বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ২২৮ ভারত: ৪৬.৩ ওভারে ২৩১/৪ ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।

তামিম ইকবালের একটা ভিডিও মোবাইলে মোবাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ভিডিওতে দেখা গেছে, ফোনে স্কোর দেখতে দেখতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ঢুকছেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক। হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। কেন, সেটিও বলে দেওয়া যাক। তামিম যখন মোবাইল খুললেন, ততক্ষণে বাংলাদেশের ৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটও পড়ে গেছে। সেটা দেখেই তাঁর ওই প্রতিক্রিয়া।

আরেকটা ঘটনা। নবম ওভারে পরপর ২ বলে তানজিদ হাসান আর মুশফিকুর রহিমকে আউট করে দিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল। এর একটু পর প্রেসবক্সের নিচে গিয়ে দুই দুবাইপ্রবাসী বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কথোপকথন কানে এল। বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে তাঁদের ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ হুবহু তুলে না ধরাই ভালো। শুধু সারমর্মটা বলা যাক। তাঁরা দুজনই একমত যে বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যানদের ক্রিকেট খেলা বাদ দিয়ে অন্য কোনো কাজ খুঁজে নেওয়া উচিত। সম্ভাব্য বিকল্প একটি পেশার কথাও তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, সংগত কারণে সেটিও উহ্য রাখা হলো।

বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরেছে ৬ উইকেটে। তানজিম হাসানকে পুল শটে ছক্কা মেরে ২১ বল বাকি থাকতে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন লোকেশ রাহুল (৪১*)। সেঞ্চুরিতে দলের জয় সহজ করে তোলা শুবমান গিল অপরাজিত ১০১ রানে। তাসকিন আহমেদের বলে রোহিত শর্মার আউটে ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেও আরেক ওপেনার ফিরেছেন ম্যাচ শেষ করে। ১৪৪ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ার পর ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গিল-রাহুলের।

শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে যে দুটি প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হলো, সেগুলো হয়তো পরে কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে নিয়েছে তাওহিদ হৃদয়ের লড়াকু সেঞ্চুরি আর তাঁকে সঙ্গ দেওয়া জাকের আলীর ফিফটি (৬৮) থেকে। নবম ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩তম ওভার পর্যন্ত খেলে ১৫৪ রানের জুটি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যা ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ জুটি।

তবে এই জুটির পেছনে আছে সংগ্রামের এক গল্প। ব্যক্তিগত ৮৬ রানের সময় পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হৃদয়। কখনো ব্যথায়, কখনো ভারসাম্য হারিয়ে এরপর পড়েছেন আরও তিনবার, যার দুবারই ৯০ পার হয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসটাকে হৃদয় তবু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই নিয়ে যান শেষ ওভার পর্যন্ত। ১১৪ বলে সেঞ্চুরি করার পর ১১৮তম বলে হৃদয় ওই ১০০ রানেই আউট হন হর্ষিত রানার করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলে। শেষ পর্যন্ত ওই সেঞ্চুরি শুধু একটু মানই বাঁচাতে পেরেছে বাংলাদেশের।

তার আগে ব্যক্তিগত ২৩ রানে মিড অফে হার্দিক পান্ডিয়ার হাত থেকে একবার ক্যাচ পড়েছে হৃদয়ের। উইকেটে এসে প্রথম বলে জীবন পেয়েছিলেন জাকেরও। পরপর ২ বলে তানজিদ ও মুশফিককে ফেরানো অক্ষর প্যাটেলের হ্যাটট্রিক বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলে দেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ এসেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘোষণা দিয়ে। পরশু অধিনায়ক নাজমুল হোসেন এমনও আশা প্রকাশ করেছিলেন, দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে বড় কিছু ঘটিয়ে দিতে পারলে ঘোষণা বাস্তবায়নে বড় একটা পদক্ষেপ দিয়ে ফেলবে বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডির পরের দুই ম্যাচে সেটি জোগাবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। তবে বড় লক্ষ্যের ভারত ম্যাচে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ও রকম ভয়ংকর হতে দেখার পর ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী থাকা একটু মুশকিলই।

