অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পাস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড.

মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান বলেন, ‘‘এবারের একুশে দুঃশাসনের বোঝা নেই। এটাই নতুন একুশের তাৎপর্য। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’’

এ সময় তিনি রাজনীতিতে বিদ্বেষ ও উস্কানি পরিহার করে সহনশীলতার চর্চা করার আহ্বান জানান।

কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘২৪’র লড়াই বাকস্বাধীনতা, ঘুরে দাঁড়ানো এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অনাচার থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে।’’

এ সময় তিনি ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখার আহ্বান জানান।

এ সময় ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের পরিচালক ও ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ওমর ফারুখ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মহিব্বুল আহসান, কমিশনের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন খানসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এবং ইউজিসি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউজ স

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের ডাকে পালিত স্বাধীনতা দিবস

সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে জাতি পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তবে বারবার সেই স্বাধীকার আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে হাতছাড়া। কখনও স্বৈরাচার, কখনও ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছে জাতির ওপর। 

তবে জাতি বারবার লড়াই করেছে, যার সবশেষ উদাহরণ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। আর প্রতিটি লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে একাত্তর, আর বারবার ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ডাক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৫ তম দিবস পালনকালে আবারও সেই আকাঙ্ক্ষার কথাই উঠে এলো রাজনৈতিক, অরাজনৈতিকসহ আপামর মানুষের কণ্ঠে।

বুধবার (২৬ মার্চ) দিবসের প্রথম প্রহর সকাল ৫টা ৪৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ৬টা ৫ মিনিটে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি। 

এরপর সকাল ৬টা ৭ মিনিটের দিকে স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ৬টা ১৫ মিনিটে তিনি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পরেই স্মৃতিসৌধ এলাকা সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর ফুলের ডালা নিয়ে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।

শিশু থেকে প্রবীণ সব বয়সী মানুষের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষও। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে শহীদ বেদি।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যুদ্ধাহত অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাল-সবুজের বিজয় পতাকা।

একে একে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭১ ও ২৪ এর উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা সুষ্ঠু করা। এজন্য সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “৭১ এ দেশকে জন্ম দিয়েছে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। আমরা মনে করি, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে।”

একই ভাষ্য আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর। তিনি বলেন, “অনেকে বলেন যে একাত্তর এবং চব্বিশ কি এক? না, অবশ্যই এক না। একাত্তর ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম, আর চব্বিশ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার অর্জনকে পুনঃস্থাপন করার সংগ্রাম।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান এবং আমাদের একাত্তরের সংগ্রাম, আমাদের সাতচল্লিশের আজাদির লড়াই—এই সবকিছুর ভেতর দিয়ে আমরা যে স্বাধীন, সার্বভৌম, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিলাম, তার একটি সুযোগ ও সম্ভাবনা আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের পর তৈরি হয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়, আমরা সেই ধারাবাহিকতাতেই আছি।’’

আর বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বললেন, ‘‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্ব সংগঠিত হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্বের লড়াই চলমান।’’

দেশে বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে চলমান শঙ্কা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মন্তব্য, “এমন সময় যদি কখনও আসে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন পড়বে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যের প্রয়োজন পড়ব/, তখন কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে যাব। এখানে কোনো ভুল নাই। এখন দলীয় আদর্শিক স্বার্থে হয়তো আলাদা কথা বলছি, হতে পারে। কিন্তু যখন প্রয়োজন হবে, তখন বাংলাদেশের জনগণ এক হয়ে যাবে।”

একই কথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই।”

এদিকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের অভিযোগ, “গত সাড়ে ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে একপেশে করা হয়েছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেইরকম একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

অন্যদিকে সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিপিবি ও গণসংহতি।

নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলছি, সংস্কারের অনেকগুলো জায়গা আছে। কিছু নির্বাচনের আগেই নির্বাহী আদেশে সংস্কার করা সম্ভব। আবার অনেকগুলো সংস্কারের প্রশ্নে যেগুলো মৌলিক কাঠামোগত, এগুলো আসলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের করতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করা আসলে কঠিন।’’

আর দ্রুত নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, “ভালো সংস্কার করে নির্বাচন ডিসেম্বরে কেনো তার আগেই বাংলাদেশে সম্ভব বলে আমরা মনে করি।”

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ বড় ইসলামীক সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে দেখা যায়নি।

স্বাধীনতা দিবস পালনকালে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনারও সাক্ষী হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এদিন লাল পতাকা হাতে একদল লোক আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করেছেন। এ সময় উপস্থিত জনতা তাদের ধাওয়া দেয় এবং কয়েক জনকে মারধর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির জানান, আনুমানিক সকাল ১১টার সময় ৫/৬ জন জাতীয় স্মৃতি সৌধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। এমন অভিযোগে তাদের আশুলিয়া থানা পুলিশ আটক করে।

গতবছরের তুলনায় এবছর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজনের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত মানুষের ঢল থাকলেও পরে উপস্থিতি কমতে থাকে। বিকেল ৫টার দিকে স্মৃতিসৌধের ফটক বন্ধের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। দিনভর এ আনুষ্ঠানিকতায় নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত ছিল প্রায় ৪ হাজার পুলিশ সদস্য।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বৈষম্য দূরীকরণে আর কাউকে যেন রক্ত দিতে না হয়’
  • গণঅভ্যুত্থান বৃথা হতে দেওয়া যাবে না: গিয়াস উদ্দিন
  • ‘অভ্যুন্থানে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব’
  • চাঁদাবাজি আর বরদাশত করা হবে না: আসিফ মাহমুদ
  • শহীদ পরিবারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঈদ উপহার বিতরণ
  • বৈষম্যমুক্ত মানবিক দেশ গড়ার প্রত্যয়
  • একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের ডাকে পালিত স্বাধীনতা দিবস
  • ৭১ এর স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: আসিফ মাহমুদ
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন
  • গোপালগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১২ জনের হেলথ কার্ড প্রদান