তার্কিশ এয়ারলাইনসের ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য অফিসিয়ালি চুক্তিবদ্ধ হলেন সুমন
Published: 21st, February 2025 GMT
জনপ্রিয় ট্রাভেল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রাক্তন সাংবাদিক সালাহউদ্দিন সুমন আনুষ্ঠানিকভাবে তার্কিশ এয়ারলাইনসের ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় তার্কিশ এয়ারলাইনসের অফিসে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তিপত্র হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার্কিশ এয়ারলাইনসের ঢাকায় নিযুক্ত কান্ট্রি ম্যানেজার ইসলাম গুরে এবং সংস্থাটির অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। চুক্তির আওতায় সালাহউদ্দিন সুমন তার্কিশ এয়ারলাইনসের সেবা, বৈচিত্র্যময় গন্তব্য ও ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করবেন, যা তার বিশাল সংখ্যক অনুসারীদের জন্য নতুন ভ্রমণ অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।
এই চুক্তির পেছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে সালাহউদ্দিন সুমনের পূর্ববর্তী কিছু কন্টেন্ট, যেখানে তিনি তুরস্কের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, সংস্কৃতি ও তার্কিশ এয়ারলাইনসের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তারিত কভারেজ দিয়েছেন। তার এই কন্টেন্টগুলো তার্কিশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে এবং তার কাজের মান ও জনপ্রিয়তা বিবেচনা করেই তাকে ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য চুক্তিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন সুমন বলেন, ‘তার্কিশ এয়ারলাইনসের মতো বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তুরস্ক আমার প্রিয় গন্তব্যগুলোর একটি, এবং আমার তৈরি কন্টেন্ট যদি আরও বেশি মানুষকে তুরস্ক ও তার্কিশ এয়ারলাইনসের সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে, তাহলে সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।’
তার্কিশ এয়ারলাইনসের কান্ট্রি ম্যানেজার ইসলাম গুরে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের ব্র্যান্ডকে আরও বিস্তৃত করতে একজন অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় ট্রাভেল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সঙ্গে কাজ করা তাদের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। তারা আশা করছেন, সালাহউদ্দিন সুমনের মাধ্যমে ভ্রমণপ্রেমীরা নতুন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং তার্কিশ এয়ারলাইনসকে আরও কাছ থেকে আবিষ্কার করতে পারবেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক পার্ক ধ্বংসে এত আয়োজন!
কয়েক মাস ধরে রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংসের প্রতিবাদ করা হচ্ছে। এ পার্ক রক্ষায় উন্নয়নকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও মিডিয়াও সরব। ঢাকার আরও দুটি পার্কের অবস্থা একই রকম। আমাদের এই পার্কগুলোর ধ্বংস কী বার্তা বহন করে?
প্রথমেই আসি বহুল আলোচিত পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংসের একটি পর্যালোচনায়। প্রথম দিকে এই পার্কের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে। তার পরও যে পার্কের খুব একটা উন্নতি হয়েছে, তা বলা যাবে না। তবে মন্দের ভালো। পরবর্তী সময়ে যখন এই পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তখন তারা জানতে পারল, এই পার্কের ভেতর দিয়ে উড়াল সড়কের একটি র্যাম্প যাবে। অর্থাৎ পার্কটি আর জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী থাকল না। কেননা, এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের একটি অংশ হয়ে গেল।
ঢাকার আরও একটি পার্ক হলো শহীদ আনোয়ারা পার্ক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পার্কটি মেট্রোরেল স্থাপনার কারণে ধ্বংসের পথে। প্রথম দিকে এখানে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী রাখা হতো। কিন্তু মেট্রোরেলের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরই আবার জানা গেল, এখানে একটি বহুতল শপিংমল নির্মাণ করা হবে, যাতে মেট্রোরেলের খরচ বহন করা যায়। একটা বিষয়ে মিল রয়েছে– পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং শহীদ আনোয়ারা পার্কের উভয় স্থানই ব্যবহৃত হবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম হিসেবে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের যোগাযোগ উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, এখানে আর কোনো কাজ করা হবে না। তবুও আশঙ্কা
থেকেই যায়!
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কও ভালো নেই। সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে খাবারের দোকান নির্মাণ করার অনুমতি হয়েছে। সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে। তার পরও এখানে সেই বাণিজ্যই!
শহীদ আনোয়ারা পার্ক ও বাহাদুর শাহ পার্কের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৬৯ সালের ২৫ জানুয়ারি, গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় দিন। ঢাকার নাখালপাড়ার ৪৮৪ নম্বর বাসায় চার মাসের শিশুসন্তান নার্গিসকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন মা আনোয়ারা বেগম। এমন সময় পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনীর বুলেট টিনের বেড়া ভেদ করে আনোয়ারা বেগমের গায়ে বিদ্ধ হয় এবং তিনি নিহত হন। এই ঘটনাকে এবং তাঁকে স্মরণে রাখতেই মাঠটিতে ‘আনোয়ারা বাগান’ নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এটি ‘আনোয়ারা মাঠ’ নামে পরিচিতি পায়। এভাবে বাহাদুর শাহ পার্কেরও একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। ১৮৫৭ সালের ‘সিপাহি বিপ্লব’-এর সময় বেশ কয়েকজন বিপ্লবীকে এখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দিল্লির শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহর নামে পার্কটির নামকরণ করা হয়।
ঢাকার এই তিনটি পার্ক ধ্বংসের বিষয়ে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাব, প্রতিটি স্থানের পেছনে অর্থ ও মুনাফা জড়িয়ে আছে। এখানে প্রাণ-প্রকৃতি, ইতিহাস অথবা সবুজের যেন মূল্য নেই। আমাদের এই পুঁজিভিত্তিক সমাজে তারা চিন্তা করেন, মানুষ ফুলের গন্ধ নেবে না; নেবে সুগন্ধি। পার্কের সবুজ দেখবে না; দেখবে শপিংমলের আলো। পাখির ডাক শোনার কোনো প্রয়োজন নেই; গাড়ির হর্নই হচ্ছে জীবনের অংশ। তাই তো পার্ক নামক উন্মুক্ত স্থান ধ্বংস করার এত আয়োজন।
আমরা যদি এভাবে পার্ক ধ্বংস করে চলি, তাহলে ভবিষ্যতে এমন একটা প্রজন্ম পাব, যারা শুধু মুনাফার কথা চিন্তা করবে। তাদের কাছে প্রকৃতি, সবুজ, জীববৈচিত্র্য এবং মানবিকতা বলে কিছুই থাকবে না। তাই আর নয় পার্ক হত্যা।
তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.com