প্রতিবছরের মতো আবার আমাদের মুখোমুখি একুশে ফেব্রুয়ারি; অথবা বলা যায়, একুশে ফেব্রুয়ারির মুখোমুখি আমরা। বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার স্মারক একুশে ফেব্রুয়ারি—এই কথার মধ্যে একটা কূটাভাস বা আপাতবিরোধ আছে। তার পেছনে যে প্রশ্ন, স্মারকটি ৮ ফাল্গুন নয় কেন? এ প্রসঙ্গে বলা যায়, বাংলাদেশ এমনকি বৃহত্তর ভারতবর্ষে বা এশিয়া-আফ্রিকার বহু দেশে খ্রিষ্টীয় সালটি অধিকতর ব্যবহৃত ও পরিচিত। ফলে চেয়ার, টেবিল, মিনিট, মাইলের মতো জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি বাংলায় আত্তীকৃত হয়ে গেছে। ভাষা ও সংস্কৃতির রূপ-রূপান্তরের ক্ষেত্রে এটিই স্বাভাবিক। জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত বাঙালি যে একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন তার উজ্জ্বল উদাহরণ।
দেশভাগের পর পাকিস্তানের অধিবাসীদের মধ্যে উর্দুভাষীর সংখ্যা ছিল ৩ শতাংশের কম। বাংলা, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, এমনকি বেলুচি ও পাখতুনভাষীও তার চেয়ে বেশি ছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে ‘অনলি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ’ ঘোষণা করেছিলেন ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত ভাষণে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মতো ভারতত্যাগী মোহাজির বা খাজা নাজিমউদ্দিনের মতো জনবিচ্ছিন্ন তথাকথিত নবাবরাই পাকিস্তানের শাসকদের মধ্যে উর্দুতে কথা বলতেন। তবু সেদিনের বাঙালি বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা চেয়েছিল পাকিস্তানের ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে; একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে নয়। তাই একুশে উৎসারিত যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, তা অন্য জাতি বা জাতীয়তাবাদের বিরোধী কোনো উগ্র জাত্যভিমান নয়; বরং উদার গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ।
সম্প্রতি ‘বৈষম্য’ কথাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির স্বায়ত্তশাসনের দাবি, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধ—সবই প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষার প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ছেষট্টির আন্দোলন পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক জীবনে বাঙালিদের দাবিয়ে রাখার বিরুদ্ধে জনরায় বললে ভুল হয় না। ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল। পরাস্ত করেছিল আত্মগর্বী শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে। তাই ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থান পূর্ব বাংলা ও বাংলাদেশের সব গণ-আন্দোলনের থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
আগস্ট ২০২৪-এর পর আমরা এখন আরও অর্ধবছর পেরিয়ে গেছি। এই আন্দোলন সম্পর্কে বহু তথ্য ও তত্ত্ব এখন পরিচিত। এতে অংশ নিয়েছিল বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি, যাদের মতাদর্শ এক নয়; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী। তাদের ঐক্যের ভিত্তি ছিল বৈষম্যের অবসান। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল দুর্নীতি ও অন্যান্য অনাচারের মাধ্যমে একদল মানুষের বিপুল পরিমাণ সম্পদ কুক্ষিগত ও ভোগ-বিলাস করার ফলে। সামাজিক জীবনে একদল মানুষের প্রতিপত্তি ও নিপীড়ন অন্যদের বৈষম্যের শিকারে পরিণত করেছিল। এই প্রতিপত্তিশালীদের মধ্যে রাজনৈতিক কুশীলবদের সঙ্গে সমান মাত্রায়, এমনকি কখনো অধিক মাত্রায় ক্ষমতাবান হয়েছিল একদল সামরিক বেসামরিক আমলা ও ব্যবসায়ী। পরিণতিতে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ কামনা করেছিল।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক জীবনে ‘বৈষম্য’-এর পরে জনপ্রিয় শব্দ ‘সংস্কার’। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর অনেকে প্রথমে বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্রনীতি, মুক্তিযুদ্ধের পরম্পরা, নির্বাচন ব্যবস্থা সবটাই নাকচ করার পক্ষে বলেছিলেন। পরে আবার তা সংস্কারের পথে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭২-এর সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই; সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা মান্য না করা বা তার অপপ্রয়োগের ফলে। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে: ১৯.
