কাজ শিখতে বাংলাদেশে এসেছেন এক জার্মান তরুণ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানুষের চমৎকার ব্যবহার ও বাংলা ভাষায় মুগ্ধ তিনি। তবে বাংলা ভাষা বেশি ভালো লেগেছে তাঁর। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে এই ভাষা শিখছেন এই তরুণ। তিনি কাজ করছেন বাগেরহাটের কাঠের ঘর তৈরির একটি কারখানায়।

জার্মান এই তরুণের নাম দিমিত্রি আক্রিটিডি। প্রথমে তিনি বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মীর কাজ শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও করছেন দিমিত্রি। বর্তমানে তিনি বেলজিয়ামের ‘নোই বিল্ডার্স’ নামের একটি কাঠের তৈরি বাড়ি ও আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। ওই প্রতিষ্ঠান তাঁকে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম কররীর ‘ন্যাচারাল ফাইবার’ কারখানায় ইন্টার্নশিপ করার জন্য পাঠিয়েছে।

গত সোমবার ওই কারখানায় গিয়ে কথা হয় দিমিত্রি আক্রিটিডির সঙ্গে। শুরুতেই বাংলায় স্বাগত ও সালাম জানান তিনি। মুখভরা হাসি আর উচ্ছ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নাম দিমিত্রি, আমি বাংলা শিখতেছি।’

ভিনদেশি ভাষার উচ্চারণে বাংলা কথা শুনতে ভালোই লাগছিল। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে আছেন এই তরুণ। বাংলাদেশে এসে বাংলা ভাষা শেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও জানান দিমিত্রি আক্রিটিডি। তিনি বলেন, ‘এখানে আসার আগে অনেকেই আমাকে বলেছেন, “তুমি কেন বাংলাদেশে যাবে? সেখানে তুমি ভালো উপার্জন করতে পারবে না।” তবে আমি যখন প্রথম গুগল ম্যাপে দেখি, সবকিছুই সবুজ, আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমি বাংলাদেশে এসে রাজধানী ঢাকায় নেমে দেখেছি, সবাই খুব বন্ধুসলভ, সবখানে সতেজ ফল। এরপর যখন বাগেরহাটে এ কারখানায় এলাম, আমি বিস্মিত হয়েছি। কারখানার সবার হাসিমুখ, চারপাশে অসংখ্য পুকুর, সবজি খেত। এর ভেতর আমি এখানে একটা কাঠের বাড়িতে আছি।’

এখানে মানুষ, খাবার সবকিছু চমৎকার উল্লেখ করে দিমিত্রি বলেন, ‘আমি সত্যিই অনুভব করি, সবার এখানে (বাংলাদেশে) আসা উচিত। তাঁদের কেবল নেতিবাচক সংবাদ, বাংলাদেশ, এটা–ওটা। কিন্তু এখানে এসে আমার ধারণা বদলে গেছে। আমি এখানে খুবই উপভোগ করছি। প্রত্যেককে বলব, যেখান থেকে আমি এসেছি, বিভিন্ন গ্রুপ, সবাইকে বলব, শুধু ঘুরতে হলেও এখানে (বাংলাদেশে) আসুন। কেবল নিজের জন্য একটি ছবি তৈরি হলেও আসুন এবং আপনি যে পৃথিবী দেখবেন, তা খুবই আলাদা।’

কথায় কথায় দিমিত্রি আক্রিটিডি জানান, এখানকার প্রকৃতি, মানুষ, খাবারের পাশাপাশি ভাষাও তাঁকে ভীষণ আকৃষ্ট করছে। কথা বলার এক পর্যায়ে পকেট থেকে নিজের নোটবুক বের করে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউ সি, আমি নোট নিচ্ছি।’ তাঁর সেই নোট দেখিয়ে আরও বেশ কিছু বাংলা শব্দ শেখা ও জানার কথা বলতে থাকেন। শুভ সকাল, শুভ দুপুর, কেমন আছ? আমি তোমাকে পছন্দ করি, আপনাকে ধন্যবাদ—এমন অনেক বাক্য বলে অবাক করে দেন তিনি। এ সময় দিমিত্রি আক্রিটিডি নিজের নোটবুকে লেখা আরও কিছু বাংলা শব্দ দেখান।

‘ন্যাচারাল ফাইবার’ নামের কারখানাটি বেলজিয়ামের জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজা’র জন্য ১১০টি কাঠের বাড়ি তৈরি করছে। এর আগে কাঠের বাইসাইকেল, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ‘ডিসপোজেবল হোটেল স্লিপার’সহ পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠনটি।

