সরকারি দপ্তরে নথিপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বেড়েছে। অধিকাংশ আইন বাংলায় করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও দেওয়া হয়। তবে সেই তুলনায় আদালতে বিশেষ করে উচ্চ আদালতের বেশির ভাগ রায় ও আদেশ এখনো ইংরেজিতে লেখা হয়। বাংলা ভাষার ব্যবহারে পিছিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও। সাইন বোর্ডে এখনো ইংরেজির ব্যবহার দেখা যায়।

দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষা চালুর লক্ষ্যে প্রায় ৩৮ বছর আগে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ প্রণয়ন করা হয় ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’। এতে বলা হয়, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সরকারি নথিপত্র, চিঠি, প্রজ্ঞাপন ও অন্যান্য নথি বাংলায় লেখা হচ্ছে। পুরোনো অনেক আইন ইংরেজিতে থাকলেও নতুন আইনকানুন সব বাংলায় লেখা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব আইন ইংরেজিতে ছিল, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে বাংলায় করা হচ্ছে।

এই আইনে আরও বলা হয়, কোনো কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন, তাহলে সেটি বেআইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে। শুধু তা–ই নয়, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি এই আইন অমান্য করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সরকারি নথিপত্র, চিঠি, প্রজ্ঞাপন ও অন্যান্য নথি বাংলায় লেখা হচ্ছে। পুরোনো অনেক আইন ইংরেজিতে থাকলেও নতুন আইনকানুন সব বাংলায় লেখা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব আইন ইংরেজিতে ছিল, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে বাংলায় করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের অধীনে বাংলা ভাষা বাস্তবায়নসংক্রান্ত একটি অধিশাখা আছে। এই শাখার কর্মকর্তারা জানান, অধিকাংশ আইন বাংলায় করা হয়েছে। তাঁরা মূলত আইনের প্রমিতকরণের কাজটি করে দেন। এ ছাড়া সরকারি কাজে বাংলা ভাষা সহজ করে ব্যবহারের জন্য এই দপ্তর থেকে কয়েকটি পুস্তিকা বের করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এই বিভাগ থেকে আইনকানুনগুলো প্রমিতকরণের কাজটি করা হয়। ইতিমধ্যে অধিকাংশ আইন বাংলায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিজেদের মাতৃভাষায় তথ্য পাওয়া জনগণের অধিকার। তাই এটি সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা যায়, সেই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চাকরিজীবীদের বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও যাতে দক্ষতা গড়ে ওঠে, সে বিষয়ে ভাষানীতি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন ই র জ ত র ব যবহ র ল য় কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে তদন্ত কমিশন

ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।

তদন্তের ক্ষেত্রে বেঁচে ফিরে আসা ব্যক্তি; সামরিক বাহিনী; র‍্যাব ও পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তি; ডিজিএফআই; এনএসআই; হুকুমদাতা; সামরিক অপারেশনে বাধাদানকারী; সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়; রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা; বিদেশি সংশ্লিষ্টতা এবং একই সঙ্গে সেনা আইন ভঙ্গের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছে কমিশন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনের সপ্তম তলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।

স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমান জানান, কমিশন পাঁচটি কর্মপরিধি ঠিক করেছে। এর মধ্যে আছে পিলখানায় সংঘটিত ঘটনার স্বরূপ উদ্‌ঘাটন। ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি ও বিদেশি–সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন ইত্যাদি চিহ্নিতকরণ। হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তগণের দায়/অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমন প্রকৃত অপরাধীদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ।

কমিশন জানায়, এখন পর্যন্ত যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন লে. জেনারেল তিনজন, মেজর জেনারেল দুজন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পাঁচজন, কর্নেল চারজন, লে. কর্নেল চারজন, মেজর সাতজন, ক্যাপ্টেন দুজন, বিডিআর সদস্য সাতজন ও শহীদ পরিবারের সদস্য তিনজন।

বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আ ল ম ফজলুর রহমান জানান, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিশন গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তিকে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজনে আমন্ত্রণ জানাবে। এই বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণের জন্য তিনি অনুরোধ জানান। যে কেউ ওয়েবসাইটের (bdr-commission.org) মাধ্যমে তথ্য নিতে পারবেন বলেও জানান।

তদন্তের চ‍্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ফজলুর রহমান আরও বলেন, ইতিমধ্যে অনেক সাক্ষী এবং ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন, পলাতক আছেন এবং বিদেশে পালিয়ে আছেন/বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে বা বিলম্বিত হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়বে, এমন ধারণা করা যায়। এ ছাড়া সময়ের বিবর্তনে অনেক সাক্ষীর পক্ষে সঠিক তারিখ, সময় ও ঘটনার অনেক বিষয় স্মরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কিছু বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লেখা হয়েছে বলেও জানান ফজলুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতার বিন্যাস পরিবর্তন করা না গেলে আইন পরিবর্তন করে কিছুই হবে না: অধ্যাপক মুশতাক হুসাইন খান
  • পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে তদন্ত কমিশন