Samakal:
2025-03-24@05:06:22 GMT

জ্বলি ন উধিম কিত্তেই

Published: 20th, February 2025 GMT

জ্বলি ন উধিম কিত্তেই

‘প্রতিবাদের ভাষা’ কোনো মুখস্থবিদ্যা নয়, কিংবা কোনো ঔপনিবেশিক চাতুরি থেকেও এর পয়দা হয় না। জনতা থেকে জনপরিসর, প্রকৃতি থেকে সংস্কৃতি প্রতিবাদের ভাষা গড়ে ওঠে। নির্মিত হয়। বিদীর্ণ হয়। বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়। মানুষের সমাজে প্রতিবাদের ভাষা বলতে আমরা হয়তো কেবলমাত্র ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ সমাজের আলাপই সামনে আনি। কারণ নিয়ানডার্থাল, ইরেকটাস, ডেনিসোভান বা ফ্লোরিয়েনসিস মানুষের প্রতিবাদের ভাষা আমাদের জানা নেই। এমনকি আমাদের ‘প্রতিবাদের ভাষার’ বয়ান বহুলভাবে, হয়তো অধিকাংশ সময় নিষ্ঠুরভাবে, প্রবল এথনোপোসেন্ট্রিক। প্রতিবাদের ভাষা বলতে আমরা কেবল ‘মানুষকেন্দ্রিক’ প্রতিবাদের ভাষা বুঝি। আড়াল ও অপর হয়ে যায় পাখি, মাছ, গাছ, পতঙ্গ প্রাণ-প্রকৃতি। সাফারিং পার্কের বন্দিদশা ভেঙে মুক্ত হওয়া নীলগাইয়ের প্রতিবাদের ভাষা বোঝার দায় ও দরদ এখনও আমাদের তৈরি হয় নাই। নির্বিচার বালু উত্তোলনের নামে নৃশংসভাবে ক্ষতবিক্ষত করা একটি মুমূর্ষু নদীর প্রতিবাদের ভাষা কী? লাউয়াছড়া বনের বনতল ছিন্নভিন্ন করে গ্যাস জরিপের নামে শেভরন যখন বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তখন সেই বিপদাপন্ন বন কী পাথর হয়ে ছিল নাকি প্রতিবাদও করেছিল? অরণ্যভূমির প্রতিবাদের ভাষা কী আমাদের মন্ত্রণালয় পাঠ করতে পারে? যশোরের কেশবপুরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে হনুমানের দল থানা ঘেরাও করে হনুমান হত্যার দাবিতে অবস্থান করে। কেশবপুরে কয়েকবার হনুমানেরা এমন প্রতিবাদ দেখিয়েছে। করোনা মহামারির সময় একটি ওষুধ কোম্পানি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য গাজীপুরের বরমী শালবন থেকে যখন বানর ধরতে যায় তখন কেবল স্থানীয় মানুষ নয়, বানরেরাও প্রতিবাদ করেছিল। সুন্দরবনের গ্রামগুলো ঘুরলে মৌয়ালী-বাওয়ালী-জেলেদের কাছে মৌমাছি থেকে বাঘ বহু বন্যপ্রাণীর প্রতিবাদের গল্প জানা যায়। মানুষ কর্তৃক জলজ বাস্তুতন্ত্র দখলের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাকালুকি হাওরের পরিযায়ী পাখিরা বছর বছর প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদ জানিয়ে তারা আর পূর্বস্থলে ফিরে আসে না। পাখিদের প্রতিবাদ নিয়ে একটি বিরল চাকমা লোককাহিনি আছে। উহ্ আং এবং ধুধু আং নামের পাখি ছিল। আসলে একটাই হুতুম পেঁচা দুই ঋতুতে দুইভাবে ডাকত বলে এই নাম। বর্ষাকালে কাঁকড়ার গর্তের সামনে গিয়ে ধুধু করে ডাকত। শীতের রাতে উহ্ করে করুণ সুরে বিলাপ করত। এক পাহাড়ি গ্রামে এমন এক রাতে মা তাঁর শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। উহ্ উহ্ বিলাপ শুনে ভাবলেন কেউ বিপদে পড়েছে। যেই দরজা খুলেছেন তখনি উহ্ আং