সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইভান তাহসীব ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন একই শিক্ষাবর্ষের শামসুল আলম মারুফ।

বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনে ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৩তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ইভান তাহসীব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

কমিটিতে সহসভাপতি হয়েছেন খাদিজা তুল কুবরা, সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক তৌকির আহমেদ, অর্থ সম্পাদক সিদ্ধার্থ কুমার রায়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খিজির আল সিফাত, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জুনায়েদুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক সাজু আহমেদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক দীপংকর রায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আহাম্মদ নাঈম। কার্যকরী সদস্য ফারিহা তাসনিম, মিশকাতুল জামান, তাজুল ইসলাম, সৌরভ আহমেদ, তাজ‌ওয়ার ইসলাম, নাজিব মাহমুদ ও রিয়াদ সরকার।

কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুলবিষয়ক সম্পাদক দীপা মজুমদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

গণমানুষের কণ্ঠস্বর

দেশ-মাটি-মানুষের শিল্পী ফকির আলমগীর। ‘গণ’ শব্দটির সঙ্গে ফকির আলমগীরের নাম যুগলবন্দি হয়ে আছে। দেশমাতৃকার জন্য নিবেদিত এ সংগ্রামী শিল্পীর ৭১ বছরের বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ২৩ জুলাই ২০২১ সালে। এই খ্যাতিমান শিল্পীর দীর্ঘ জীবন খুব মসৃণ ছিল না। 
ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত দিনটিই ফকির আলমগীরের জন্মতারিখ। ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আসাদের মিছিলের সহযোদ্ধা ছিলেন ফকির আলমগীর। দেশাত্মবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতে সোচ্চার ছিল তাঁর বিপ্লবী দরাজ কণ্ঠ।
আত্মপ্রত্যয়ে অবিচল থেকেছেন এই সংগ্রামী শিল্পী। একজন সমাজ ও রাজনীতি সচেতন এ শিল্পী পৃথিবীর সব বিপ্লবী নেতার প্রতিই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের কথা, তাদের দুঃখ-কষ্ট-যাতনা তাঁর দরাজ কণ্ঠে প্রকাশ পেত। তিনি সংস্কৃতিকে ড্রয়িংরুম থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজপথে।

ফকির আলমগীর শুধু গণসংগীত শিল্পী নন; রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে তিনি আদর্শিকভাবে গণসংগীতে সমন্বয় করেছেন। তাঁর কণ্ঠ রাজপথ ও বাংলার জনপদে দিন বদলের কথাই বলেছে। 
ম্যান্ডেলা, পিটসিগার, বেঞ্জামিন মলয়েস্বি, ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর বিপ্লবী কণ্ঠস্বর মহাসমুদ্রের কলতানে কল্লোল সৃষ্টি করেছে।
নিজাম উল হক, আবদুল লতিফ, কামাল লোহানী, সাধন ঘোষ, সাধন রায়, আবু বকর সিদ্দিক, আলতাফ মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, ভূপেন হাজারিকা, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মতো ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসে গণসংগীতে নিবেদিত শিল্পীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।

ফকির আলমগীর লোকজ ঐতিহ্য ও কৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন অনেক বই। তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’। জীবদ্দশায় তাঁর শেষ বই ছিল পবিত্র হজব্রত নিয়ে লেখা ‘ইহরাম থেকে আরাফাত’। অনেক পাণ্ডুলিপি রয়ে গেছে অপ্রকাশিত। তাঁর মৃত্যুর পর সংগ্রাম ও লাল-সবুজের পতাকা, সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ, দেশান্তর, মায়ের মুখ বইগুলো আমি উদ্যোগ নিয়ে প্রকাশ করেছি।
ফকির আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ৩০ বছর চাকরি করেছেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল  ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের গণযোগাযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ২০০৭ সালে অবসরে যান।  

জীবনে অনেক পুরস্কার ও পদক লাভ করেছেন তিনি। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি ফেলো, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার, তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক, জসীম উদ্‌দীন স্বর্ণপদক, ভাসানী পদক, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার মমতা ব্যানার্জি কর্তৃক সংগীতে মহাসম্মাননা পেয়েছেন।  
দেশের দুঃসময়ে, সুসময়ে ফকির আলমগীরের কণ্ঠের গান কখনও থেমে থাকেনি। তিনি দেশ-মাটি-মায়ের সঙ্গে ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়েছিলেন। বিদেশের মোহ কোনোদিন তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। স্বদেশের প্রতি এ রকম দায়বদ্ধতা তাঁকে জনগণের প্রাণের কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। দেশ-জননীর তিনি আদরের সন্তান।
গান শুধু গানের জন্য নয়; গান জীবনের জন্য। প্রান্তিক মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনা, জীবনে বেঁচে থাকার নানা অনুষঙ্গ তাঁর গানে উঠে এসেছে জীবন্ত হয়ে।
ফকির আলমগীর বেঁচে থাকবেন তাঁর লেখা বই, গান ও গণমানুষের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য। এই মহৎ শিল্পীর চিরবিদায়ের তৃতীয় বছর অতিক্রান্ত। দেশের মানুষের কাছে তাঁর জন্য দোয়া কামনা করছি। আজ জন্মদিনে ফকির আলমগীরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি।

সুরাইয়া আলমগীর: প্রয়াত শিল্পী ফকির আলমগীরের সহধর্মিণী এবং ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি

সম্পর্কিত নিবন্ধ