দিনের অংশে যেমন তেমন; সন্ধ্যা গড়ানোর পর থেকে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে পড়ে মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া রেলস্টেশন এলাকা। রাতের স্টেশনে এক প্রকার আধিপত্য চলে অপরাধীদের। বিশেষ করে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা সর্বক্ষণ থাকেন বিপদের আশঙ্কায়।
দীর্ঘ সময় ধরে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ রেলস্টেশনটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই স্টেশন এলাকায় ঘটছে চুরি, ছিনতাই ও লুটের মতো অপরাধ। এতে করে বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপত্তা। স্টেশনে কর্মরত ব্যক্তি, যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক বছরে শতাধিক অপরাধকাণ্ড ঘটেছে এই স্টেশনসংলগ্ন এলাকায়; যার অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিনতাই ও লুটের শিকার হয়েছেন প্ল্যাটফর্ম এলাকায়।
ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেনগুলো মাধবপুরের নোয়াপাড়া স্টেশনে আসে; যার কারণে দিন-রাত যাত্রীর আনাগোনা থাকে এ স্টেশনে। এমন ব্যস্ত একটি রেলস্টেশনে যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে স্থানীয় অপরাধ চক্রের সদস্যদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে। এ ছিনতাই ও চোরচক্রের অধিকাংশ সদস্যই কিশোর ও উঠতি বয়সের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলস্টেশনে কর্মরত এক ব্যক্তি জানান, চক্রের সদস্যরা সাধারণ যাত্রীর মাঝে দলবদ্ধ বা বিচ্ছিন্নভাবে বিচরণ করে। যাত্রীরা তাড়াহুড়া করে ট্রেনে ওঠার সময় তাদের ব্যাগ, অলংকার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে তারা। আবার প্ল্যাটফর্মের কোনো অংশে কোনো যাত্রীকে পেলে সংঘবদ্ধভাবে ঘিরে ধরে সবকিছু লুট করা হয়। বিশেষ করে প্ল্যাটফর্মের পূর্বাংশে এসব ঘটনা বেশি ঘটে। সে অংশের সঙ্গে লাগোয়া নোয়াপাড়া চা বাগান। ছিনতাইকারীরা তাদের কাজ সেরে দ্রুত বাগানের ভেতর ঢুকে পড়ে। পরে বাগানের পথ ধরে চলে যায় নিজেদের গন্তব্যে। যার কারণে তাদের ধরা প্রায় অসম্ভব। তাদের পিছু নিয়ে বাগানে প্রবেশ করলে আরও বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না।
নিয়মিত এই স্টেশন ব্যবহার করে যাতায়াত করেন স্থানীয় এমন কয়েকজন যাত্রী জানান, উঠতি বয়সের ছেলেরা অধিকাংশই মাদকাসক্ত। প্রায় প্রতিদিন এই স্টেশনে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছেই। এরপরেও যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন কর্তৃপক্ষ তাদের অসহায়ত্বের কথা জানান। নোয়াপাড়া রেলস্টেশন মাস্টার মনির হোসেন জানান, অনেক বছর ধরেই এ স্টেশনে তিনটি আন্তঃনগরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটের ট্রেন যাত্রাবিরতি দেয়। যাত্রীও বেশ ভালোই। এই চুরি-ছিনতাইয়ের কারণে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এখানে সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই; যার কারণে স্টেশন এলাকায় নজরদারি কঠিন। সেই সঙ্গে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তা পর্যবেক্ষণ ও জড়িতদের শনাক্ত করার মতো ব্যবস্থাও নেই। এসব অপরাধ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া গেলে রেলস্টেশনের পরিবেশ স্বাভাবিক হতো। এ ব্যাপারে কাজ করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ।
নোয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আহমেদ সম্রাট জানান, নোয়াপাড়া রেলস্টেশনে যাত্রী সাধারণের কোনো নিরাপত্তা নেই। অপরাধীদের ব্যাপারে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।
নোয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আতাউল মোস্তফা সোহেল জানান, একটি চক্র নোয়াপাড়া রেলস্টেশনে ছিনতাই-চুরির মতো অপরাধ করছে। তাদের উৎপাতে সাধারণ যাত্রী এবং সেখানকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। 
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নোয়াপাড়া রেলস্টেশন এলাকার ছিনতাইকারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ চক্রের বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ত র ছ উন প ল য টফর ম এল ক য় ন এল ক অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ইমোতে প্রেম: চট্টগ্রামে তরুণী খুন, প্রেমিক গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক সন্তানের জননী টুম্পা আক্তারের সাথে ইমো অ্যাপে প্রেম গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে বসবাসকারী বেকার ইব্রাহিম হাওলাদারের। এই প্রেমের সূত্র ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যান টুম্পা। বিয়ে না করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘি এলাকায়। 

তবে সুখের হয়নি সে জীবন। অন্য পুরুষের সাথে টুম্পার সম্পর্ক থাকতে পারে। সবসময় এমন সন্দেহ করতেন ইব্রাহিম। সেই সন্দেহ থেকেই একদিন টুম্পার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ইব্রাহিম। 

সম্পুর্ণ ক্লু লেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে ঘাতক ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। 

শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন উপ-কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান।

মাহবুব আলম খান জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বন্দর থানার ওয়াসিম চৌধুরী পাড়া পেলাগাজীর বাড়ি আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচ তলার একটি বাসা থেকে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে একই এলাকার একটি দোকানের ক্যাশমেমো থেকে পাওয়া নম্বর ধরেই এগোয় তদন্ত। এরপরই শনাক্ত হয় ইব্রাহিম; যিনি চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন।

পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমকে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় বাসের ভেতর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে উদঘাটিত হয় খুনের রহস্য।

পুলিশ জানায়, ইমোতে প্রেমে সম্পর্কের সূত্র ধরে টুম্পা ও ইব্রাহীম বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলেন। ভিকটিম টুম্পা আক্তার একজন গার্মেন্টসকর্মী। তার পরিচয় মূলত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তারের পরই জানতে পারি। তারা বন্দর এলাকার ওই বাসায় লিভ টুগেদার করত। কাগজে-কলমে তাদের বিয়ে হয়নি। দুজন ব্যক্তিকে স্বাক্ষী রেখে তাদের মুখে মুখে বিয়ে হয়।
টুম্পা আক্তার যখন কর্মস্থলে যেতেন ইব্রাহিম মোবাইল নিয়ে যেতে দিতেন না। মোবাইল বাসায় রেখে যেতেন। বাসায় রাখার পর অনেকসময় তার ফোনে পুরুষ কণ্ঠে কল আসত। ইব্রাহিমের সন্দেহ হয় তার কথিত স্ত্রীর আরও কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সন্দেহের জেরে তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। 

ঘটনার দিন এই বিষয় নিয়েই তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ইব্রাহিমের মাথার কাছে একটি শেলফে থাকা রশি দিয়ে টুম্পার গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই সময় টুম্পার বাচ্চাটি পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি ঘুম থেকে উঠলে তাকে একজন মহিলার কাছে দিয়ে ইব্রাহিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এ হতাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