পাখি এসে শিশুর দোলনায় বসল। মা ভাবলেন পাখিটি শিশুটিকে তুলে নিতে পারে। তাই বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে পাখিকে মেরে ফেললেন। পাখিটি মরল কিন্তু তার প্রতিটি পালক থেকে এক একটি প্রতিবাদী উহ্ পাখির জন্ম হলো। পাখিরা তাদের কংকাল করে দিল। হাতি ও সাপের প্রতিবাদ নিয়ে বহু মিথ প্রচলিত আছে দেশের নানাপ্রান্তে। রেমা-কালেঙ্গাতে শুনেছি ময়নাবিলের ময়না শকুনেরা দল বেঁধে প্রতিবাদ করেছিল। চান্দারবিলে একবার কই মাছের ঝাঁকের এক প্রতিবাদী গল্প শুনেছিলাম, কারেন্ট জাল দিয়ে বিলকে ডিমশূন্য করার প্রতিবাদ নাকি করেছিল মাছেরা। গাছেরা মন খারাপ করে, ফুঁসে ওঠে, বিহবল হয় এসব নানাভাবে প্রমাণিত। যদিও চলতি আলাপ সকল প্রাণ-প্রজাতির প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে কোনো বয়ান হাজির করছে না। গাছ কিংবা নদী কিংবা বন্যপ্রাণী কীভাবে প্রতিবাদ জানায় এটি এই আলাপের বিষয় না। কীভাবে মানুষের সমাজে, আরও প্রখরভাবে বলতে গেলে নিম্নবর্গের সমাজে কীভাবে প্রতিবাদের ভাষা গড়ে ওঠে চলতি আলাপ সেই অনুচ্চারিত বয়ান হাজিরের মানত করেছে। কারণ, অধিপতি ডিসকোর্সে সেই বয়ান অধরা ও অপর করে রাখা হয়। ব্যাটাগিরির জাত্যাভিমানি ঔপনিবেশিক বিবরণে সেইসব হদিশ গায়েব হয়ে যায়। এমনকি নিওলিবারেল জবরদস্তিকেও এখানে আমরা আলাপের বাইরে রাখতে পারি না। দেখা গেছে প্রতিবাদের ভাষা মূলত গড়ে ওঠে চারপাশের বাস্তুতন্ত্র, প্রাণ-প্রকৃতি এবং ঐতিহাসিক সামাজিক বোঝাপড়াকে জনপাঠ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। ঘুঘুদহ বিলের ভূমি আন্দোলন, পাহাড়ের কাপ্তাই বাঁধবিরোধী আন্দোলন, হাওরের ভাসান পানির আন্দোলন কিংবা উপকূলের চিংড়ি ঘেরবিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদের ভাষা তাই এক নয়। পরিবেশ, পরিস্থিতি, জনজীবনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্য এবং রাজনৈতিক বীক্ষা সবকিছুই প্রতিবাদের ভাষার গড়ন ও বিবরণে ভূমিকা রেখেছে। জোর করে চরাঞ্চলে বরেন্দ্রভূমির প্রতিবাদী ভাষা গড়ে উঠবে না। লালেং ভাষায় লুসাইদের প্রতিবাদী আওয়াজের ভিত্তি তৈরি হয় না। তো চলতি আলাপে ঐতিহাসিক কিছু কৃষক ও পরিবেশ সংগ্রামের উদাহরণ টানা হবে এবং বোঝার চেষ্টা করা হবে নিম্নবর্গের প্রতিবাদের ভাষা গড়ে ওঠবার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিসর ও শর্তসমূহে। এসব জনপরিসর ও ঐতিহাসিক শর্ত আড়াল করে, দাবিয়ে রেখে, প্রতিবাদী ভাষার জনবয়ান ইতিহাস জারি রাখা সম্ভব নয়। 
টংকের প্রতিবাদী হুংকার
