ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিসিক শিল্পনগরীর অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নালা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কৃষিজমিতে। এতে শত শত বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ছয় বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে জমিগুলো। বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বিসিক শিল্পনগরীর এজিএম রুকন উদ্দিন ভূইয়ার দাবি, আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কারণে এ অবস্থা। প্রকল্পের কাজের বালুতে কারখানার নালা ভরাট হয়ে পানি উপচে পড়ে কৃষিজমিতে পড়ছে। এ বিষয়ে ওই কাজের পিডির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি সড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে নালা তৈরি করে দেবেন বলেছিলেন। কাজটি হলেই এ সমস্যা আর থাকবে না। এ সময় কারখানায় ইটিপি নেই কেন জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদের ভাষ্য, সড়কের কাজ শুরুর আগে থেকেই এ সমস্যা। মূলত শিল্পবর্জ্যের কারণেই নালা ভরাট হয়ে গেছে। তারপরও এলাকার কৃষকদের সুবিধার্থে কাজ শেষে নালা করে দেব।
জানা গেছে, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বিসিক শিল্পনগরীর অবস্থান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নেই। ফলে কারখানা থেকে নির্গত ক্রিমিয়াম, লেড, নিকেলসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের তরল উপাদান মহাসড়কের পাশের নালা দিয়ে তিতাস নদীর পানিতে পড়ত। সম্প্রতি আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর পর থেকে প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত বালুতে নালা ভরাট হয়ে বিপত্তির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তরল বর্জ্য নিষ্কাশিত না হতে পেরে বিসিকের উত্তর-পশ্চিমাংশের জমিতে পড়ছে। এতে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি।
বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের নালা ভরাট হয়ে উপচে বর্জ্য পার্শ্ববর্তী জমিতে পড়েছে। রাস্তাগুলোও
তরল বর্জ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে বিসিকের ভেতরে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। শিল্পনগরীর মধ্যবর্তী পুকুরের পানিও কালো রং ধারণ করেছে।
বেতবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘চার লেন সড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বালু পড়ে নালা বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক ঘেঁষে আমার ৩ বিঘা জমি রয়েছে। বিসিকের এসিডযুক্ত পানির কারণে সেখানে ফসল হয় না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও প্রতিকার মেলেনি।’
একই গ্রামের তাজুল ইসলাম জানান, শিল্প বর্জ্যের কারণে ধানের পাতা লালচে রং হয়ে যায়। এক গোছাতে চার-পাঁচটির বেশি ধানের শীষ বের হয় না। তাও চিটা হয়ে যায়। এ কারণে ধান আবাদ বন্ধ। এখন চাল কিনে খেতে হয়। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।
বুধল ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্রামবাসীকে নিয়ে চেয়ারম্যান বিসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, প্লান্ট বসাবে। আজ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের কারণে এলাকার সাধারণ কৃষকদের কষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ওই এলাকার অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। অভিযোগ পেয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারা কথা রাখেননি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, অভিযোগ পেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ আদায়, সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ মামলা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব স ক শ ল পনগর প রকল প র ক শ ল পনগর র বর জ য সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না: আমিনুল হক
নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
সোমবার রাজধানীতে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ ও রুপনগর আবাসিক জনকল্যাণ সমিতির দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বৈরাচারের দোসর ও ষড়যন্ত্রকারীরা বসে আছে। তারা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় না। দেশের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
আমিনুল হক বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে না। গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নয়ন হয় না। এ সরকারের উচিত গণতন্ত্র ও সংস্কারকে চলমান রেখে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। কারণ নির্বাচন ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে না।
তিনি বলেন, আমরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনামুক্ত হয়েছি কিন্তু পরিপূর্ণভাবে স্বৈরাচারমুক্ত হতে পারিনি। দেশে যেন একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হতে পারে এজন্য স্বৈরাচাররা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে বেড়াচ্ছে। গত দেড় যুগ ধরে এদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ ভোট দিতে চায়। কিন্তু যড়যন্ত্রকারীরা ও স্বৈরাচারের দোসররা এ অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ঢুকে তাদের নির্বাচন না দেওয়ার জন্য বুদ্ধি ও পরামর্শ দিচ্ছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা চাই এ অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সময়ের ভেতরে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে এবং সে নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশের জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। জনগণের এ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শাহ আলম মোল্লার সভাপতিত্বে ও মো. সায়েমের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নির্বাহী কমিটি সদস্য মুন্সি বজলুল বাসিত আন্জু, মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ, মাহাবুব আলম মন্টু, মহানগর সদস্য সাজ্জাদ হোসেন মোল্লা, রুপনগর থানা বিএনপি আহ্বায়ক জহিরুল হক, রুপনগর থানা ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মামুন, বিএনপি নেতা ফিরোজুল আলম, সাবেক যুবদলের নেতা সমশের আলী জিয়া, ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক খোকন মাদবর, সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি খান মুরাদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম, সহ-সভাপতি ফুতুন মিয়া, রুপনগর থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাঈম হোসেন, রুপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুল আলম টুটুল, ছাত্রদল রুপনগর থানার সাধারণ সম্পাদক কাওসার মল্লিক প্রমুখ।