করতে বলা হয়, নয়তো বরখাস্তের শিকার হতে হবে বলে জানায়। তবে দ্রুতই এ পদক্ষেপ স্থগিত করেন একটি ফেডারেল আদালত।

কর্মীদের এভাবে গণহারে ছাঁটাইয়ের সিআইএর উদ্যোগের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী সোমবার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব ভার্জিনিয়ার একজন বিচারকের শুনানি করার কথা রয়েছে।

কর্মীদের এভাবে গণহারে ছাঁটাইয়ের সিআইএর উদ্যোগের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী সোমবার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব ভার্জিনিয়ার একজন বিচারকের শুনানি করার কথা রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে দাখিল করা এক নথিতে সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ ডাইভারসিটি নিয়োগ বন্ধে হোয়াইট হাউসের নির্বাহী আদেশ মেনে আরও কর্মী ছাঁটাই করার পদক্ষেপ নিতে পারেন। অন্যদিকে, কর্মীদের পক্ষের একজন আইনজীবী কেভিন ক্যারল বলেন, ওই নথি দাখিলের ঘটনা এ ইঙ্গিতই দেয় যে বরখাস্ত করা সবে শুরু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নীতিতে বদল আনতে প্রেসিডেন্টরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন আদেশ দিয়ে থাকেন। তবে যেসব কর্মী আগের প্রশাসনের অগ্রাধিকারমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, তাঁদের চাকরিচ্যুত করার ঘটনা বিরল। এমনটাই বলছেন সাবেক কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন এবার বেসামরিক বিমান চলাচল পরিবহনের কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করছেন ট্রাম্প১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিআইএর ইন্টারোগেশন প্রোগ্রাম বাতিল করেছিলেন। এ কর্মসূচি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় নেওয়া হয়েছিল। তবে যেসব কর্মীর বিরুদ্ধে আল–কায়েদার বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের বরখাস্ত করেননি তিনি।

আদালতে সরকারি কৌঁসুলিদের নথি দাখিলের ঘটনা এ ইঙ্গিতই দেয় যে বরখাস্ত করা সবে শুরু হয়েছে।কেভিন ক্যারল, কর্মীদের পক্ষের আইনজীবী

সর্বশেষ ১৯৭৭ সালে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নিয়েছিল সিআইএ। ওই সময় প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সংস্থাটিকে গোপন তৎপরতা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্টের আদেশের পর সংস্থাটির তৎকালীন পরিচালক স্ট্যানসফিল্ড টার্নার এমন তৎপরতায় নিয়োজিত ১৯৮ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেন। এমনকি তখনো ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে নেওয়া হয়, যাঁরা অবসরে যাওয়ার মতো বয়সে পৌঁছেছিলেন, তাঁদের এ পদক্ষেপের বাইরে রাখা হয়।

এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশের পর নতুন করে শুরু হওয়া কর্মী ছাঁটাই বন্ধে মামলা করা ২১ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তার আইনজীবী ও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ক্যারল বলেন, ডাইভারসিটি ও রিক্রুটিং নিয়ে কাজ করা প্রায় ৫১ জন কর্মকর্তার পদ–পদবি পর্যালোচনা করছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনট্রাম্পের স্বেচ্ছা পদত্যাগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন ৭৫ হাজার সরকারি কর্মী১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্যারল বলেন, সংস্থা যেসব কর্মীকে বরখাস্ত করতে চাইছে, তাঁরা কেউ ডাইভারসিটি বিশেষজ্ঞ নন। তিনিসহ আরও কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, এই কর্মীদের বোঝানো ও নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের আমলে তাঁদের ওই পদ গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এমন সক্ষমতা দেশের বাইরে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করার সময় অর্জন করেছিলেন তাঁরা।

সর্বশেষ ১৯৭৭ সালে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নিয়েছিল সিআইএ। ওই সময় প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সংস্থাটিকে গোপন তৎপরতা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্টের আদেশের পর সংস্থাটির তৎকালীন পরিচালক স্ট্যানসফিল্ড টার্নার এমন তৎপরতায় নিয়োজিত ১৯৮ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেন।