ন্যাচারাল ফাইবারের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজের ধারাবাহিকতায় আমরা কাঠের ঘরের কাজটি পাই। কেবল ঘর নয়, এর আসবাব থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সবই তৈরি হচ্ছে কাঠ দিয়ে। এ ধরনের বড় কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। গ্রিসের কোকো-ম্যাট ও বেলজিয়ামের নোই বিল্ডার্স আমাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানের হয়েই দিমিত্রি ইন্টার্ন করতে এখানে এসেছেন।’

এটি আমাদের জন্য বেশ আনন্দের উল্লেখ করে মোস্তাফিজ বলেন, ‘কাজ শিখতে ও দেখতে আমিও অনেক দেশে গিয়েছি। আমাদের দেশ থেকে অনেকেই বিভিন্ন দেশে যান। তবে ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে কাজ শিখতে আসার বিষয়টি আমাদের জন্যও নতুন অভিজ্ঞতা। আমাদের সহযোগী নোই বিল্ডার্স ঘানায় একটি কাঠের বাড়ি তৈরির নতুন কারখানা চালু করতে যাচ্ছে। যার জন্য দিমিত্রি এখানে সবকিছু দেখতে, বুঝতে ও শিখতে এসেছেন। ওই কারখানা চালু করার কাজে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।’

গ্রিসের থেসালোনিকি শহরে দিমিত্রির জন্ম হলেও কিছুদিন পর তাঁর পরিবার চলে যায় জার্মানির হারেন শহরে। তবে ১২ বছর বয়সে তাঁরা আবার গ্রিসে ফিরে যান, জার্মানিতে সে সময় চলমান আর্থিক সংকটের কারণে। ১৪ বছর বয়সে বাবার প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরুর পর থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন দিমিত্রি। পরে আবার জার্মানিতে ফিরে গিয়ে সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি সে দেশের একটি বড় পর্যটনপ্রতিষ্ঠান ‘এল অসট্রিয়া’তে চাকরি শুরু করেন।

শেষে দিমিত্রি আক্রিটিডি জানান, ‘আমি বিক্রয়কর্মী থেকে ব্যবস্থাপক, বিভিন্ন পদে কাজ করেছি। সব সময় কাজকে উপভোগ করি। কোক ম্যাটের প্রতিষ্ঠাতা পল এফমরফিডিসের সঙ্গে পরিচয়ের পর আমরা একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। তাই কিছুদিন আগে নোই বিল্ডার্সে যোগ দিই।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখানে (বাগেরহাটে) কেবল কাঠ দিয়ে বাড়ি তৈরি নয়, পুরো কাজের ধরন, কারখানা পরিচালনা সম্পর্কে জানছি। আমাদের ঘানায় আরেকটি কারখানা প্রয়োজন। কাঠ নিয়ে আমার আগে থেকেই আগ্রহ ছিল। কাঠ বিষমুক্ত সামগ্রী, তাই এটা নিয়ে কাজ করা আমার শখ ছিল। এখানে শেখার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই খুশি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আম দ র ক জ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নিজের খুঁতগুলো যে কারণে এবং যেভাবে মেনে নেবেন

জীবন গতিশীল। তাই পরিবর্তন আসবেই। জীবনের পরতে পরতে থাকে অনিশ্চয়তা। কিছু ভুল ঠেকানোও দুরূহ। সময়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন এবং ভুলত্রুটিকে নিজের খুঁত ভেবে নেন অনেকেই। আর তাতেই বাড়ে মানসিক চাপ। হারিয়ে যায় প্রশান্তি। জীবনটাকে চমৎকার করে তুলতে হলে নিজের ভালোমন্দ সবকিছুকে সহজভাবে গ্রহণ করুন। এমন পরামর্শই দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন

নিজেকে জানুন

আপনার অর্জন, সাফল্য, সৌন্দর্য আর পেশাগত বা পারিবারিক পরিচয়ের মতো অনেক কিছু নিয়েই আপনি গর্বিত হতে পারেন। তবে নিজেকে জানতে হলে আপনাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলে যেতে হবে সেসব। ভেবে দেখুন, আপনি একজন মানুষ। নশ্বর এই পৃথিবীতে নির্দিষ্ট একটি আয়ু নিয়ে আপনি এসেছেন। ভেবে দেখুন তো, আপনার দেহ কিংবা সামাজিক পরিচয়টাই কি আপনার ‘আমি’? দেহটাকে নিজের মতো করে চালানোর যোগ্যতা রাখে আপনার ভেতরের আমি? চোখ বুজে ভেবে দেখুন ব্যাপারটা। ভেতরের এই আমিকে চিনুন। এই আমিকে ভালোবাসুন।

আরও পড়ুনঅফিসে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বুঝুন ১০ লক্ষণ দেখে০২ ডিসেম্বর ২০২৪নিজের ভেতর খুঁত?