আলাপের শুরুতেই টংকশহীদ রাশিমণি হাজংয়ের এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদী হুংকারের সাথী হওয়া যাক। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর থেকে ১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে তা বাতিল পর্যন্ত এই ভূখণ্ডে বহু কৃষি ও পরিবেশ সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে। ঔপনিবেশিক জুলুম ও কাঠামোগত কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জনবিদ্রোহগুলোর মূলশক্তি ছিল নিম্নবর্গের প্রতিবাদের ভাষা। হাতিখেদা, হুল, উলগুলান, টংক, তেভাগা, নানকার, ভানুবিল, হাতবন্ধ আন্দোলনগুলো আমাদের কী জানান দেয়? টংক হলো এক অন্যায় খাজনাপ্রথা। জমিনে ধান হোক বা না হোক খাজনা হিসেবে টংক শর্তের ধান জমা দিতে হতো। নেত্রকোনার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট,  শেরপুরের শ্রীবর্দী ও নালিতাবাড়ী অঞ্চলে প্রায় চার পর্বে টংকপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে। ‘ধান দেব, জান দেব না’, ‘টংক খাজনা বাতিল কর’, ‘টংকপ্রথা উচ্ছেদ কর’ এইসব প্রতিবাদী স্লোগান টংকের সময় বহুল উচ্চারিত হলেও রাশিমণির এক প্রতিবাদী হুংকার সব ছাপিয়ে টংক আন্দোলনকে এক জনবিদ্রোহে রূপ দিয়েছিল। 
১৯৪৬ সালের পহেলা জানুয়ারি তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির আয়োজনে সুসং দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে টংক আন্দোলনের নীতি ও কৌশল নিয়ে এক সমাবেশ হয়। রাশিমণি, কুমুদিনী, দিস্তামণি, ভদ্রমণি, অশ্বমণি, সমাপতী, যাদুমণি, বিপুলা, মালতী, সুরূপা, ললিত, রামনাথ, পরেশচন্দ্র, বিপিন, মঙ্গল, বাসন্তী, নবীন ও লংকেশ্বর হাজংরা সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এই সভার ব্যাপারে ব্রিটিশ পুলিশ আগে থেকেই নজরদারি করে। টংক সভা-সমাবেশ যাতে না হতে পারে এজন্য একইদিনে বিরিশিরিতে ব্রিটিশ পুলিশ ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনী’ সশস্ত্র ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজং ও তাঁর তিন ভাই রাজেন্দ্র হাজং, ইসলেশ্বর হাজং এবং গজেন্দ্র হাজং এবং হাজং ললিত রায় এবং মণি সিংহদের আটক করা। এক মাস পুলিশ গ্রামে গ্রামে টহল দেয়। যখন-তখন হাজংদের ঘরে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে। মাচা থেকে ফসল নিয়ে যায়। কিন্তু টিলা-পাহাড় ও সীমান্ত নদীময় এলাকায় টংকবিপ্লবীদের গোপন আস্তানা ব্রিটিশ পুলিশ খুঁজে পায়নি। ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বিরিশিরি থেকে সিমসাং নদী পাড়ি দিয়ে বহেরাতলী গ্রামে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল লংকেশ্বর ও তার ভাইদের ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কুমুদিনীদের বাড়ি আক্রমণ করে। লংকেশ্বরকে না পেয়ে আক্রমণকারীরা কুমুদিনীকে টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। কুমুদিনী এর প্রতিরোধ করেন। পুলিশ তাঁকে যৌন নিপীড়ন করে। সশস্ত্র বাহিনীর এই যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে গ্রামব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হাজং মাতা রাশিমণি হাজং। হাজং রাওয়ে (ভাষায়) রাশিমণি ডাক দেন,‘ .

