বাকৃবিতে শেষ হলো রোটারিয়ানদের ৩৪তম প্রশিক্ষণ কর্মশালা
Published: 20th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদস্যদের ৩৪তম রোটার্যাক্ট ট্রেনিং ক্যাম্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনফারেন্স কক্ষে ওই কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশ থেকে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৬৪ এর ৩৪ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রতি বছরের মতো এবারো পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন, নেতৃত্বগুণ বিকাশ ও সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘প্রজন্মের সেতুবন্ধন, আগামীর নির্মাণ’ স্লোগানে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
ছয় দিনব্যাপী এ কর্মশালায় বেস্ট ক্যাম্পার হিসেবে মনোনীত হন রোটার্যাক্টর স্বপ্নীল মাহমুদ এবং রিয়া খাতুন। সেরা গ্রুপের পুরস্কার অর্জন করে অদম্য ৩৪ গ্রুপ এবং দ্বিতীয় হয় গ্রুপ ভিশনারিস।
গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের (জিটিআই) পরিচালক অধ্যাপক ড.
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো শহীদুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো আব্দুল আলীম, বাকৃবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো রফিকুল ইসলাম সরদার, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ড. মো মেহেরুল হাসান এবং কোর্স কো-অর্ডিনেটর মোজাম্মেলহক প্রমুখ।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “এ প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। যা দেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে আমি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখতে পাই। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানে কী পেলাম, কী হারালাম
বিদায়লগ্নে মহিমান্বিত রমজান মাস। আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা যে রমজান আমাদের কাছে এসেছিল, এখন আমাদের কাছ থেকে কী বার্তা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে তা ভেবে দেখা মুমিনের দায়িত্ব। রমজানে মহান আল্লাহ দয়া ও অনুগ্রহ করে আমাদের তাঁর নৈকট্য ও ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার যে অবকাশ দিয়েছিলেন তা কি আমরা আদৌ কাজে লাগাতে পারলাম, না কি অবহেলা আর অযত্নে কেটে গেল স্বর্ণপ্রসূ সময়টুকু? নিজের আমলের এই হিসাব গ্রহণকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় মুহাসাবা বা আত্মপর্যালোচনা ও আত্মজিজ্ঞাসা।
সুফি আলেমরা বলেন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের আত্মপর্যালোচনা অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনদের আত্মপর্যালোচনার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামীকালের জন্য (পরকাল) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হইয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১৮)
তাই মুমিনের আত্মভোলা হয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও উম্মতকে আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মপর্যালোচনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)
আরো পড়ুন:
মহিমান্বিত কদরের রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা
ঈদের কেনাকাটায়ও আসুক সংযম
ইসলামের মহান খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলতেন, ‘তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গ্রহণের আগেই তোমরা নিজেদের হিসাব গ্রহণ করো। তোমাদের আমলনামা ওজন করার আগেই তোমরা নিজেদের আমল ওজন করে দেখো। পরকালে হিসাব দেওয়ার চেয়ে পার্থিব জীবনে হিসাব দেওয়া তোমাদের জন্য সহজ। তোমরা সেই দিনের প্রস্তুতি গ্রহণ করো যেদিন তোমাদের জীবনের সব কিছু পেশ করা হবে এবং কোনো কিছু গোপন থাকবে না।’ (মুসনাদুল ফারুক : ২/৬১৮)
পবিত্র রমজানের বিদায়লগ্নে মুমিনের জীবনে আত্মজিজ্ঞাসা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। কেননা কোরআন ও হাদিসে যেমন রমজান মাসে আল্লাহর দয়া ও দান অবারিত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে, তেমনি তাতে যেসব মানুষের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে যারা রমজান মাসেও আল্লাহবিমুখ। যেমন নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
চিন্তার বিষয় হলো, আমরা আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করাতে পারলাম কি না? পাপ মার্জনার জন্য যতটা বিনীত হয়ে ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাওবা করতে হয় তা আমরা করেছি কি না? গুনাহ মাফের শর্ত হলো গুনাহ পরিহার করা। রমজানে আমরা গুনাহ ত্যাগ করেছিলাম কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই যে মাস (রমজান) তোমরা লাভ করেছ তাতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। আর হতভাগ্য ব্যক্তিই কেবল তার কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৩৪)। সুতরাং রমজানের বিদায়লগ্নে মুমিনের আত্মজিজ্ঞাসার বিষয় হলো, কদরের রাত আমাদের নসিব হলো কি না? হলে কি আমরা লাভবান হলাম নাকি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলাম?
রমজানের শেষভাগে আমরা যেন রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা ভুলেই যাই। আমরা বাজার-সদাই, কেনাকাটা ও আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে যাই। অথচ পূর্বসূরী আলেমরা রমজানের শেষভাগে আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হতেন। রমজানের শেষভাগে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘আমাদের মধ্যে কার রোজা কবুল হলো, আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাব এবং কে বঞ্চিত হলো তাঁর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করব। হে সৌভাগ্যবান, যার রোজা কবুল হয়েছে তোমাকে অভিনন্দন এবং হে হতভাগা, যার রোজা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে আল্লাহ তোমার পাপ মার্জনা করুন।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২১০)
রমজান মাসে সিয়াম সাধনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহভীতি অর্জন করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রমজান মাসের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরীদের ওপর যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
সুতরাং রমজানের শেষভাগে এসে একজন মুমিনের অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে, সে কতটা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারল। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা করার পর যদি মুমিনের অন্তরে আল্লাহর ভয় তথা পাপের ব্যাপারে ভয় এবং পুণ্যের প্রতি আগ্রহ না তৈরি হয়, তবে তার রোজাকে ফলপ্রসূ বলার সুযোগ আছে কি?
পবিত্র রমজানের একটি উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির স্বভাব-চরিত্রের উন্নতি। ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের ভেতর যেসব দোষ-ত্রুটি রয়েছে সেগুলো থেকে মুক্ত হওয়া। যেমন পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা, বিদ্বেষ, বিবাদ ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
মুমিনের আত্মজিজ্ঞাসা হলো আমাদের স্বভাব-চরিত্র কতটা কলুষমুক্ত হলো। যদি সেটা নাই হয়, তবে আমরা তো সেসব মানুষের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাম যাদের ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কত রোজাদার এমন, যাদের রোজা ক্ষুধা-পিপাসা ছাড়া আর কিছুই না এবং কত তাহাজ্জুদ আদায়কারী এমন, যাদের তাহাজ্জুদ রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছু না।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২০১৪)
প্রশ্ন হলো, মুমিন কেন আত্মপর্যালোচনা করবে? উত্তর হলো, মুমিনের আত্মপর্যালোচনার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহমুখী হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করো তোমাদের কাছে শাস্তি আসার আগে।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৪)
তাই আসুন! পবিত্র রমজানের যতটুকু সময় অবশিষ্ট আছে সে সময়টুকুতে আমরা যেন আল্লাহমুখী হয়ে থাকি এবং রমজানে যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে সে ব্যাপারে অনুতপ্ত হই এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করি। আগামী দিনে ভালো কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করি। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘(এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী, অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত, বিরত হও।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
শাহেদ//