ফুল হাতে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে আসছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবার কণ্ঠে কালজয়ী গান—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। এরপর জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ করে শহীদবেদিতে ফুল দেন তাঁরা। তিন বছর পর আবারও একুশের প্রথম প্রহরে চিরচেনা এই রূপ ফিরে এসেছে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

এর আগে সবশেষ এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালে। ওই বছরের ডিসেম্বরে আধুনিকায়নের জন্য বিদ্যমান শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। নগরের কে সি দে সড়কের মুসলিম হল, গণগ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) ও শহীদ মিনার নিয়ে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স চালু না হলেও এ বছর থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে শহীদ মিনার।

মায়ের সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিচ্ছে এক শিশু.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ

প্রচণ্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে যেন বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। গতকাল সোমবার এক দিনেই ১১ জেলায় বজ্রাঘাতে চার শিক্ষার্থীসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দু’জন এবং খুলনা, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চাঁদপুরে একজন করে মৃত্যুর খবর 
পাওয়া গেছে।

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে বজ্রাঘাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী ও দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন– ফাহাদ হোসেন (১৩), মোহাম্মদ জিহাদ (১৪), নিখিল দেবনাথ (৫৫), জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) ও মীম আক্তার (১০)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিন হাওরে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মারা গেছেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৬) ও ফুলেকা বেগম (৬৫)। নেত্রকোনার দুই উপজেলায় বজ্রাঘাতে মাদ্রাসাশিক্ষক দিদারুল হক (২৫) ও শিশু আরাফাত (১০) নিহত হন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দূর্বাসা দাস (৩৫) নামের এক কৃষক। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর থেকে গরু আনার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান কলেজছাত্র রিমন আহমদ তালুকদার (২৪)। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামের এক চা শ্রমিক মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন মানিক মিয়া (৬৫) নামের এক কৃষক। চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে মারা যান বিশাখা সরকার (৩৫) নামে কিষানি। খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন যুবক আরিফুল ইসলাম। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। যশোরের শার্শায় বাড়ির আঙিনায় ধান মাড়াইকালে বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪৫) নামের এক কৃষক মারা গেছেন।
কৃষকের মৃত্যুই বেশি

দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং হতাহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের, অর্থাৎ প্রতিবছর ২৭৬ জনের বেশি। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২১ সালে– ৩৮১ জন। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কাল থেকে শুরু মে মাসজুড়ে বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস আছে।
দুর্যোগ ব‍্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডিজাস্টার ফোরামের তথ‍্য বলছে, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। দেশের হাওর, বাঁওড় ও বিলপ্রবণ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, আকাশে যখন কালো মেঘ হয়, তখনই মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। পায়ে জুতা থাকতে হবে। উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে কী করতে হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে। 
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