সংবিধানের এসব ধারা-উপধারা থেকে স্পষ্ট যে গত অর্ধশতকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় কর্তৃত্ব করতে গিয়ে যাঁরাই ‘বৈষম্য’ করেছেন, তাঁরা সবাই ’৭২-এর সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
বাংলাদেশে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরোধ এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়, শিক্ষা ও শিক্ষার ভাষানীতি সংস্কারের কোনো প্রয়াস আমাদের চোখে পড়েনি। এখানেই একুশের চেতনার সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়ার প্রশ্নটি সামনে আসে।
একুশের মূলকথা ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। নিঃসন্দেহে এর প্রধান জায়গাটি হচ্ছে শিক্ষা। আমরা কি বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষা মাতৃভাষায় প্রদান করতে পারছি? এর স্পষ্ট উত্তর, না। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে তিন ধরনের শিক্ষাদান প্রচলিত রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে মূলত বাংলায় পাঠদান করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাঠদান দুর্বল, শিক্ষকদের দক্ষতা ও নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং শ্রেণিকক্ষসহ শিক্ষা উপকরণ অপর্যাপ্ত। এর বিপরীতে বড়-ছোট নগরগুলোতে রয়েছে উন্নত মানের স্কুল, যেখানে ইংরেজিতে পাঠদান করা হয়। এখানে আর্থিক সংগতিসম্পন্ন পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে। এদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকেরা দক্ষ এবং পরিশ্রমী, শিক্ষার্থীরাও মানসম্পন্ন। তবে এ ধরনের মডেলের অনুকরণে শহরতলি ও মফস্সলে গড়ে উঠেছে কিছু ‘কিন্ডার গার্ডেন’, যেখানে ইংরেজিতে পাঠদান করা হলেও যোগ্য শিক্ষক, এমনকি যথাযথ শ্রেণিকক্ষ পর্যন্ত নেই। ফলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়ারা—বাংলা বা ইংরেজি মাধ্যমে—কোনো পাঠদানেই উপকৃত হচ্ছে না।
অন্য একটি ধারায় রয়েছে মূলত আরবি ভাষার পুস্তকনির্ভর মাদ্রাসা। তৎকালীন ভারতবর্ষে কলকাতা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছিল মুসলমান সম্প্রদায়কে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য। পাশাপাশি এসব মাদ্রাসায় ইংরেজরা সে সময় ফারসি ভাষায় প্রচলিত ভারতীয় আইন-কানুন ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা নিত। ফলে তৎকালীন মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা, ভবন, পাঠক্রম, উপকরণ—সবই ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনেক মাদ্রাসাই যে ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। বর্তমানে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর মধ্যেও নানা ধারার শিক্ষাদানের পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষণার মাদ্রাসাগুলোতে ভবন ইত্যাদির সুবিধা থাকলেও শিক্ষক ও শিক্ষাদানের অবস্থা অনেক সময় সরকারি স্কুলগুলোর মতোই। বেসরকারি মাদ্রাসাগুলোর আর্থিক ভিত্তি অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে সেখানকার পাঠক্রম ও পাঠদান এবং পাঠাতিরেক শিক্ষা বাইরের মানুষের কাছে অস্পষ্ট। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাদ্রাসাগুলোয় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষকের অভাব ও অনীহা।
২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার ফলে আমাদের ওপর আরও একটি নতুন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে বাংলাদেশের আদিবাসীদের মাতৃভাষার স্বীকৃতিদান এবং সম্ভবমতো সেসব ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের চিত্র আরও নাজুক। গত শতকের ষাটের দশকে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের যে উৎসাহ, উদ্যোগ ও প্রয়োগ দেখা গিয়েছিল, গত চার দশকে তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রধানত বাংলা ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তকের অভাবের কথা সামনে এনে তাঁরা মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের থেকে সরে গেছেন। অথচ চীন, জাপান বা কোরিয়া মাতৃভাষাতেই উচ্চতর বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদি পড়াচ্ছে। আমাদের অতীতেও এ ধরনের উদাহরণ বিরল নয়। উচ্চতর শিক্ষায় হালনাগাদ জ্ঞানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য প্রয়োজন বিশ্বের অন্য কোনো প্রধান ভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক আত্মস্থ করা এবং তা মাতৃভাষায় সুচারুরূপে উপস্থাপন করা। এর জন্য অপরিহার্য মাতৃভাষা বাংলা ভাষার ওপর দখল, ইংরেজি বা অন্য কোনো বিদেশি ভাষাদক্ষতার সঙ্গে রপ্ত করা এবং সঙ্গে নিষ্ঠা ও পরিশ্রম। তাহলেই বাংলা ভাষায় উচ্চতর পাঠ্যপুস্তক রচনা সম্ভব।