বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকা আটকে দিল মার্কিন কোস্টগার্ড
Published: 21st, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডা উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশী বহনকারী নৌযান আটকে দিয়েছে দেশটির কোস্টগার্ড। গত বুধবার ফ্লোরিডার একটি ফেডারেল আদালতে দায়ের করা ফৌজদারি অভিযোগে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। নৌযানটিতে বাংলাদেশি ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিক ছিলেন।
কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন দেশের ৩১ জন অভিবাসীকে বাহামাসে ফেরত পাঠিয়েছে। ফ্লোরিডার মিয়ামির পূর্বে মার্কিন জলসীমায় অবৈধ নৌযান থেকে তাদের আটক করা হয়। তদন্তের জন্য চার সন্দেহভাজন পাচারকারীকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এইচএসআই) সংস্থার এজেন্টদের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, একজন অভিবাসীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থলভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা চীন, হাইতি ও বাংলাদেশের নাগরিক।
মার্কিন কোস্টগার্ডের সপ্তম জেলা জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জন ডব্লিউ বেল বলেন, অবৈধ সামুদ্রিক অভিবাসন সবসময়ই বিপজ্জনক এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়। মানব পাচারকারীরা এই যাত্রার সময় অভিবাসীদের নিরাপত্তা বা জীবনের কোনো পরোয়া করে না। আমাদের বার্তা সহজ, কেবল প্রত্যাবাসিত হওয়ার জন্য আপনার জীবন ও অর্থ মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেবেন না। সমুদ্রপথে যাত্রা করবেন না।
মিয়ামি-ডেড ফায়ার রেসকিউর একটি দল এক নারীকে চিকিৎসার জন্য কোকোনাট গ্রোভের মার্সি হাসপাতালে নিয়ে যায়। যদিও অভিযোগে তাঁর চিকিৎসাজনিত সমস্যার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌকাটি চালাচ্ছিলেন আর্লিন কার্লান কারগিল নামে এক ব্যক্তি।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, বাহামাসে পাচার চক্রের সংগঠক তাঁকে কি বিসকেইনে লোক পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। এ কাজের জন্য তাঁকে ৭০০ ডলার দেওয়া হয়েছিল। কারগিল আরও বলেন, বিমিনির ডকে তিনি পৌঁছানোর আগেই লোকজন নৌকায় ছিল। পাচারকারীরা তাঁকে কাপড় ও একটি মোবাইল ফোন দেয়। ফোনে একটি জিপিএস অ্যাপ ইনস্টল করা ছিল, যেখানে গন্তব্য হিসেবে কি বিসকেইনের স্থানাঙ্ক আগেই সেট করা ছিল।
ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনসের রেকর্ড অনুযায়ী, কারগিল বর্তমানে মিয়ামির ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কেবল ক্রিকেট বাণিজ্যেই ভারত-পাকিস্তান লড়াই!
ইনস্টাগ্রামের সেই পেইজটার নাম ঠিক মনে নেই। তবে বাবর ও রিজওয়ানদের ছবি পোস্ট করে যে ক্যাপশন দিয়েছে তার ভাষা ছিল এরকম, ‘‘অর্থের শক্তি দেখাল ভারত!’’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিজেদের মাটিতে আয়োজন করেও পাকিস্তান দুবাই গেছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। বিমানবন্দরে রিজওয়ান ও বাবরের সেই ছবি।
ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বাণিজ্য এখন এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে, ভারত পূর্ব দিকে থাকলে বাকি সবাই পশ্চিমে। দুই মেরুতে অবস্থান। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করেছে পাকিস্তান। লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। প্রতিবেশী দেশ ভারত অংশগ্রহণের জন্য সরকার থেকে পায়নি সবুজ সংকেত।
আইসিসির যেকোনো ইভেন্টের সূচি যেখানে তিন মাস আগে ঠিক হয়ে যায় সেখানে ভারতের কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি আটকে থাকে দিনের পর দিন।
