চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। বাসের যাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী বাদী হয়ে আজ শুক্রবার ভোরে মামলাটি দায়ের করেন। সকাল ১০টায় মির্জাপুর থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল বাসার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বাদী ওমর আলী বলেন, গত সোমবার রাত ১১টায় বাসে উঠে ডাকাতির কবলে পড়েন তিনি। এরপর থেকে এ ঘটনা নিয়েই আছেন। আজ ভোর চারটার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে তিনি, যাত্রী সোহাগ হোসেন ও তাঁদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফকে মির্জাপুর থানায় আসেন। তারপরে মামলার এজাহারে তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে এজাহার তাঁকে পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি জবানবন্দিতে ডাকাতির ঘটনা ও দুই নারীর শ্লীলতাহানির বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু এজাহারে কী লেখা হয়েছে, তিনি জানেন না।

ওমর আলী আরও বলেন, বাসের সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩), চালক বাবলু আলী (৩০) ও তাঁর সহকারী মাহবুব আলম (২৮) মির্জাপুর থানায় এসে বসে আছেন। তাঁরাও মামলা করবেন। ওমর আলী অভিযোগ করেন, ‘ওরা (চালক ও তাঁর সহকারী) ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওরা আসামি হবে। আবার ওরাই মামলা করার জন্য এসে বসে আছেন। এটা কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’

এ বিষয়ে জানতে মির্জাপুর থানার মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে কর্তব্যরত কর্মকতা এসআই খায়রুল বাসার নিশ্চিত করেছেন চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর কাছে এজাহার নেই। সেখানে কী লেখা হয়েছে, সেটা তিনিও বলতে পারেননি।

গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলসের’ একটি বাসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়।

গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলসের’ একটি বাসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে একই জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে ডাকাতেরা নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার নানান টালবাহানা করতে থাকে। তাঁরা বলেন, তাঁদের গাড়িতে তেল নেই। অবশেষে যাত্রীদের চাপের মুখে পড়ে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে বাস ছাড়েন। যাত্রীরা প্রথমে বাসটি নিয়ে মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যান। সেখানে তখন ওসি ছিলেন না বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার পরে বাসটি বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়।

আরও পড়ুনঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির যে বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা১৬ ঘণ্টা আগে

ডাকাতির ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চালানমূলে ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারী ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুব আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন স মব র র ত চলন ত ব স র সহক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় সীমা হত্যা নাটকে এসআই শাহ আলমের কারাদণ্ড

দুর্নীতি দমন কমিশেনের (দুদক) করা মামলায়  খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) বরখাস্তকৃত এসআই মো. শাহ আলমকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে আলাদাভাবে ৭ হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম মামলার রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কামরুল হোসেন জোয়ার্দার।

খুলনার খালিশপুরের মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় মিল্কিওয়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসানের বাসার গৃহকর্মী সীমা হত্যার নাটক সাজানো এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে হওয়া মামলার পৃথক দুটি ধারায় তাকে এ দণ্ড দেন বিচারক। 

আরো পড়ুন:

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার

ভিক্ষুককে ‌যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গণধোলাই

মামলা সূত্রে জানা যায়, মিল্কিওয়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন ২০০৯ সালে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ওলিয়ার রহমানের ৯ বছরের মেয়ে সীমাকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন কাজ করার পর সীমা ওই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ঘটনায় সীমার মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে মাসুদ হাসান, মোহাম্মদ আলী খন্দকার ও মো. মাসুদ শেখকে আসামি করে ২০১২ সালের ৭ মে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই শাহ আলম এই পরিবারটির কাছে তিন লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় এসআই শাহ আলম নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হত্যা নাটক’ সাজান। পরবর্তীতে ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলার একটি খাল থেকে বস্তাবন্দী ২৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী একটি নাম না জানা লাশকে যাচাই বাছাই না করে সীমা হিসেবে শনাক্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালান। তদন্ত কার্যক্রমে এই পুলিশ কর্মকর্তা শাহ আলম ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অ্যাডভাকেট কামরুজ্জামান ভূইয়া আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সীমাকে ফেরত দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেন। 

২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালত সীমাকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে সীমাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে আদালত দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন। 

গৃহকর্মী সীমা হত্যা নাটক ও জীবিত উদ্ধার ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে এসআই মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তকালে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ আগস্ট খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন (নং-১৭০)। 

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২০১২ সালের ৭ মে দায়েরকৃত নারী ও শিশু-২৫৭/১২ নম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই শাহ আলম নগদ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ ছাড়াও মাসুদ হাসানের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। ওই টাকা না পেয়ে কাজের মেয়ে সীমা হত্যার কল্পকাহিনী তৈরি করে মাসুদ হাসান দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেন। কথিত অপহরণ মামলায় মাসুদ হাসানের নাম উল্লেখ থাকলেও তার স্ত্রীর নাম ছিল না। তারপরেও তাদেরকে গ্রেপ্তার করেই এসআই শাহ আলম দ্রুত সাংবাদিকদের ছবি তুলে তাদেরকে আসামি হিসেবে আদালতে পাঠান। এরপর ডুমুরিয়ার একটি নাম না জানা লাশ নিয়েই তৈরি করা হয় সীমা হত্যার ‘কল্পকাহিনী’।

দুদকের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, বরখাস্তকৃত এসআই শাহ আলম অপহরণ মামলা তদন্তকালে জনৈক মাজেদা বেগম ও দিপালী সরকারকে দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বক্তব্য প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ডিবির ৫ সদস্য
  • পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৭ ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার 
  • দেশেই আন্তর্জাতিক ডিগ্রির সুযোগ
  • বরখাস্ত এসআই শাহ আলমের ৭ বছর কারাদণ্ড
  • কেএমপির বরখাস্ত এসআই শাহ আলমের ৭ বছর কারাদণ্ড
  • খুলনায় সীমা হত্যা নাটকে এসআই শাহ আলমের কারাদণ্ড