নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। এতে কমেছে রাজস্ব, বিপাকে পড়েছে দলিল দাতা, গ্রহীতাসহ নিবন্ধন সংশ্লিষ্টরা। 
ভূমিগ্রহীতারা জানিয়েছেন, জমি নিবন্ধনে ফি কমানোর দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর গণস্বাক্ষর দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামের শহিদ সরকার জনসাধারণের পক্ষে এ স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপির অনুলিপি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার ও সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকেও দেওয়া হয়েছিল। এরপর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। অতিরিক্ত নিবন্ধন ফির কারণে সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সাফ কবলা দলিল তৈরি কমে গেছে।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার সব মৌজায় জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি বিক্রয় মূল্যের ওপর নিবন্ধন ফি ছিল তিন শতাংশ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আওতাধীন অঞ্চলের জন্য এ নিবন্ধন ফি ছিল চার শতাংশ। গত বছর ২৭ আগস্ট জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলার মধ্যে শুধু সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে জমি নিবন্ধন হয়। জমি নিবন্ধন ফি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। 
নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌরাপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রবাসে যাওয়ার জন্য ৩০ শতাংশ বা ২০ কাঠা জমি ৬ লাখ টাকায় বিক্রয় করেন। সাফ কবলা দলিল করতে ১২ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে বলে জমিগ্রহীতা দলিল করছেন না। ফলে প্রবাসে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, এই পরিমাণ জমি আগের পদ্ধতিতে বিক্রি করলে নিবন্ধন ফি দিতে হতো ১ লাখ ৭০ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক গ্রামের শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, জমি বিক্রয় করে তাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। ১৭ শতাংশ বা ১১.

৩৩ কাঠা জমি বিক্রির কথা হয়। ক্রেতা জানতে পারেন সাফ কবলা দলিল করতে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে। ফলে জমি বিক্রয় করতে পারেননি। তাই মেয়ের বিয়ের তারিখও নির্ধারণ করতে পারছেন না তিনি। তিনি জানান, এই ১৭ শতাংশ বা ১১.৩৩ কাঠা জমি আগের পদ্ধতিতে বিক্রি করলে নিবন্ধন ফি দিতে হতো ৭৫ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকা।
সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত দলিল লেখক বিল্লাল হোসেন জানান, নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণের ফলে সাফ কবলা দলিল সৃজন প্রায় বন্ধ। আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলায় কাঠাপ্রতি নিবন্ধন ফি ২০ হাজার টাকা। অথচ এ উপজেলায় নিবন্ধন ফি ৫০ হাজার টাকা। ফলে দাতা ও গ্রহীতার মাঝে সাফ কবলা দলিল তৈরিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আগের পদ্ধতিতে নিবন্ধন ফি নিলেই বিষয়টির সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। 
আরেক দলিল লেখক মফিজুল ইসলাম বলেন, ফি অনেক বেড়ে যাওয়ায় জমি নিবন্ধন কমে গেছে। ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। দ্রুত নতুন ফি নির্ধারণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করায় সাফ কবলা দলিল সৃজন কমে যাচ্ছে। দলিল সৃজন কমে যাওয়ায় রাজস্ব কমে গেছে। আগের পদ্ধতিতে জমি নিবন্ধন করতে পারলে দলিল সৃজন ও রাজস্ব বাড়বে। 
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, সোনারগাঁ ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করে দলিল করা হচ্ছে। সোনারগাঁয়ে নতুন করে নিবন্ধন ফি নির্ধারণ প্রয়োজন। তাহলেই দলিল করার সংখ্যা বাড়বে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ম রকল প স ফ কবল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী পুত্রের পিএস ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি হিরা গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি গোলাম মতুর্জা পাপ্পার একান্ত সহকারী (পিএস) কামরুজ্জামান হিরাকে (৪৬) গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকার রমনা এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জেষ্ঠ্য সহকারী পুলিশ সুপার  ( গ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জে কামরুজ্জামান হিরা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য মুর্তিমান আতঙ্কের নাম। গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পার ছত্রছায়ায় কামরুজ্জামান হিরা রূপগঞ্জে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, জমি দখলসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালাতো।

রূপগঞ্জের কিশোরগ্যাং চলতো তার নিয়ন্ত্রণে। হিরা কিশোর ও যুবক বয়সী ছেলেদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়াতে তাদের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিতো। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পল্টনে সাবেক মন্ত্রী গাজীর ব্যাবসায়িক কার্যালয়ে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের পেটে গুলি করে হিরা।

এ ঘটনায় পল্টনের তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম হিরাসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি ভুলতা এলাকার ডায়মন্ড ব্রিকস টাইলস প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির সময় হিরাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ওই সময় মন্ত্রী গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে হিরার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। তবে কয়েকদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে আবারো হিরা তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে থাকে।

নিরীহদের জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট, আবাসন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, পরিবহণ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে রূপগঞ্জে সকল সেক্টরের ছিল তার অবাধ বিচরণ। সাধারণ মানুষের কাছে হীরা কাচঁকাটা হিরা ও ডন হিরা নামেও পরিচিত। গত ৫ আগষ্টের পর থেকে হিরা পলাতক ছিল।  

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জেষ্ঠ্য সহকারী পুলিশ সুপার  (গ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম জানান, গোয়েন্দা পুলিশ হিরাকে গ্রেফতারের পর রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনসহ বেশকয়েকটি মামলা রয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছোট্ট শিশুকে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক গ্রেপ্তার
  • সিদ্ধিরগঞ্জে বালুর মাঠ থেকে বিদ্যুৎমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার
  • বন্দরে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে সমাবেশ 
  • দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে দক্ষ ও আদর্শবান দায়িত্বশীল তৈরির বিকল্প নেই 
  • শ্রমিক নেতা আব্দুল মোমিন ও আব্দুল মান্নান কে ফুলেল শুভেচ্ছা
  • নারায়ণগঞ্জে ঝুটের গোডাউন ও দোকানে আগুন
  • শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা সেলিম মাহমুদের মুক্তির দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল
  • গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা সেলিম মাহমুদকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
  • ত্বকী হত্যা মামলা: আজমেরী ওসমানের গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর
  • রূপগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী পুত্রের পিএস ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি হিরা গ্রেফতার