বাংলাদেশের ইনিংসে এক মোহাম্মদ শামিই ধাক্কা দিয়েছেন পাঁচবার। ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন এই ভারতীয় পেসার। ফিরে এসে মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট। প্রথম আঘাত ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে, ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড ওপেনার সৌম্য সরকার। রানার করা পরের ওভারে অধিনায়ক নাজমুলও নেই। শুরুর দিকে বাংলাদেশের ব্যাটিং বলতে ছিল ওপেনার তানজিদ হাসানের ২৫ বলে ২৫ রান। চার বাউন্ডারির দুটি মেরেছেন শামির করা তৃতীয় ওভারে পরপর ২ বলে।

অন্যদিকে উইকেট পড়তেই থাকল। ২৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর যখন হৃদয় এসে পড়া থামালেন, তখন আবার তানজিদ নিজেই পড়ে (পড়ুন আউট) গেলেন। পরের বলে কট বিহাইন্ড মুশফিকও। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ, খেলা হয়েছে দুবাই স্টেডিয়ামের এমন এক উইকেটে, যেটিতে আইএল টি-টোয়েন্টিরও কোনো ম্যাচ হয়নি। বোলারদের জন্য একেবারেই কিছু না থাকা এই ‘ফ্রেশ উইকেটে’ও বাংলাদেশের শুরুর ভঙ্গুর ব্যাটিং চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে বৈকি।

আধুনিক ক্রিকেটে ওয়ানডে জয়ের মূল শর্তই হলো হয় বড় রান করো, না হয় বড় রান তাড়া করতে শেখো। রানটাকে তিন শ পার না করলে বা তিন শর কাছাকাছি নিতে না পারলে জয়ের স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়ি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করা কারও সেঞ্চুরিতে বীরত্ব মিশে থাকলেও দলকে সেটা জয়ের তিলক পরাতে পারে তখনই, যখন অন্যদের ব্যাটেও রানের প্রবাহ থাকে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেই জায়গাটাই মরুভূমির মতো হয়ে থাকল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উইক ট প প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না কামাল মজুমদার, পেলেন চেয়ার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর কাফরুলে তরিকুল ইসলাম রুবেল হত্যা মামলায়  
সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (২৪ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালত এ আদেশ দেন। একই মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এর আগে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। 

আদালতের কাঠগড়ায় বসার জন্য কামাল আহমেদ মজুমদারকে কাঠের চেয়ার দেওয়া হয়। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইশতিয়াকের আদালতের কাঠগড়ায় তাকে তোলা হয়।  

সকাল ১০টা ৮ মিনিটে তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এসময় হেলমেট, বুলেট প্রুভ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরানো ছিল। আসামিদের মধ্যে কামাল আহমেদ মজুমদারকে দুই পুলিশ সদস্য ধরে আদালতে তোলেন। আদালতে তোলার পর তার হেলমেট খোলা হয়। তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম কামাল আহমেদ মজুমদারকে বসতে দেওয়ার জন্য চেয়ার দিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেন। তখন আদালতের এক কর্মচারী আতিকুল ইসলামের কাছে কাঠের চেয়ার দেন। এরপর ১০ টা ১৩ মিনিটের দিকে চেয়ারে বসেন কামাল আহমেদ মজুমদার। পুরা শুনানি চলাকালে তিনি চেয়ারে বসে ছিলেন। মাঝেমধ্যে কাঠগড়ার লোহার বেরিকেডে মাথা নিচু ছিলেন। এসময় তার বাম হাতে হাতকড়া ছিল। শুনানি শেষে পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালত থেকে আবার হাজতখানায় নেওয়া হয়। 

গত ১৮ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একাধিক মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

ঢাকা/মামুন/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