মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখুন
Published: 21st, February 2025 GMT
এ দেশের তরুণেরা বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে জীবন দিয়ে মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দিয়ে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন, সেটা কতটা পূরণ হয়েছে? এখনো আমরা সর্বস্তরে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল না; ছিল একটি জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার মহৎ সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এ দেশের মানুষ স্বাধিকার আন্দোলন রচনা করে এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
স্বাধীনতার পর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এখন বিশ্বের সব দেশে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। এই স্বীকৃতি যেমন বাংলাদেশের জন্য গৌরবের, তেমনি বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, অতীতে মাতৃভাষা নিয়ে বাঙালির মধ্যে যতটা আবেগ ও উদ্দীপনা ছিল, এখন তা অনেকটা অবসিত। পাকিস্তান আমলে যে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হতো প্রতিবাদী চেতনায়, এখন তা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। মনীষীরা মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাতৃভাষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন।’ অথচ মাতৃভাষাকে এখনো আমরা সর্বস্তরে শিক্ষার বাহন করতে পারিনি। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যাসহ উচ্চশিক্ষার অনেক বিষয়ে বাংলায় পড়ানো হয় না। অজুহাত দেখানো হয়—বাংলা ভাষায় প্রয়োজনীয় বই নেই। এর অর্থ নিজ নিজ ক্ষেত্রে পণ্ডিত ব্যক্তিরা বাংলা ভাষার চর্চা ও অনুবাদে মনোযোগ দেননি, রাষ্ট্রও এগিয়ে আসেনি।
স্বাধীনতার পর ড.
একুশে ফেব্রুয়ারি এলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর পক্ষে জোরালো বক্তৃতা-বিবৃতি দেন। কিন্তু ভাষার উন্নয়নে এখন পর্যন্ত টেকসই পরিকল্পনার কথা জানা যায় না। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের স্বপ্নের বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু মাতৃভাষার উন্নয়ন ছাড়া সেটি সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য ভাষার মানুষ আছে, আমরা যদি আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চাই; তাহলে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ভাষার অধিকারকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সেসব ভাষা নিয়ে গবেষণা ও চর্চার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত না রেখে বিভিন্ন ভাষার চর্চা ও গবেষণায় অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা যদি ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, তাহলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত না রেখে এর মর্ম উপলব্ধি করতে
হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ভাষার উন্নয়নেও কাজ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে আমরা যেকোনো ভাষা শিখব, কিন্তু মাতৃভাষাকে অগ্রাহ্য করে নয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বালু লুট ও সালিশের নামে অন্যায় করতে দেওয়া হবে না: বাবুল
ফরিদপুরের সদরপুরবাসীদের উদ্দেশে কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেছেন, আমি আপনাদের সঙ্গে কমিটমেন্ট করলাম, আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি আপনাদের পাশে থাকব। বালু লুট, সালিশের নামে টাকা হরিলুট, অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম করতে দেওয়া হবে না। আমি এখানে জোর করে আসি নাই, দলের সিদ্ধান্তে এসেছি।
শনিবার বিকেলে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চর বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জয়বাংলা মাঠে কৃষক দলের আয়োজিত ‘কৃষক সমাবেশে’ এসব কথা বলেন তিনি।
বাবুল বলেন, সদরপুরের সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক। সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পাশেই আমার বাড়ি। আমি রাজনীতি করি আটত্রিশ বছর ধরে। অনেক চড়াই উতরাই করে একটা গেরস্ত মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে ছাত্রদল করে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি।
তিনি বলেন, ১৩৮টি মামলা, রক্ত ঝরাইছি বার বার, কারাগারে গেছি বহুবার। আমি এইখানে বানরের নাচ খেলাইতে আসি নাই।
সদরপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. ফজলুর রহমান বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন।
তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তে আমি (ফরিদপুর-৪)আপনাদের হাতে শহিদুল ইসলাম বাবুলকে তুলে দিলাম। তিনি আপনার এলাকায় কাজ করবেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিশেষ অতিথি মহিলা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সেলিম, সদরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী বদরুজ্জামান বদু, সদরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (কমিটি স্থগিত) তরিকুল ইসলাম কবির মোল্যা, সদরপুর উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ মৃধা, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।