শিক্ষার প্রসারে অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত
Published: 21st, February 2025 GMT
শিক্ষার উন্নয়নে বেসরকারি অনেক কার্যক্রম বা উদ্যোগের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পর থেকে বেসরকারি অনেক উন্নয়ন সংস্থা শিক্ষা খাতে বিশেষ নজর দিয়েছে, এখনো তাদের অনেকের কর্মসূচি চলমান। বড় বড় সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশনের ছোট ছোট কিছু কার্যক্রম এতটাই প্রভাব বিস্তারকারী যে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এমনটিই দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি স্কুলের ক্ষেত্রে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নের বারোমাসিয়া গ্রামে অবস্থিত তৌহিদুল আনোয়ার হাইস্কুল। আহমেদ শামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষ ২০২০ সালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ে বারোমাসিয়া গ্রামসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামের দৃশ্যপট বদলে গেছে।
কারণ, প্রত্যন্ত এ জনপদে এবং এর আশপাশে কোনো উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার পরই সেখানকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন থমকে যেত। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই সংকট কেটে গেছে এখন। পড়তে কোনো টাকা লাগে না এখানে, বই-খাতা, জুতা ও পোশাকের পাশাপাশি দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে বাইসাইকেলের। এর ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীসংখ্যা বিপুল এবং পাসের হারও শতভাগ।
জনপদটি দারিদ্র্যপীড়িত এবং সেখানকার চা–বাগানের শ্রমিকদের সন্তানেরা শিক্ষাদীক্ষায় বেশি দূর যেতেও পারে না। তাদের জন্য সত্যিকার অর্থে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছে বিদ্যালয়টি। এখানকার পাঠদানব্যবস্থা আধুনিক ও ভিন্ন ধরনের। খেলাধুলা, সাহিত্য–সংস্কৃতিচর্চা, শারীরিক শিক্ষা ও কারাতে প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শিতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেড় হাজার একরের বেশি জায়গায় সবুজ, নিরিবিলি ও বিশাল বিদ্যালয়টিতে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে কম্পিউটার, সংগীত, সাহিত্য, ক্রীড়াসহ বিষয়ভিত্তিক ২২ জন শিক্ষক।
৩০টি কম্পিউটার-সংবলিত সুবিশাল ল্যাব, সাড়ে ৩ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, সততা স্টোর, মুক্তিযুদ্ধ কর্নারসহ নানা ব্যতিক্রমী আয়োজন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশ এগিয়ে রেখেছে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় জাতীয় পরিসরেও সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টির ইতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে জনপদজুড়ে। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় আছে মাদক, মুঠোফোনে আসক্তি ও বাল্যবিবাহবিরোধী কার্যক্রম। এসব বিষয়ে নিয়মিত সভাও হয় সেখানে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আহমেদ শামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশনকে অভিবাদন জানাই। সেই সঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষক–কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানাতে হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, ট্রাস্টের অধীন পরিচালিত স্কুলটি পাঠদানের অনুমতি পেলেও এখনো স্বীকৃতি পায়নি। আশা করি, সে বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, এটিই প্রত্যাশা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চবিতে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাংবাদিক হেনস্থার অভিযোগে স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ১২ শিক্ষার্থীকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখে সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ৩টায় ৫৫৯তম (এক্সট্রাঅর্ডিনারি) সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “সিন্ডিকেট সভায় বহিষ্কার আদেশ পাওয়া ১২ শিক্ষার্থীকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া এক ছাত্রীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে তার স্থায়ী বহিষ্কার আদেশ বহাল থাকবে।”
তিনি বলেন, “আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া অপরাধীদের শাস্তি বাতিলও হতে পারে, আবার বহালও থাকতে পারে। তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবে।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা হলের নামফলক ও হলের সামনে কংক্রিট নির্মিত নৌকা ভাঙতে যান। এ সময় তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ কুরবান আলীকে থাপ্পড় দেন হলটির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা এনায়েত এমি।
এ ঘটনায় আফসানা এনায়েত এমিকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তার সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং ধর্ম অবমাননার দায়ে মোট ১২ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী