‘ছেলেরা না দেখলেও আল্লাহ-রসুলের দয়ায় আমগরে ঠেহা পড়ে না’
Published: 21st, February 2025 GMT
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে আনোয়ার হোসেনের শরীর। মাথার সাদা চুল মাঙ্কি টুপিতে ঢাকা। আর গায়ে জড়ানো লম্বা পাঞ্জাবি। কাঁধে বইছেন ফাঁকা একটি ঝুড়ি। সেটি ধরে রেখে জানালেন, স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি শেষে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। এটিই তাঁর আয়ের একমাত্র মাধ্যম। এ আয়ে স্ত্রী সখিনা বেগম (৭০) ও তাঁর সংসার চলছে। তাঁরা জানান, চার সন্তান থাকলেও কেউ খোঁজখবর রাখেন না।
নিজেকে ১০০ বছর বয়সী বলে দাবি করেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষা শেরপুরের মুন্সিরচর এলাকায়। প্রতিদিন ঝুড়ি কাঁধে নিয়ে হেঁটে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে জামালপুর শহরের ফৌজদারি বাজারে সবজি বিক্রি করেন।
গত বুধবার সকাল আটটার দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ বয়সেও কাজ করতে হচ্ছে জানিয়ে বেশ আক্ষেপ করছিলেন তিনি। জানান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের আলাদা সংসার। নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত তাঁরা। কেউ তেমন খোঁজখবর নেন না। তাই বাধ্য হয়ে এই বয়সেও নিজের জমিতে সবজি চাষ করেন। নিয়মিত এসব সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রিও করেন। এই আয়েই চলছেন এই দম্পতি।
আনোয়ারের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, বৃদ্ধ বয়সে এই দম্পতির কষ্টে দিন কাটছে। দুই ছেলে ছয় মাসেও একবার জিজ্ঞেস করেন না, তাঁরা কেমন আছেন। সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার প্রথমে কয়েক মিনিট চুপ থাকলেন। অজানা বিষাদের স্পষ্ট ছায়া দেখা গেল তাঁর মুখজুড়ে। সন্তানদের প্রতি তাঁর যেন শুধুই আক্ষেপ, কোনো অভিযোগ নেই। তিনি মনে করেন, ছেলেদের স্ত্রীদের কারণে হয়তো সন্তানেরা মা–বাবার সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করেন না। সন্তানদের সুখের জন্য তিনি কিছুই বলেন না। নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের জীবনযুদ্ধ।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বুঝেন না, বউ-ঝিয়েরা (পুত্রবধূ) অত কিছু করে না। নিজেই খাইটে খাই। কত কষ্ট করে পুলাপান মানুষ করছি। অহন বউ ছাড়া এডা (একটা) আও (কথা) করবার পাই না তাঁরা (সন্তান)। দেহুন বয়স ১০০ বছরে গেছি। বুড়া-বুড়ির চারডে খাউনের জন্য এত কষ্ট করি। পুলাপানরা কিছুই করে না আংগরে লাইগা। আল্লাহে যা দেয়, তাই খাই। এল্লা (অল্প) তইতরকারি (সবজি) করি, বাজারে বেচি—তাই খাই। এডা গরুবাছুর পালি। ওরা না দেখলেও আল্লাহ-রসুলের দয়ায় আমগরে ঠেহা পড়ে না। পুলাপানেরডা আমরা খাইও না। কোনো দিনও কই না, দিবি না কেন? তগেরডা তোরা কইরে খা গা। আমগরেডা আমরা কইরে খাই। পুলাপান যেহেতু, ওগরে জমিজমা দিয়ে দিছি।’
আনোয়ারের নিজের বলতে দেড় বিঘা ফসলি জমি আছে। ওই জমিতে সবজি চাষাবাদ করেন। তাঁর এক ছেলে রাজধানী ঢাকায় বাসচালকের কাজ করেন। আরেকজন শেরপুর শহরে বসবাস করেন। তাঁরা বিয়ের পর নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
খোঁজখবর রাখার সময়ই হয়তো পায় না। তবে বছরে দু-একবার তাঁরা (সন্তান) বাড়িতে আসে। সারাটা জীবন চাষাবাদ করে সংসার চালিয়েছেন। চারজন সন্তান বড় করেছেন। এই বয়সেও বেঁচে থাকতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবু জীবনের কাছে হার মানতে নারাজ এই বৃদ্ধ।
আনোয়ার জানান, সারা দিন খেতে বিভিন্ন শাকসবজির যত্ন নিয়েই তাঁর সময় কেটে যায়। দিনের শুরুতে ভোরবেলায় এসব সবজি ভাঁড়ে করে বাজারে নিয়ে যান। এ থেকে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। তাই দিয়ে কোনো রকমে দুজনের সংসার চলে। আলাপের এ পর্যায়ে আক্ষেপ করে আনোয়ার জানান, একসময় সুখের সংসার ছিল। আশায় ছিলেন, সন্তানেরা বৃদ্ধ বয়সে কাজ করতে দেবে না। বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো শরীর চলে না। তবুও বেঁচে থাকতে হবে। তাই সারা দিন মাঠে সবজি চাষে সময় দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের দিনে নারায়ণগঞ্জে শহীদ সুমাইয়ার বাড়িতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ সুমাইয়া আক্তারের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আজ সোমবার ঈদের দিন সকাল ১০টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার বাড়িতে গিয়ে সুমাইয়ার মা আসমা বেগমের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন উপদেষ্টা।
এ সময় উপদেষ্টা সুমাইয়ার ১০ মাস বয়সী শিশুকন্যা সুয়াইবাসহ পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, তামিম আহমেদ, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, এনসিপি নারায়ণগঞ্জ সংগঠক জোবায়ের হোসেন, ফয়সাল আহমেদ, ফজলে রাব্বি, সোহেল খান সিদ্দিক, রাইসুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
আরও পড়ুনসুমাইয়াকে ছাড়া সোয়াইবার ঈদ৩০ মার্চ ২০২৫নানি আসমা বেগমের কোলে শিশু সোয়াইবা। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে