দেশের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিশেষ মঞ্জুরির অনুদান দেবে সরকার। এ টাকা পেতে আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। অনুদান পেতে আবেদন শুরু আগামী ১ মার্চ থেকে। আবেদন করতে হবে অনলাইনে। হার্ডকপিতে কোনো আবেদন নেওয়া হবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা, দৈব দুর্ঘটনা ও চিকিৎসার খরচের জন্য বিশেষ মঞ্জুরির অনুদান দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী, অসহায়, অস্বচ্ছল ও মেধাবী, অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুদান পেতে অগ্রাধিকার পাবেন।

আরও পড়ুনরোমানিয়ায় বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা, সুযোগ-সুবিধা ও আবেদনের পদ্ধতি জেনে নিন১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫শর্তাবলিগুলো হলো

দেশের সরকারি/বেসরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সংযুক্ত/স্বতন্ত্র (অনুদানপ্রাপ্ত/অনুদানবিহীন) ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত/এমপিওভুক্ত সরকারি/বেসরকারি কারিগরি/মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত ও সংস্কার, আসবাব তৈরি, খেলাধুলার সরঞ্জাম ক্রয়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং পাঠাগারের উন্নয়নকাজের জন্য মঞ্জুরির আবেদন করতে পারবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনগ্রসর এলাকার অস্বচ্ছল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অথচ প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান ভালো—এ রূপ প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

দেশের সব সরকারি/বেসরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সংযুক্ত/স্বতন্ত্র (অনুদানপ্রাপ্ত/অনুদানবিহীন) ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত/এমপিওভুক্ত সরকারি/বেসরকারি কারিগরি/মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের জটিল ও ব্যয়বহুল রোগ এবং দুর্ঘটনার জন্য মঞ্জুরির আবেদন করতে পারবেন।

সরকারি/বেসরকারি কারিগরি/মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণ জটিল ও ব্যয়বহুল রোগ, দুর্ঘটনা এবং শিক্ষার ব্যয় নির্বাহের জন্য মঞ্জুরির আবেদন করতে পারবেন। তবে এ বিশেষ মঞ্জুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, দরিদ্র মেধাবী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

মঞ্জুরি করা অনুদান প্রাপ্তির লক্ষ্যে আগ্রহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ১ মার্চ থেকে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও শিক্ষক-কর্মচারী অনুদানের আবেদন ফরম বাটনে ক্লিক করে থেকে অনলাইনে আবেদন দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের পর আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপে আবেদন শুরু, আইএলটিএসে ৬.

৫ অথবা টোয়েফলে ৮৪ হলে আবেদন ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সরকারি-বেসরকারি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী/শিক্ষার্থীদের অনুদানের আবেদনের ক্ষেত্রে নীতিমালায় (নীতিমালাটি ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে) উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট কারণসহ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষক-কর্মচারী/শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক প্রত্যায়িত প্রমাণপত্র অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে (প্রত্যয়নের নমুনা অনলাইনে দেওয়া থাকবে)।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে প্রদান করা হবে এবং শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীকে নিজ নিজ মুঠোফোন নম্বর এবং শিক্ষার্থীকে পিতামাতা/অভিভাবকের মুঠোফোন নম্বর (আবেদনের আগেই মুঠোফোন নম্বরটি নগদ সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে) দিতে হবে; আবেদনকারী শিক্ষক-কর্মচারীকে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষার্থীদের তাঁদের অনলাইন জন্মসনদ এবং পিতামাতা/অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অনুদান পেয়েছেন, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এ বছর (চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে) আর্থিক অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদানের আবেদন ফরম’ বাটনে ক্লিক করে অনলাইনে অনুদান পাওয়ার আবেদন করতে হবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশিদের হার্ভার্ডে বৃত্তি নিয়ে এমবিএ করার সুযোগ২৮ মার্চ ২০২১আরও পড়ুনমাধ্যমিকের সংশোধিত ছুটির তালিকা, এসএসসির প্রাক-নির্বাচনি ও নির্বাচনি পরীক্ষার নতুন তারিখ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন দ ন র অন দ ন প ব সরক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো   

লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন  ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়। 

এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি। 

মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত  আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’ 

সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।   

শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। 
 
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা  প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।  

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