ক্ষমতার বিন্যাস পরিবর্তন করা না গেলে আইন পরিবর্তন করে কিছুই হবে না: অধ্যাপক মুশতাক হুসাইন খান
Published: 20th, February 2025 GMT
ক্ষমতার বিন্যাসটা যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে আইনকানুন পরিবর্তন করে কিছুই হবে না। যাদের হাতে ক্ষমতা, অবৈধ টাকা, সিন্ডিকেট আছে, তাদের একটা বার্তা দিতে হবে যে তাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। তারপর নির্বাচন করে নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। দেশে ভালো রাজনীতিক দরকার, একই সঙ্গে নতুন সামাজিক নেটওয়ার্কও দরকার।
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক মুশতাক হুসাইন খান ‘জুলাই রেভল্যুশন অ্যান্ড বাংলাদেশ ২.
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঠিক ইতিহাস লেখার আহ্বান জানান অনুষ্ঠানের অতিথি বক্তা মুশতাক হুসাইন খান। এই অভ্যুত্থানের বয়ান একাত্তরের মতো যাতে কেউ কবজা করতে না পারে, সেদিকে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এটা হতে হবে সবার ইতিহাস। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় নষ্ট করে ফেলা সমাজকে পুনর্গঠন করতে হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আসন্ন নতুন রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, যারা নতুন বাংলাদেশ চায়, তাদের নিয়ে নতুন রকমের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। এই নেটওয়ার্কে শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা থাকবেন। কারণ, এখন যে নেটওয়ার্কগুলো আছে, সেগুলো খারাপ নেটওয়ার্ক বা সিন্ডিকেট। সমাজ যখন সোচ্চার হবে, তখনই রাজনীতি ঠিক হবে।
অধ্যাপক মুশতাক হুসাইন খান বলেন, আমাদের ভালো রাজনীতিক দরকার, একই সঙ্গে নতুন সামাজিক নেটওয়ার্কও দরকার। নেটওয়ার্ক থাকলে কর্মস্থল, হাসপাতাল বা শিক্ষাস্থানে অযৌক্তিক কিছু হলে আমরা আওয়াজ তুলতে পারব, তাতে রাজনীতিবিদরাও লাইনে আসবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে লড়ার জন্য টাকা দরকার। খালি নির্বাচনটা দিয়ে দিলে এই নির্বাচনে টাকাটা আসবে সেই সিন্ডিকেট ও চোরদের কাছ থেকে। ওই টাকা নিয়ে নির্বাচনে যে-ই জিতবে, তারা আর সেই সিন্ডিকেট ও চোরদের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। এটা রোধ করতে নির্বাচনের আগে সবাইকে নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে।
মুশতাক হুসাইন বলেন, সংস্কারের দুটি দিক আছে। একটা হচ্ছে আইনকানুন পরিবর্তন করা, আরেকটি হচ্ছে ক্ষমতার বিন্যাস পরিবর্তন করা। আইনকানুন পরিবর্তনে দীর্ঘ সময় লাগে; কিন্তু ক্ষমতার বিন্যাসটা যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে আইনকানুন পরিবর্তন করে কিচ্ছু হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, অবৈধ টাকা আছে, সিন্ডিকেট যাদের হাতে, তাদের একটা বার্তা দিতে হবে যে আপনাদের দিন শেষ হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করে আমাদের নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাধারণ নাগরিক বা গণমাধ্যম—সবাইকেই বিকল্প নেটওয়ার্ক করতে হবে। যাতে আমরা আমাদের ভালো নেটওয়ার্ক দিয়ে রাজনীতিকদের ওপর চাপ দিতে পারি; আর যারা খারাপ নেটওয়ার্ক, তাদের চাপ ও প্রতিযোগিতার মধ্যে রাখতে পারি। এটা ৫০ বছরের কাজ; কিন্তু এই মুহূর্তের কাজ হচ্ছে, আমাদের কয়েকটা বড় বড় সাপের মাথা কাটতে হবে।’
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মালিক হতে গিয়ে কেউ কেউ বিভেদের রাজনীতি সামনে আনছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর স্থানীয় পর্যায়ে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ গায়েবি আওয়াজ তুলে একধরনের বিশৃঙ্খলা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। ফলে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিভক্তি নিশ্চিতভাবেই ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে।
‘জুলাই রেভল্যুশন অ্যান্ড বাংলাদেশ ২.০: দ্য লিগ্যাসি অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ফ্রন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত র ব ন য স ন টওয় র ক র জন ত ক অন ষ ঠ ন আম দ র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের প্রার্থনা
ময়মনসিংহের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধের জন্য প্রার্থনা করেছে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে নগরীর আবুল মনসুর সড়কে রোভার ভবনে জেলা তথ্য অফিস আয়োজিত ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায়’ অংশ নেওয়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আয়োজক ও অতিথিবর্গের সাথে এ দোয়ায় অংশ নেয়।
এ সময় একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার শিকার ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও পৃথিবীতে চলমান সকল যুদ্ধ, গণহত্যা বন্ধ ও বিশ্বশান্তি কামনা করে তারা।
ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল নিয়ে গঠিত মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের অধীনে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল একাত্তরের গণহত্যা ও ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কবির হোসেন সরদার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে জেলা পরিষদে এ ধরনের আয়োজন করতে তথ্য অফিসকে স্বাগত জানান।
ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অভ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ার নির্বাহী পরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার ছোট ভাই বিবেশ চন্দ্র রায় তার একাডেমির পক্ষ থেকে সভায় জহির রায়হানের বিখ্যাত প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রদর্শন করেন।
তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদের সঞ্চালনায় সিনিয়র তথ্য অফিসার শেখ মো. শহীদুল ইসলাম, ফুলবাড়িয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও জেলা রোভার স্কাউটের সহকারী কমিশনার লিয়া আফরোজ, তথ্য অফিসের সহকারী পরিচালক আফসানা ফেরদৌস মিষ্টি আলোচনা সভায় অংশ নেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