কমলগঞ্জে শিমুলের সৌন্দর্যে সেজেছে প্রকৃতি
Published: 20th, February 2025 GMT
কমলগঞ্জে গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে ফুটছে শিমুল ও পলাশ ফুল। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই আগুন রাঙা শিমুল ফুল মন কাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। বাতাসে ভাসছে আনন্দ-আভা। গাছে গাছে সবুজ পাতা, মুকুল, ফুল আর কোকিলের কুহুকুহু ডাক মনে করিয়ে দেয় বসন্তের বার্তা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার প্রধান সড়কে কিছু পলাশ-শিমুল রয়েছে। এসব গাছের ফুল প্রকৃতির শোভা বাড়াচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গুটি কয়েক শিমুল গাছে ফুল দেখা গেলেও বর্তমানে কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তা।
প্রকৃতিতে শিমুল গাছ এমনিতেই জন্মায়। একসময় শিমুল গাছ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিল। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে তৈরি
করত লেপ, তোশক, বালিশ। গ্রামের দরিদ্র মানুষ শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করত। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব হারানোয় ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শিমুল ও পলাশ গাছ।
কমলগঞ্জ সরকারি স্কুলের বাংলার শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বসন্ত মানেই শিমুল ও পলাশ ফুল। এবারের বসন্ত ঘুরে আসতেই কমলগঞ্জ উপজেলায় শিমুল গাছগুলোতে আগুন রাঙা নতুনরূপে সেজেছে প্রকৃতি।
কমলগঞ্জের লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, শিমুল ফুল না ফুটলে যেন বসন্ত আসে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিপর্যয়ের মুখে চা উৎপাদন
নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর প্রাকৃতিক বৈরিতায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলার চা উৎপাদন। চলতি মৌসুমেও টানা পাঁচ মাস ধরে অনাবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট খরায় মৌলভীবাজারের বাগানগুলোতে চায়ের উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। দু’একদিন ধরে হালকা বৃষ্টি হলেও তাতে খরা কাটছে না। তীব্র তাপদাহে চা গাছ ধূসর বর্ণ হয়ে গেছে। পাতা পুড়ে যাচ্ছে।
জেলার ৯২টি চা বাগানের বেশির ভাগে সেচ ব্যবস্থা না থাকায় কচি চায়ের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খরার কারণে নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে না। ফলে এ বছর চা উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন চা-শিল্পসংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। দীর্ঘ খরায় তাপমাত্রা বেশি থাকায় এবং পর্যাপ্ত শেড ট্রি না থাকায় জেলার প্রায় সব বাগানে চা গাছ ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও পাতা ঝরে মরা গাছে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে ভরা চা উৎপাদন মৌসুমে চা গাছে নতুন কুঁড়ি তুলনামূলক কম গজাচ্ছে। ফলে পাতা কর্তন কম হচ্ছে।
কমলগঞ্জের শমশেরনগরের আলীনগর চা বাগানে বসবাস করা কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরী জানান, তার দীর্ঘ জীবনে এতো লম্বা খরা দেখেননি। প্রাকৃতিক এ বিপর্যয় থেকে রক্ষায় চা শ্রমিকরা কলস ভরে পানি বাগানে ছিটাচ্ছে। সব বাগানের শ্রমিকরা নিজ নিজ ধর্মীয় মতে আচার-অনুষ্ঠান করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গল অফিস ও বিভিন্ন বাগান সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বৃষ্টি হয়নি। জানুয়ারি-মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত চা বাগানের পরিচর্যার কার্যক্রম চলে। তখন সপ্তাহে ২-৩ দিন পাতা কর্তন করা হয়। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। এবারে অনাবৃষ্টির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগও চা উৎপাদন হচ্ছে না।
গত বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ কেজি। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি। এর মাঝে জানুয়ারি মাসে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কেজি। ফিনলে নিয়ন্ত্রণাধীন একটি চা বাগানের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চা উৎপাদনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, শ্রমমূল্য, কীটনাশক, সারসহ সব কিছুর দাম বাড়ছে তবে চায়ের বাজারে মূল্য কমছে। বিশেষ করে এবারের খরায় চা উৎপাদনে ধস নেমেছে। উৎপাদন মূল্য থেকে ৪০-৫০ টাকা কমমূল্যে প্রতি কেজি চা বিক্রি করতে হচ্ছে। ৮০ হেক্টর চা আবাদ ভূমিতে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
বাংলাদেশি চা সংসদ সিলেট শাখার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, দীর্ঘ খরার ফলে ছড়া-খালের পানি শুকিয়ে গেছে। চা গাছে পানি দেওয়া যাচ্ছে না। এতে কচি চায়ের পাতা ২০ থেকে ৩০ ভাগ ও পুরোনোগুলো ১০ ভাগের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার ভর্তুকি দিলে চা শিল্প বিকাশে সহায়ক হতো।
বিটিআরআই সূত্র আরও জানায় জেলার করিমপুর, জেরিন, মধুপুর, গাজীপুর, মির্জাপুরসহ বেশ কিছু চা বাগানে হেক্টরপ্রতি হাজার কেজির বেশি চা উৎপাদন করা হয়। তবে জেলার নিউ সমনবাগ, দেউড়াছড়া, ফুলতলা, হোসনাবাদসহ অনেক বাগানে হেক্টরপ্রতি ৫০০ কেজির নিচে চা পাতা উৎপাদন হওয়ায় অনেক সময় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় না।
বিটিআরআই শ্রীমঙ্গল দপ্তরের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট কর্মকর্তা (পিডিইউ) এ. কে. এম রফিকুল হক বলেন, খরার কারণে চা গাছ ধূসর বর্ণ ধারণ করে কিছু গাছ মরে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে চাশিল্প রক্ষায় বিভিন্ন সময় দায়িত্বশীলদের সদিচ্ছার অভাবের কথা জানা গেছে; যার একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিকিল্পনা কার্যনীতি। বাংলাদেশ চা বোর্ডের সর্বশেষ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্ভাব্য প্রধান অর্জনগুলোর মাঝে দেখা যায়, চা আবাদের উন্নয়নে বিভিন্ন ভ্যালিতে সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক কর্মশালা, বার্ষিক প্রশিক্ষণ কোর্স আর ৮৫টি উপদেশমূলক ভ্রমণের মতো কর্মসূচির বিবরণ। যার কোথাও প্রত্যক্ষভাবে চা শ্রমিক ও বাগানের উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
সরকারি মালিকানাধীন এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত চা কোম্পানি ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সমাপ্তিতে কোম্পানিটির লোকসানের অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ১১৯ কোটি টাকায়। শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১০৭ টাকা ৪৯ পয়সা। বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে কোম্পানির কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম শুরু হয়।