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা আমাদের মানসিকতা। ১৯৬০-৭০-এর দশকে আমাদের সমাজ বাংলা ভাষার প্রচলনে যে দৃঢ়তা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছিল, তার মধ্যে বর্তমানে ভাটার টান স্পষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে যে প্রদর্শনী হয়েছিল, তাতে বাংলা বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের নামফলক বাংলা ভাষায় লেখা হয়নি, এমন শুনেছি। দৈনন্দিন জীবনে অথবা ছোটখাটো পত্রবিনিময়ে দুজন বাঙালি অন্য ভাষা ব্যবহার করছে, এমন হীনম্মন্য আচরণের উদাহরণ সুখকর নয়। সেনানিবাসগুলোয় অথবা পুলিশ লাইনে যদি সব চিহ্ন ও নির্দেশ বাংলায় লেখা যায়, গাড়ির নম্বর যদি বাংলায় লেখা যায়, তাহলে অন্যত্র এর ব্যবহার অসম্ভব হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলা ভাষা সব বিবেচনাতেই বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ ভাষা এবং উচ্চতর বিজ্ঞানচর্চা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই বাংলা ভাষায় করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে উত্তাল ছাত্র–জনতা, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবস থ আম দ র র জন য হয় ছ ল ক জ বন কর ছ ল ধরন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় আটকে যায় সব সংস্কার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একধরনের ঐকমত্যও আছে। কিন্তু শেষমেশ কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেশে নীতিপ্রণেতা, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে একধরনের দূরত্ব আছে। এমনকি বিদ্যায়তনের মানুষের কথা রাজনীতিবিদেরা মেনে নিলেও কিছু হয় না। তাতে শেষমেশ দেখা যায়, আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় গিয়ে সব সংস্কার আটকে যায়।
অর্থনীবিদ সেলিম জাহানের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বই দুটির মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ এবং মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ: কনটেমপোরারি ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস’।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। আর বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন প্রমুখ।
রেহমান সোবহান বলেন,‘ দেশের সমস্যা কী এবং তার সমাধনই-ই বা কী, তা নিয়ে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু শেষমেশ কোনোটি হয় না।’ কেন বারবার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, এখন তার ভেতরের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
পৃথিবীর অনেক দেশে সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে এবং তারপর তারা অনেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেলিম জাহান বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রওনক জাহান আহ্বান জানান, তিনি যেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লেখেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আবার কার্যকর করা যায়, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার আহ্বান জানান।
সংস্কার প্রসঙ্গে সব সরকারই বিশেষজ্ঞদের কথা অগ্রাহ্য করেছে বলে অভিযোগ করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে রেহমান সোবহান যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা সমস্যার সমাধান করা। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়কার দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার ব্যক্তি। কিন্তু সেই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সম্ভবত পড়েও দেখেননি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান চলমান সংস্কারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কারের চাপ দেওয়ার জন্য সমাজে নানা রকম গোষ্ঠী আছে, বিষয়টি সে রকম নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া সমাজে আরও কেউ সংস্কার চায়, তেমনটা মনে হচ্ছে না।
সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য দরকার, তা না হলে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু কাজ সেই সরকার করেছিল; কিন্তু শেষমেশ তার কিছুই টেকেনি।
বই দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেলিম জাহান বলেন, এগুলো গবেষণাধর্মী বই নয়। একদম সাধারণ মানুষ যেন পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল বুঝতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এই বই দুটি লেখা।
আলোচনায় প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বাংলোদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি সাংবাদিকদের পড়া উচিত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে কী ফারাক, তা বোঝার জন্য এই বই পড়া জরুরি।