.. ময় তিমাদ, তিমৗদলৗ মান ময় রুক্ষা কুরিব না-তে মরিব, তুরা তুমলা নীতি নিয়ৗ বুইয়ৗ থাক’। এর বাংলা মানে এরকম হতে পারে, ...আমি একজন নারী, নারী হয়ে নারীর মান রক্ষা করব, না হয় মরব, তোমরা তোমাদের নীতি নিয়ে বসে থাক। ওই দিনই ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রাশিমণি, দিস্তামণি, বাসন্তি হাজংসহ প্রায় ১২ জন টংকবীর। রাশিমণির এই ‘ময় তিমাদ’ হাজং সমাজে এমন এক প্রতিবাদের ভাষা হাজির করেছিল, যা সমাজের সর্বস্তরে সকল পরিবারের ভেতর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে। মানুষ নিজেকে রাজনৈতিকভাবে পাঠ করার ব্যাকরণ খুঁজে পায়, সর্বব্যাপী যোগাযোগ ও ঐক্য গড়ে তোলার শক্তি ধারণ করে। যে প্রতিবাদের ভাষা টংক আন্দোলনে উচ্চারিত সকল স্লোগান ছাপিয়ে জনতাকে ঐতিহাসিকভাবে মুখর করে তোলে। 
হুলের প্রতিবাদী গিরা
১৮৫৫ সালে ভগনাডিহি গ্রামের ফুলমণি, সিধু, কানহু, চাদ, ভায়রো, কেষ্ট, বলরাম, জান মুরমুদের নেতৃত্বে উপনিবেশ জুলুমের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে হুল বা সাঁওতাল বিদ্রোহ। ইতিহাস গ্রন্থন ও পরিবেশনের বাহাদুরি কায়দা হুলের বয়ানে নিম্নবর্গের প্রতিবাদের ভাষাকে আড়াল করে একে মিথ ও মহান বানিয়ে রাখে। অধরা ও অচেনা। জানা যায়, জুলুমের বিরুদ্ধে ফুলমণিরা জাহেরথান থেকে শক্তির আহ্বা পেয়েছিলেন। সাঁওতাল সমাজে আদি সারিসারনা দর্শন বিশ্বাসীরা জাহেরথানের মাধ্যমে পবিত্র জঙ্গল সুরক্ষা করেন। বিশ্বাস করেন এসব পবিত্র জঙ্গলে প্রকৃতির রক্ষক সিঙবোঙ্গা ও মারাংবুরো থাকেন। ফুলমণিরা জাহেরথানে লড়াইয়ের শক্তি ও অনুমতি প্রার্থনা করেন। জাহেরথান ও গ্রামের মৗঞ্জহি থান থেকে তারা হুলের গিরা পেয়েছিলেন। সাঁওতাল সমাজে গিরা মানে হলো ধর্মীয় আহ্বান, জনতার মুক্তির আহ্বান। এই গিরার আহ্বানই ফুলমণিদের হুলের প্রতিবাদী ভাষা নির্মাণে শক্তি দিয়েছিল। হুলের গিরাই ছিল সংগ্রামের গণইশতেহার এবং রণনীতি ও রণকৌশল। তারা গ্রামে গ্রামে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য কাজে নামেন এবং জানিয়ে দেন প্রকৃতির ঐতিহাসিক গিরা বা লড়াইয়ের আহ্বান। নারী-পুরুষেরা শাল-পলাশের লাঠি তৈরি করেন, তীর-ধনুক মজবুত করেন, ধামসা-মাদলে শান দেন। চারধারের যাপিত জীবনের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া থেকেই গড়ে ওঠে হুলের প্রতিবাদের ভাষা। মুখের স্লোগান থেকে শুরু করে নিজস্ব অস্ত্র কিংবা সংগ্রামী কৌশল। 
জ্বলি ন উধিম কিত্তেই
হাজং সমাজে নানাধরনের গান, গল্প, আখ্যান ও গীতিকবিতা আছে। টংক আন্দোলনের গানকে বলে ‘টেংলা গাহেন’। হাওরাঞ্চলের ধামাইল, উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া, বরেন্দ্রর গম্ভীরা, চাবাগানের টুসুসহ দেশজুড়ে বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আঙ্গিক প্রতিবাদ প্রতিরোধের জনবয়ান জারি রেখেছে। একইসাথে বহু কবিতা, গল্প, গান, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, সিনেমা, প্রামাণ্যচিত্র, প্রামাণ্য প্রতিবেদন, গবেষণাকর্ম, শিল্পকর্ম ও বহুবিধ পরিবেশনা আঙ্গিকের ভেতর দিয়ে টগবগে প্রতিবাদের ভাষা বহমান আছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রতিবাদী কার্টুন, বাহাস, দেয়াল লিখন, পোস্টার, লিফলেট, গ্রাফিতি। দেখা গেছে এসব প্রতিবাদী ভাষা যখন মাতৃভাষার বয়ান ও নিম্নবর্গের বিবরণে হাজির হয় তা জনপরিসরকে ধারণ করে এবং বহুস্বরকে যুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করে। ভূমি