এর আগে, এশিয়া কাপ পাকিস্তান বিনা শর্তে মেনে নিলেও এবার তারাও একটু বেঁকে বসে। ভারতকে আসতেই হবে তাদের দেশে নয় তো তারা বাদ! ভাবনা ছিল এরকমই। কিন্তু এই কথা যে, কেবল নিজেদের আলোচনার টেবিলেই ছিল বলাবাহুল্য। আইসিসির মিটিংয়েও এমন কথা বলা মানে নিজেদের অবস্থানকেই ছোট করে ফেলা। বাধ্য হয়ে ভারতের হাইব্রিড মডেলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। বাকি সব ম্যাচ পাকিস্তান। আয়োজক পাকিস্তান এক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারত। ভারতের গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারত। তাহলে তাদের ঘরের মাঠেই খেলতে হতো অন্তত গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে উঠলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু ওই যে ক্রিকেট বাণিজ্য এমন অবস্থানে যেখানে পাকিস্তান চাইলেও কৌশলী হতে পারবে না। আইসিসি এবং এসিসি বাড়তি লাভের আশায় এখন গ্রুপ পর্বেই ভারত ও পাকিস্তানকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো যদি দুই দল ফাইনাল খেলে তাহলে এর আগ পর্যন্ত নক আউটে মুখোমুখি হতে হবে না। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই যার বড় প্রমাণ। গ্রুপ পর্বে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর আবার তারা ফাইনাল খেলেছিল।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তারা একসঙ্গে খেলেছিল। এরপর ভারত নক আউট পর্বে গেলেও পাকিস্তান যেতে পারেনি। ফলে তাদের ম্যাচ খেলাও আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও একই কাণ্ড। গ্রুপ পর্বের পর দুই দল আবার সেরা চারে মুখোমুখি। ভারত ফাইনাল খেলতে পারলেও পাকিস্তান পারেনি। এবারও বাণিজ্যিক দিক থেকেই বিবেচনা করে আইসিসি দুই জায়ান্টকে একই গ্রুপে রেখেছে।
সুবিধা হলো একটাই, ক্রিকেট বাণিজ্য। দুই দলের মুখোমুখি লড়াই এখন কেবল মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ। পুরোনো সেই জৌলুস নেই। নেই লড়াইয়ের তীব্র জেদ। খেলোয়াড়রাও সেই উত্তাপ টের পান না। গণমাধ্যম, ব্রডকাস্ট আর দর্শকই সেই উত্তেজনা টিকিয়ে রেখেছেন। সব মিলেই কিন্তু বাণিজ্য। তাইতো দুই দলের ম্যাচের টিকিট দুই ঘণ্টাও অনলাইনে থাকে না। স্টেডিয়ামের বাইরে কালোবাজারিতে বিক্রি হয় চড়া দামে। সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন।
স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। বাকিদের ভরসা টিভি সেট, অনলাইন স্ট্রিমিং। এজন্য ব্রডকাস্টরাও চওড়া দামে বিক্রি করেছে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রতি ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন বিক্রি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ রুপিতে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ৩০.৪ বিলিয়ন মিনিট। টি-টোয়েন্টিতেও ওয়াচ টাইম রেকর্ডে শীর্ষে এই দুই দলের ম্যাচ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ২২ বিলিয়ন মিনিটের মতো।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার ভেঙে যাবে অতীতের সব রেকর্ডই। এ ম্যাচের দিকে তাই অপেক্ষা নিয়ে তাকিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা ও প্রচারস্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। তাইতো ‘মওকা-মওকা’ গান প্রচার করে বাড়তি নজর কাড়ার চেষ্টাতে পুরো সফল হয়ে যান তারা।
গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচটি ছাড়া যদি ফাইনালে তাদের আবার দেখা হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাণিজ্যের অঙ্কটা তখন কোথায় গিয়ে থামে, সেটি অনুমানেরও বাইরে। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের থেকে অর্থের ঝনঝনানি নিশ্চিত বেড়ে যাবে। আয়োজকরা সেই অপেক্ষাতেই।
সেজন্যই ক্রিকেট বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের জেদের কাছে একপ্রকার নত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে! বাবর-রিজওয়ানকে তাই স্বাগতিক হয়েও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর পাড়ি দিতে হয়। মাঠের ক্রিকেটে সেই জবাবটা তারা আজ দিতে পারলে কিছুটা মুখরক্ষা হলেও হতে পারে।
ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব