অমর একুশে বইমেলার ২০ দিন পার হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রথম ২০ দিনে মেলায় বই বিক্রি কমেছে ৩০ শতাংশ। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি পাঠক-দর্শনার্থী সমাগমের প্রত্যাশা থাকলেও বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ঢাকার আবহাওয়া অফিস।
এ বছর মেলায় বিক্রি কেমন– জানতে চাইলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র স্টলের বিপণন কর্মকর্তা সঞ্জয় পান্ডে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘লোকজন এসে বই দেখে। কিন্তু কেনার লোক কম।’
বিশেষ দিন কিংবা ছুটির দিনে মেলায় লোক সমাগম হচ্ছে। কিন্তু এর ঠিক উল্টো পিঠে রয়েছে প্রকাশকদের হতাশ মুখ। লোক সমাগম হলেও তারা খুশি হতে পারছেন না। এ হতাশার রেশ মিলল কবি প্রকাশনীর মালিক সজল আহমেদের কথায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টলটা ফটোজেনিক হওয়ায় সমস্যা এবার বেড়েছে। একে তো বই বিক্রি কম। তার ওপর এক পাঠকের দেখতে থাকা বই নিয়ে ছবি তুলছে অন্যজন। এটা বিরাট সমস্যা। স্টলের সামনে যে পরিমাণ ভিড় থাকে, যদি একটা করে বই কিনত, তাহলে আমার পাঁচ-
ছয়বার বই ছাপতে হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখি একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন বিক্রি হয়। যদি বিক্রি তেমন না হয়, তাহলে বলা যাবে, করোনার পর সবচেয়ে ফ্লপ একটা বইমেলা পার করব আমরা। আমার স্টলে এই ২০ দিনে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ৪০ শতাংশ কম বই বিক্রি হয়েছে।’
গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারির একটা আগাম আমেজ দেখা গেছে। সাদাকালো পোশাকে অনেকে এসেছিলেন।
পুরো বইমেলার চরিত্রটা এ বছর ছবি তোলা, ভিডিও করা, ঘোরা এবং খাওয়ায় সীমাবদ্ধ বলে জানান শব্দশৈলীর প্রকাশক ইফতেখার আমিন। সমকালকে তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে বইমেলা করি, আমরা ক্রেতা চিনি। তারা প্রতি বছর আসেন। চেনা মুখগুলোকে এ বছর আর বইমেলায় দেখা যাচ্ছে না। শুধু ক্রেতা নন, লেখক ও প্রকাশকদের উপস্থিতিও কম। এখন যারা মেলায় ঢুকছে, তারা মূলত সেলফি তোলে ও আড্ডা দেয়। বইয়ের ক্রেতা নেই।’
আশা-নিরাশার দোলাচলে চন্দ্রবিন্দুর প্রকাশক মঈন ফারুক বলেন, ‘বৃষ্টি হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ব। আর যদি না হয়, শেষ যে ক’টা দিন আছে, আশা করছি ভালো বিক্রি হবে।’
এবারের মেলায় অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে সমকালের উপসম্পাদক মাহবুব আজীজের বই ‘উচ্চারণের বিপরীতে: ক্ষমতাকাঠামো ও গণঅভ্যুত্থান (২০২৪-এর আগে-পরে)’। গতকাল মেলায় আসে ১১২টি নতুন বই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– আহমাদ স্বাধীনের ‘মুখোমুখি শয়তান লুসিফার’ (কলি), সজল আশরাফের ‘ইলিশ ইলিউশনস’ (অন্যপ্রকাশ), শামিমা সুলতানার ‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য: নানা প্রসঙ্গ’ (ঐতিহ্য), জুবায়ের রশীদের ‘বুনোগন্ধের জীবন’ (ইলহাম), অর্পণ দত্তের ‘ঈশ্বর আছেন একা’ (খড়িমাটি)।
বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ঔপন্যাসিক রশীদ করীমের উপন্যাসবীক্ষা: কয়েকটি প্রসঙ্গ’ আলোচনা অনুষ্ঠান। সুব্রত বড়ুয়ার সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। হামীম বলেন, রশীদের উপন্যাসে মধ্যবিত্ত মানসের দ্বিধান্বিত ও অন্তর্দ্বন্দ্বময় স্বরূপের উন্মোচন ঘটেছে। আলোচকদ্বয় বলেন, আধুনিক সমাজে ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো রশীদ করীমের উপন্যাসে প্রবলভাবে উপস্থিত হয়েছে। লেখক বলছি মঞ্চে আলোচনা করেন শাহাবুদ্দীন নাগরী এবং ইমরান মাহফুজ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দাবি আদায়ে সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে: রেহমান সোবহান
দাবি আদায় করতে লোক জড়ো করা এবং সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে আজ শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অতীতের ক্ষমতার চর্চা ছিল অর্থের ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। আদর্শের চর্চার প্রভাব খুব একটা ছিল না। জাতীয় সংসদের প্রধান থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত সবাইকে এ ধারায় চলতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ চলে গেলেও সেই টাকার প্রভাবের শূন্যতা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে তার কাজের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রবিধান সংযুক্ত করা হবে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থাকে কেউ কেউ ‘বিপ্লব’ বলেন। আদতে এটা বিপ্লব ছিল না। বিপ্লব হলে বিভিন্ন কমিশন গঠন করার দরকার হতো না। তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে তারা কতটুকু গ্রহণ করবে।
অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, সবাই সংস্কার চান। তবে কী সংস্কার চান, তা সুস্পষ্ট করা উচিত। সংস্কার কেবল আইনের পরিবর্তনের মধ্যে আটকে থাকলে হবে না। আইন অনেক আছে। সমস্যা রাজনৈতিক চর্চার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেকগুলো সংস্কারের জন্য কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেক সংস্কার প্রস্তাবও এসেছে। তবে সংস্কার প্রস্তাবের অনেকগুলো আইন পরিবর্তনের জন্য। সত্যিকার অর্থে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাইলে জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক চর্চার পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সরকার ব্যবস্থাকেও রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার চর্চাও দেখা গেছে। প্রতিবছর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবে– ‘দিন বদলের’ কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কীভাবে মানুষ এটা বিশ্বাস করবে, রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসছে, সেই প্রতিশ্রুতি রাখবে।
বক্তারা আরও বলেন, নিজেদের পক্ষে কথা বলার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিনিধি পাঠানোর পর যদি জনগণ দেখেন তাদের পক্ষে ওই প্রতিনিধি কথা বলছেন না, তাহলে তাকে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকা উচিত। রাজনৈতিকগুলো গণতন্ত্রের কথা বললেও নিজেরা গণতন্ত্রের চর্চা করে না। মুখে জনগণই সব ক্ষমতা উৎস– এমনটা বললেও সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধেই কথা বলতে পারে না।