যে কারণে আমেরিকানরা গণতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করলেন
Published: 21st, February 2025 GMT
কয়েক দিন আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে একটি রহস্যময় বার্তা পোস্ট করেছেন। বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি নিজের দেশকে রক্ষা করে, সে কোনো আইন লঙ্ঘন করে না। ‘এটি অনেকটা ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের একটি বিখ্যাত উক্তির মতো শোনায়। তবে জনশ্রুতি আছে যে ট্রাম্প বই পড়েন না, সিনেমাও দেখেন না। হয়তো তাঁর সহযোগী ইলন মাস্ক বা অন্য কেউ এই কথা জোগান দিয়েছেন।
ট্রাম্প সব সময় বিশ্বাস করেন, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে। তাঁর মনে হয়, ঈশ্বর তাঁকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছেন, তাই তিনি কোনো শাস্তি পাবেন না। তাঁর এই বিশ্বাসের সঙ্গে ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুইয়ের বিখ্যাত উক্তিটি বেশি মানানসই—‘আমিই রাষ্ট্র।’ ট্রাম্পের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
ট্রাম্প কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা করতে চাননি; বরং দেশটির দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান—কংগ্রেস ও আদালতকে তিনি অবজ্ঞা করেন। এখন তিনি প্রেসিডেন্ট নয়, একজন স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করছেন। যা খুশি তা–ই করছেন, ভয় বা পরিণতির পরোয়া না করেই।
যদি জনমত জরিপকে নির্ভরযোগ্য ধরে নেওয়া হয়, তাহলে বলা যায় যে বেশির ভাগ মার্কিন খুশিমনেই গণতন্ত্রের ক্ষয়ে যাওয়া অবশিষ্ট অংশকে ছুড়ে ফেলতে রাজি। তাঁরা মনে করেন, দাপুটে শক্তিমান নেতা ট্রাম্প তাঁদের রক্ষা করবেন। দেশের ভেতরে ও বাইরের শত্রুদের কবল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি বাঁচাবেন, সেটা বাস্তবে হোক বা কল্পনায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এত মার্কিন ট্রাম্পের মতো একজন বেপরোয়া প্রতারকের পেছনে ছুটছেন? কেন তাঁরা এমন উৎসাহ নিয়ে একজন এমন ব্যক্তিকে সমর্থন দিচ্ছেন, যিনি সমতার আদর্শকে অপ্রাসঙ্গিক ও বিরক্তিকর বলে মনে করেন। অথচ এই আদর্শ একসময় বিপ্লবের জন্ম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলেছিল।
আমার বিশ্বাস, বেশির ভাগ মার্কিন গণতন্ত্রকে পরিত্যাগ করেছেন; কারণ, গণতন্ত্রই তাঁদের পরিত্যাগ করেছে। হাওয়ায় উড়তে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, বুকে হাত রেখে নেওয়া শপথ—এগুলো পুরোনো বিশ্বাস আর ধরে রাখতে পারছে না। দেশের ক্ষমতাশালী ধনীরা সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেন—এই বিশ্বাস আজ মৃত যেন।
হতাশাজনক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এক প্রতারকের কাছে মুক্তির আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। ট্রাম্প সহজ সমাধানের আশ্বাস দেন; কিন্তু কঠিন সমস্যাগুলোর গভীরে যেতে চান না।অন্তত চারটি বড় ঘটনা একসঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভেতরের ফাঁপা বাস্তবতা প্রকাশ করে দিয়েছে। এ ঘটনাগুলো মানুষের মনে গভীর হতাশা তৈরি করেছে। এই হতাশা ট্রাম্পকে শুধু রাজনৈতিক নয়; বরং সাংস্কৃতিকভাবেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনকি বহু বুদ্ধিদীপ্ত নাগরিকও গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস হারিয়েছেন।
এই মিথ্যার ভিত্তি আসলে বহু আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও তাঁর সমর্থক হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস এবং যুদ্ধ-উন্মাদ মিডিয়া নির্লজ্জভাবে প্রচার করেছিল যে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত আছে। এই ভিত্তিহীন দাবির ওপর দাঁড়িয়ে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করল, একটি স্বাধীন দেশকে ধ্বংস করে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল। সচেতন নাগরিকেরা এই যুদ্ধের বিপক্ষে প্রতিবাদ করলেন। ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী তাঁদের অগ্রাহ্য তো করলই, সেই সঙ্গে তাঁদের বিশ্বাসঘাতক তকমা দিল।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করার ব্যবস্থা। তখন তা ব্যর্থ হলো। গণতন্ত্রের এই কাঠামো রাষ্ট্রের ভুল সিদ্ধান্ত ঠেকানোর জন্য তৈরি হয়েছিল। সেটিই কাজে লাগানো হলো যুদ্ধবিরোধীদের দমন করতে। এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক বিপর্যয়ের নেপথ্যে থাকা বুশ ও তাঁর কয়েকজন অপরাধবোধহীন সহযোগী আজও দিব্যি আরামদায়ক অবসর উপভোগ করছেন।