ইতিপূর্বে কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁদের আশা, সিআইএ ডাইভারসিটি সংক্রান্ত ছাঁটাই পদক্ষেপ থেকে সরে আসবে এবং তাঁরা নিজেদের পুরোনো কাজ—বিদেশে গোয়েন্দা নিয়োগে ফিরতে পারবেন।

আদালতে দাখিল করা আইনি নথিতে সরকারি কৌঁসুলিরা যুক্তি দেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ আটকানোর আদেশ ‘জনস্বার্থের ক্ষতি করবে’। কর্মীদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে র‍্যাটক্লিফের সক্ষমতার পাশাপাশি তাঁর কর্তৃত্বেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে এটি।

আরও পড়ুনআরও প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করলেন ট্রাম্প ও মাস্ক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র কর ম ক ত কর ন র কর ম ক কর ম সরক র স আইএ

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ মাসে দেড় শ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে জেলেদের নতুন আতঙ্কের নাম আরাকান আর্মি। গত পাঁচ মাসে মাছ ধরতে যাওয়া দেড় শ জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন টেকনাফের ৪০০ জেলে।

গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় সরকার ঘোষিত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তবে তার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই টেকনাফের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে জেলে পরিবারগুলো সীমাহীন অর্থকষ্ট ও ভোগান্তিতে পড়েছে।

বাংলাদেশ–মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে নাফ নদীর জলসীমা পড়েছে ৮৪ কিলোমিটার। কিন্তু তিন মাস ধরে নাফ নদীর জলসীমায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) টহল তৎপরতা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে নাফ নদী থেকে জেলেদের ট্রলারসহ অপহরণের ঘটনাও বেড়েছে। জেলেরা এসব ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করেছেন।

সর্বশেষ ৮ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমার মৌলভীরশীল নামের এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে চারটি ফিশিং বোটসহ ২৩ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এ ঘটনায় আতঙ্কিত টেকনাফের অন্তত ৪০০ ট্রলারের তিন হাজার জেলে পাঁচ দিন ধরে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য মংডু টাউন দখলের পর নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মির (এএ) তৎপরতা বেড়েছে। এ সময় এই বাহিনীর সদস্যরা ১৫১ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে বিজিবির একক প্রচেষ্টায় ১৩৪ জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অন্য জেলেদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান আরও বলেন, ট্রলারসহ ২৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। আজকালের মধ্যে ভালো একটি সংবাদ পাওয়া যেতে পারে। এর আগেও আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিবি যোগাযোগ করে কয়েক দফায় দেড় শতাধিক অপহৃত বাংলাদেশি জেলেকে ফিরিয়ে এনেছে।

ট্রলারমালিকদের দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা দ্রুতগতির স্পিডবোট নিয়ে নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ছেন। তাঁরা অস্ত্রের মুখে টেকনাফের জেলেসহ মাছ ধরার ট্রলার ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিজিবির তৎপরতায় সম্প্রতি কিছু জেলেকে ফেরত আনা গেলেও অপহরণের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।

সম্প্রতি বন্দিদশা থেকে ফিরে আসা টেকনাফের কয়েকজন জেলে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া ও নিয়মিত যোগাযোগের পথ সৃষ্টি করতেই আরাকান আর্মি নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করছে। রাখাইনে বন্দী থাকার সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা তাঁদের কাছে এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, রাখাইন রাজ্য দখলের পর (গত ডিসেম্বর মাসে) আরাকান আর্মি নাফ নদীতে মাছ আহরণসহ নৌকা চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। এ বিষয়ে টেকনাফের জেলেদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে না পড়েন। তারপরও বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার খায়ুকখালী খালে নোঙর করা মাছ ধরার ট্রলার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ মাসে দেড় শ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি