চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার ডিএমটিসিএল কর্মীদের
Published: 20th, February 2025 GMT
চাকরি বিধিমালার (সার্ভিস রুলস) দাবিতে কর্তৃপক্ষকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন না হলে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেট্রোরেল সেবা বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তারা। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, ডিএমটিসিএলের সরাসরি উন্মুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের জন্য জোরালো দাবি জানানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অদ্য ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ডিএমটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খসড়া চাকরি বিধিমালার ওপর কয়েক দফায় বিশদ আলোচনা করেন এবং খসড়া চাকরি বিধিমালার ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধন সাপেক্ষে অদ্য ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ হতে পরবর্তী ৩০ পঞ্জিকা দিনের (২২ মার্চ ২০২৫) মধ্যে আধুনিক ও বাস্তবসম্মত চাকুরিবিধিমালা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।’
সেখানে আরও বলা হয় ‘২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডে নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রেস রিলিজটির কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।’
বিজ্ঞপ্তিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ হতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্নভাবে মেট্রোরেল সেবা চলমান থাকবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন না করা হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০২৫ ত র খ প রণয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাসনাতের বক্তব্য ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’
আওয়ামী লীগের ‘রিফাইন্ড’ (সংশোধিত) একটি পক্ষকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে রাজি হতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে চাপ পাওয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ যে দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী সদর দপ্তর তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। শনিবার নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের এক বিবৃতিতে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে ১১ মার্চ বৈঠকটি হওয়ার কথা স্বীকার করা হলেও হাসনাত আব্দুল্লাহকে ‘ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগের’ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও এনসিপির আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন রূপে পুনর্বাসনের বিষয়ে সেনানিবাসের কাছ থেকে ‘ভারতের পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করা হয়েছে- শুক্রবার হাসনাত আব্দুল্লাহর এমন ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনাসদর। হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনা সদরের বিবৃতিতে। এছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশে আগস্টে যেই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তার সূচনা ঘটেছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হলে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রী সভায় ওই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত তিনজন ছাত্রনেতা দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরই একজন নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই দলে দুই আঞ্চলিক মুখ্য সমন্বয়কের পদ পান হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।
শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন ও ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলেন, সেনানিবাস থেকে ১১ই মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এক বৈঠকে তাদের এই নয়া আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে সমঝোতা ও সংসদের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তার পোস্টের পর ওই রাতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করেন, সেনানিবাসে তিনি যে বৈঠকটির কথা বলছেন, তা কি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে হয়েছিল কিনা। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি সরাসরি জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। হাসনাত বলেন, ‘আমিতো সেখানে ‘ক্যান্টনমেন্ট’ উল্লেখ করেছি, আপনারা কথা বলতে পারেন সেখানে।’
আরেকজন সাংবাদিক তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন কার উদ্যোগে বৈঠকটি হয়েছিল। জবাবে হাসনাত বলেন, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ও বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ছিল। এসব বিষয়ে “কথা বলার জন্য আমাদেরকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।” সংবাদ সম্মেলনের পর নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক আবারও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ‘বাইনারি’ বা হ্যাঁ-না জবাব দিতে রাজি হননি।
অপরদিকে নেত্র নিউজকে পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল; তবে ওই বৈঠক ছাত্রনেতাদের আগ্রহেই হয়েছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ই মার্চ সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি অ্যাডভাইজার তাদের সেনাসদরে আসার জন্য বলেন। অতপর ১১ মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।’
সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তা নেত্র নিউজ স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পৃথকভাবে নেত্র নিউজকে বলেছেন যে, ছাত্রনেতাদের আগ্রহ ও উদ্যোগেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি সেনা সদরের বক্তব্যে অস্বীকার করা হয়নি। সেখানে বলা হয়, আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ উঠে আসলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নিজের অভিমতের কথা ছাত্রনেতাদের জানান। বিবৃতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত নয় ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের সমন্বয়ে নতুন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ফলপ্রসু ও আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল মিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।’
আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্য সেনাপ্রধানের নিজস্ব অভিমত হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছাত্রনেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে। ‘প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি কোনক্রমেই তাদেরকে ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ করার ঘটনা নয়,’ যোগ করা হয় সেনাসদরের বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (মতো) প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সংগঠকদের ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন বা চাপ প্রয়োগ করছেন যা অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার বলে প্রতীয়মান (হয়)।’
সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাবাহিনী প্রধান ‘অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের’ মতো দেখতেন। তিনি (স্নেহবৎসল) পরিবেশে তাদের সঙ্গে নানা আলাপচারিতা করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের নতুন দল গঠনের শুভকামনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পথ চলার বিষয়ে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন।’ এছাড়াও পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি তাদের রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ ও অন্যান্য সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল দলের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেন, যোগ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার ১০ দিন পর ফেসবুকে হাসনাত আব্দুল্লাহর এই ধরনের অনভিপ্রেতকর পোস্ট দেওয়া সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়।’