কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস জানেন না শিক্ষার্থীরা, পড়ে আছে অবহেলা-অযত্নে
Published: 21st, February 2025 GMT
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে ময়লার স্তূপ। অপরিচ্ছন্ন শহীদ মিনারের মূল বেদি। মূল বেদির পেছনে যত্রতত্র মূত্র বিসর্জনের চিহ্ন ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের বোতল পড়ে আছে। শহীদ মিনারের পাদদেশে ধূমপান করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম শহীদ মিনারের চিত্র এটি।
শিক্ষার্থীরাও জানেন না জেলার প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস। এটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার হলেও অযত্ন, অবহেলা ও প্রচার না থাকায় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের মোল্লাপাড়ায় কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রবেশপথে এই শহীদ মিনারের অবস্থান। কলেজ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আরেকটি শহীদ মিনার রয়েছে। সেখানেই সবাই ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান। শিক্ষার্থীদের কাছে অজানা এই শহীদ মিনারের ইতিহাস।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, দুটি শহীদ মিনারই কলেজের জমিতে অবস্থিত। নতুন শহীদ মিনারেই কলেজের সব অনুষ্ঠান পালিত হয়। তবে মাতৃভাষা দিবসে জেলার প্রথম শহীদ মিনারেও ফুল দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হন। ওই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল ও মাইনর স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকজন ছাত্রনেতা শহরে মিছিল বের করেন।
মিছিলে অংশ নেওয়া একজন সামিউল হক (৮৬)। তিনি কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৭৩ সালে সেখান থেকে অবসর নেন। পরে বাংলাদেশ স্কাউটস এর নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গাজীপুর যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০০২ অবসর নেন। কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম শহীদ মিনাররের বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সামিউল হক বলেন, ‘আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী আলোচনা করে কুড়িগ্রাম শহরের ১ নম্বর স্কুলকে ভেন্যু করে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার ডাক দিই। পরে সেই মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভায় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে ওই সময় আমাদের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু আমরা ভেতরে-ভেতরে সংগঠিত হতে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কসংলগ্ন খেলার মাঠে কাদামাটি দিয়ে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। ওই বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সেই শহীদ মিনার ভেঙে দেয়। কিন্তু ছাত্ররা সেই রাতেই আবার শহীদ মিনার তৈরি করেন। পরদিন কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রথম শ্রদ্ধা জানান।’
সামিউল হক আরও বলেন, ১৯৫৬ সালে ইট-সিমেন্ট দিয়ে শহীদ মিনারটি আবারও নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর আবারও শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়, যা বর্তমানে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শহীদ মিনারটি যথাযথ সম্মান পায় না।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলেজে জেলার প্রথম শহীদ মিনার আছে অথচ আমরা কেউ তা জানি না। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষকেরাও কেউ জানাননি।’
মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজের একই ক্যাম্পাসে আরও একটি শহীদ মিনার রয়েছে। তাই পুরোনো শহীদ মিনারটি একটু উপেক্ষিত থাকে। তবে প্রতিটি দিবসে আমরা দুই শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এ বছর থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারির র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এই শহীদ মিনারের ইতিহাস জানাব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিব–তামিম: দুজনার দুটি পথ আজ একই দিকে
সাকিব আল হাসান চেয়েছিলেন, এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে বিদায় বলবেন আন্তর্জাতিক ওয়ানডেকে। হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই। তবে সে ইচ্ছাটা তিনি উহ্য রেখে দিয়েছিলেন। যা–ই হোক, সাকিবের চাওয়া পূরণ হচ্ছে না। যেমন পূরণ হয়নি তাঁর ঘরের মাঠে খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেয়েছিল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা খেলুন তামিম ইকবাল। সেটাও হচ্ছে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার আগে নির্বাচকেরা আলোচনায় বসেছিলেন তামিমের সঙ্গে। কিন্তু তামিমের ‘না’কে ‘হ্যাঁ’ করাতে পারেননি। এরপর তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দেন তামিম।
আরও পড়ুনকোন দলের কেমন সম্ভাবনা, আগেই বা কী করেছে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সাকিব–তামিম দুজনের কাছে তাই দুই রকমভাবে ধরা দিচ্ছে। সাকিবের জন্য এটা হতে পারে অতৃপ্তির অন্য নাম। যে রকম বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার তাঁর, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মুখ হয়ে ওঠা সাকিব প্রশ্নাতীতভাবেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। বড় কোনো আসর থেকে, অন্তত মাঠ থেকে ক্যারিয়ার শেষের ঘোষণা দেওয়াটা তাঁর প্রাপ্য। অথচ এমন একজনের শেষটাই হলো কিনা অপূর্ণতা দিয়ে!
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব–তামিম একসময় বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও ক্যারিয়ারের শেষলগ্নে তাঁরা হয়ে উঠলেন বৈরিতার প্রতীক।অবশ্য শেষই–বা বলা কীভাবে? আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিদায়’ বলার সুযোগই তো পাননি সাকিব। সাত মাসের রাজনৈতিক পরিচয় বাংলাদেশের ক্রিকেটেই এখন ব্রাত্য করে দিয়েছে একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। সব মিলিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা সাকিবের জন্য হয়ে থাকবে না ছুঁতে পারা এক মাইলফলক।
তামিম বিদায় বললেও বাংলাদেশের জার্সিকে সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানোর সুযোগ পাননি