দখল, খুনখারাবি, লুণ্ঠন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, পরিবেশ-গণহত্যা, ভাঙচুর, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ থেকে কর্তৃত্ববাদী শাসন ক্ষমতার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সকল প্রতিবাদী ভাষা সর্বস্তরে সর্বজনে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। যোগাযোগধর্মী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ সালে শেষে হওয়া ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে আদিবাসীদের ৪০টি মাতৃভাষা আছে। এর ভেতর কন্দ, খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও লালেং–এ ১৪টি আদিবাসী মাতৃভাষা বিপন্ন। দেশের সকল মাতৃভাষার প্রতিবাদী আওয়াজগুলো আমরা এখনও জানি না। কোথাও গুরুত্ব দিয়ে নথিভুক্তও নয়। দেবপ্রিয় চাকমা চাঙমা বর্ণমালা ও ভাষায় ফেবো নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। লোগাং গণহত্যার বিরুদ্ধে উপন্যাসটি প্রতিবাদ হাজির করেছিল চাঙমা বর্ণমালার মাধ্যমেই। জুলাই ছাত্র-শ্রমিক-জনতা অভ্যুত্থানেও আমরা দেখেছি জেন-জি নতুন প্রজন্মের ভেতর দিয়ে গ্রাফিতির প্রতিবাদী ভাষা; যা সর্বশ্রেণির সর্বস্তরের জনআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছে। প্রতিবাদের ভাষা তাই স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র-প্রতিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি এবং সংস্কৃতির ঐতিহাসিকতাকে ধারণ করেই গড়ে ওঠে জনআওয়াজ এবং জনবয়ান হিসেবে বিস্তৃত ও বিকশিত হয়। আলাপখানিকে আমরা মৃত্তিকা চাকমার ‘জ্বলি ন উধিম কিত্তেই’ বা ‘জ্বলে উঠব না কেন’ কবিতাটি দিয়ে শেষ করছি। কবির লেখা চাঙমা কবিতাটির বাংলা করলে দাঁড়ায়, ...রুখে দাঁড়াবো না কেন!/ যা ইচ্ছে তাই করবে-/বসত বিরানভূমি/নিবিড় অরণ্য মরুভূমি,/সকালকে সন্ধ্যা/ফলবতীকে বন্ধ্যা।/রুখে দাঁড়াবো না কেন!/যা ইচ্ছে তাই করবে-/জন্মভূমে পরবাসী/ নারীকে ক্রীতদাসী,/দৃষ্টিকে অন্ধ/সৃষ্টিকে বন্ধ!/অবহেলা অপমানে ক্রোধ/ধমনীতে তুমুল রক্তের স্রোত/আঘাতে আঘাতে ভাঙে বিঘ্ন,/চেতনার সমুদ্রে তারুণ্যে তীক্ষ্ণ।/-আমার সম্পূরক একমাত্র আমিই/রুখে দাঁড়াবো না কেন। চাপিয়ে দেয়া কোনো বিকল্প দিয়ে প্রতিবাদের ভাষা বিচ্ছুরিত হয় না, একমাত্র আমাদের যাপিত জীবনের রাজনৈতিকতা থেকেই বিঔপনিবেশিক প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হয়। 

লেখক


গবেষক
পরিবেশবিদ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ক শ বর কর ছ ল জ র কর পর ব শ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এখন পর্যন্ত জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের ৬২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা ওবায়দুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলককে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ সোমবার এই আদেশ দেন। জুনাইদ আহ্‌মেদের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, এ নিয়ে তাঁর মক্কেলের মোট ৬২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলো।

এ মামলায় জুনাইদ আহ্‌মেদকে আজ সকালে কারাগার থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলায় তাঁকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ।

আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডের আবেদন নাকচের আরজি জানানো হয়।

আদালত শুনানি নিয়ে জুনাইদ আহ্‌মেদকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এ ছাড়া আজ বিভিন্ন মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