আপনি যখন আপনার আমিকে চিনবেন, তখন তার ভালোমন্দ দিকও জানবেন। হয়তো কোনো মন্দ ভাবনা আপনার ভেতরে কখনো এসেছিল। হয়তো দেহের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে খারাপ কাজও করে ফেলেছেন আপনি। এসবের জন্য আপনার আমিকে দোষ দেবেন না। নিজেকে ক্ষমা করুন। মেনে নিন, এটাই জীবনের স্বাভাবিকতা। সব ভুলকে মেনে নিয়েই নিজেকে ভালোবাসুন।

শারীরিক খুঁত

দেহের সৌন্দর্যে ‘খুঁত’ থাকতেই পারে। আপনি হয়তো ভাবছেন, একজন বিশ্বসুন্দরী বা সুপার মডেল নিশ্চয়ই নিখুঁত সৌন্দর্যের অধিকারী। বাস্তবে সৌন্দর্য একটি আপেক্ষিক বিষয়। মানবদেহের গড়ন কিংবা ত্বকের রং যেমনই হোক, নিজস্ব সৌন্দর্য থাকবেই। আপনি দেখতে যেমন, তেমনভাবেই নিজেকে গ্রহণ করুন। যা কিছুকে নিজের খুঁত মনে হচ্ছে, সবসহ নিজেকে ভালোবাসুন। বয়স বাড়লে কিছু পরিবর্তন আসবেই। মনে রাখবেন, বয়সের ছাপ জীবনেরই সৌন্দর্য।

আরও পড়ুন১০ সেকেন্ডে কীভাবে একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব বুঝতে পারবেন০৬ মার্চ ২০২৫জীবনের আরও খুঁত

হয়তো মনের মতো একাডেমিক ফলাফল হয়নি, স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাননি, জীবনের লক্ষ্যপূরণ হয়নি, পছন্দের চাকরি পাননি, এমনকি হয়তো ভালোবাসার মানুষটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবেও পাননি। কিংবা পেয়েও হয়তো নিজের সেরাটা দিতে পারেননি জীবনের কোনো ক্ষেত্রে। হয়তো পেয়েও হারিয়েছেন অনেক। সবটা কিন্তু আপনারই জীবনের অংশ। আপনার চোখে যিনি সবচেয়ে সুখী, সেই মানুষটিরও কোনো না কোনো কষ্ট আছে। অনেকেই তা কাউকে জানতে দেন না। আপনার কষ্টগুলো অন্তত নিজের কাছে অস্বীকার করবেন না। মেনে নিন। তবে কোনো কিছুর জন্য অনুতাপ করবেন না।

শেষকথা

পৃথিবী একই সঙ্গে চমৎকার এবং নিষ্ঠুর একটি জায়গা। অনেকেই আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দেবেন আপনার খুঁতের কথা। তাঁদের সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না। আপনি তো নিজেই জানেন, কোনটা আপনার খুঁত। আপনি তো চেনেন নিজের আমিকে। তাই উপভোগ করুন জীবন। এমন কিছুর জন্য সময় ব্যয় করুন, যা আপনার আমির ভালো লাগে। সত্যিকার অর্থে যা আপনার আমি মন্দ দিক, তা জয় করতে চেষ্টা করুন। নিজের কাছে নিজের ভুলত্রুটির বিষয়ে পরিষ্কার থাকুন। আবারও সেই ভুল না করার চেষ্টা করুন। অন্তরাত্মাকে পরিশুদ্ধ করুন। তবে কিছু সাধারণ ভুল গ্রহণযোগ্য। এসব শোধরানোর জন্য বাড়াবাড়ি করবেন না। নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। নিখুঁত বা সফল জীবনের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা নিতান্তই অবাস্তব একটি ভাবনা। এর পেছনে ছুটতে গিয়ে কাছের মানুষদের নিয়ে ভালো থাকার সুন্দর মুহূর্তগুলোকে হারিয়ে ফেলবেন না।

আরও পড়ুনএই ৬টি সাধারণ অভ্যাস নীরবে আপনার আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করছে১৯ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিজের খুঁতগুলো যে কারণে এবং যেভাবে মেনে নেবেন