অন্যদিকে যেসব মার্কিন সেনা ইরাক আক্রমণ করেছিলেন, লড়াই করেছিলেন, হত্যা করেছিলেন এবং নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁরা আজ বিস্মৃতপ্রায়। সাধারণ মানুষকে বলি দেওয়া হলো কয়েকজন ক্ষমতাশালীর সাম্রাজ্যবাদী স্বপ্ন পূরণের জন্য।
সরকার ও জনগণের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল, সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ল ২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে। বন্যায় হাজার হাজার বাড়ি ডুবে গেল। প্রাণ হারালেন ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ। যাঁরা বেঁচে রইলেন, তাঁরা নিজেরাই আশ্রয়, খাবার ও পানির সন্ধানে দিশাহারা হয়ে গেলেন।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রেসিডেন্ট বুশ নিজের ব্যর্থ প্রশাসনের প্রশংসা করলেন। তিনি তখন হেলিকপ্টারে করে ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলেন। সেই মুহূর্তের ছবি যুক্তরাষ্ট্রের মনে গেঁথে গেল—একজন গর্বিত, বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি অসহায় নাগরিকদের কষ্ট বোঝার প্রয়োজনও বোধ করলেন না।
কিন্তু ২০০৮ সালে যখন ওয়াল স্ট্রিটের ধনী ব্যাংকাররা নিজেদের লোভের কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করলেন, তখন বুশ তড়িঘড়ি করে তাঁদের রক্ষায় এগিয়ে এলেন। এই সংকটের কারণ ছিল সাবপ্রাইম মর্টগেজ প্রতারণা—একধরনের জালিয়াতি। যখন সেই প্রতারণার ফল ভোগ করার সময় এলো, তখন সাধারণ মার্কিনদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে সেটি পুষিয়ে দিতে হলো। দেশের ভঙ্গুর আর্থিক ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে গেল।
করদাতাদের মোট ৭ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার দিয়ে জরুরি ঋণ দেওয়া হলো, যাতে বড় ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে না যায়। অথচ সাধারণ মানুষ তখন ঋণের দুশ্চিন্তায় দৈনন্দিন খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। এই সংকটকে বলা হয় ‘গ্রেট রিসেশন’। দুই বছর ধরে মার্কিনরা ভয়ানক অর্থনৈতিক দুর্দশায় কাটিয়েছিলেন।
সমাজের শীর্ষ ধনী শ্রেণির বুশ আবারও প্রমাণ করলেন যে তাঁর দায়িত্ব আসলে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা নয়; বরং তাঁর প্রধান লক্ষ্য বিত্তবান বন্ধুদের ও ক্ষমতাবান ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেওয়া। এর জন্য যত কষ্ট, তা সাধারণ মানুষই সহ্য করুক।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আশায় বুক বাঁধল বারাক ওবামাকে নিয়ে। তিনি বললেন, তিনি সাধারণ ঘরের ছেলে। তাঁর শিকড় শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বুঝতে পারেন সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট। এসব কথা তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলল। তিনি হয়ে উঠলেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন গণতন্ত্রের প্রতীক; কিন্তু ওবামাও বুঝতে পেরেছিলেন যে বুশের মতোই তাঁর আসল দায়িত্ব হলো ক্ষমতাবান ও ধনিকশ্রেণিকে খুশি রাখা। তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ‘হ্যাঁ, আমরা পারি’ আসলে ছিল একধরনের ধোঁকা। তিনি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি তাঁদের পাশে আছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন সেই ধনী অভিজাতদের বন্ধু, যাঁরা তাঁকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন।
এই ভানও পুরোপুরি উন্মোচিত হলো। দেখা গেল, ওবামার প্রশাসন ব্যাংক জালিয়াতদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। লাখো শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত মার্কিনদের সর্বনাশ করেছিল যে ব্যাংক জালিয়াতেরা, তাঁরা কেউ বিচারের মুখোমুখি হননি।
ওবামার এই ব্যর্থতা প্রমাণ করল যে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা আসলে দ্বিস্তরবিশিষ্ট। এখানে গরিবদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। অপর দিকে সুরক্ষিত রাখা হয় ধনীদের।
এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এক প্রতারকের কাছে মুক্তির আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। ট্রাম্প সহজ সমাধানের আশ্বাস দেন; কিন্তু কঠিন সমস্যাগুলোর গভীরে যেতে চান না।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের আবার আশাহত হওয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
এন্ড্রু মিত্রভিকা আল–জাজিরার কলাম লেখক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির বাংলা অনুবাদ জাভেদ হুসেন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র র ব যবস থ কর ছ ল করল ন ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে গুণগত মানের প্রতিষ্ঠান জরুরি, যেটির দুর্বলতা এখন বেশ প্রকট। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সংস্কার দরকার। বাণিজ্য-সম্পর্কিত সংস্কার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ-সম্পর্কিত দুর্বলতায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া।
গতকাল শুক্রবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সানেম অ্যানুয়াল ইকোনমিস্ট কনফারেন্স-২০২৫’ নামের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচনা হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। আজ শনিবার থেকে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এ সম্মেলনের বাকি অধিবেশনগুলো হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার: ভঙ্গুরতা থেকে স্থায়িত্বের দিকে অগ্রসর হওয়া’।
প্রথম দিনের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে। আলোচক হিসেবে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শান্তায়ানান দেবরাজন এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন্স (আইসিআরআইইআর) পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. দীপক মিশ্র।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত হওয়া ছাড়া যে প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারে না, সেটি আমরা অতীতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুণগত মান ভালো থাকা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সংস্কার করে কেবল সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে চাপ এলে। উদাহরণ হিসেবে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ক্রেতাদের চাপে দেশের পোশাক কারখানার উন্নতির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এখন অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্থের মতো হয়ে গেছে। তার পরও কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর চীন ডব্লিউটিওতেই গেছে। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য নিয়ে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি থাকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি।
‘দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজনের প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে বলেন, ভূরাজনৈতিক বিভাজন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমায়। তবে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অনেক দেশ তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ নানা ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে এ-সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উৎসগুলো ভূরাজনৈতিকভাবে বৈচিত্র্যময়। তবে দেশগুলোর মোট বাণিজ্য ও এফডিআই প্রবাহ খুবই কম। যেটি এ-সম্পর্কিত বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে বা এর পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
ড. শান্তায়ানান দেবরাজন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। এ জন্য প্রয়োজন বাণিজ্য উদারীকরণের। তাঁর মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়, তার ১০ গুণ হওয়া উচিত। বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যখন বেশি শুল্ক আরোপ শুরু করে, তখন ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর সর্বোত্তম কৌশল হওয়া উচিত বাণিজ্য উন্মুক্ত করা। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের সুবিধা তারা কীভবে নিতে পারে, সেটিও ভাবা উচিত।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংস্কার কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মূল কারণ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বাণিজ্য উদারীকরণ না করার বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া এখন পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণে পরিণত হয়েছে।
ড. দীপক মিশ্র বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্কের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এটা খুব বেশি। অথচ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এমনটি দেখা যায় না। ফলে ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়া হবে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল।