তাওহীদ-জাকেরের লড়াই ছাপিয়ে গিলের সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়
Published: 20th, February 2025 GMT
প্রত্যাশিত ফলটাই পেল ভারত। বাংলাদেশ কতটা লড়াই করতে পারে সেটাই ছিল দেখার। নিশ্চিতভাবে সেখানেও ফেল। ভারতের ৬ উইকেটের জয় সেই কথাই বলছে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচেই যে হতশ্রী পারফরম্যান্স ছিল, তাতে ভারতের বিপক্ষে বাজি ধরার লোক পাওয়া যাবে না তা অনুমেয়ই ছিল। পাকিস্তান শাহীনসের বিপক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছিল বিবর্ণ ব্যাটিং ও নির্বিষ বোলিং।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও একই চিত্র। টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ২২৮ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। অথচ এই ম্যাচে তাওহীদ হৃদয় পেয়েছেন প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। জাকের আলী খেলেছেন ৬৮ রানের ইনিংস। তারপরও ব্যাটিংয়ের এই দশা।
আরো পড়ুন:
দ্রুততম ১১ হাজারে দ্বিতীয় রোহিত
হারের পর জরিমানা গুনলো পাকিস্তান
বোলাররা তবুও কিছুটা লড়াই করেছিল। তুলে নিয়েছিল রোহিত, কোহলি, আইয়ারদের উইকেট। কিন্তু পুঁজি কম থাকায় লড়াইটা একদমই জমেনি। কেননা অপরপ্রান্তে শুভমান গিল ছিলেন অনবদ্য, দায়িত্বশীল। তার দ্যুতি ছড়ানো অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসে ভর করে অনায়েসেই জয় দিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরু করলো মেন ইন ব্লুরা।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু ও শেষের চিত্র পুরোটাই আলাদা। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারানো দল শেষ পর্যন্ত ২২৮ রান করবে তা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ইনিংসে চার ব্যাটসম্যানই খুলতে পারেননি রানের খাতা। সিঙ্গেল ডিজিটে আউট আরো দুই ব্যাটসম্যান।
শুরুতে তানজিদ ২৫ রান করে যা করার করেছিলেন। এরপর গল্পটা কেবল তাওহীদ ও জাকেরের। হ্যাটট্রিক বলে ক্যাচ তুলেও জীবন পেয়ে যাওয়া জাকের খেলেন ৬৮ রানের লড়াকু ইনিংস। আর ক্র্যাম্প নিয়ে সেঞ্চুরি করে থামেন তাওহীদ।
ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় দুজন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় যেভাবে ব্যাটিং করে গেছেন তা মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানের মতো উইকেট বিলিয়ে না এসে মাটি কামড়ে টিকে ছিলেন। শুরুতে প্রতিরোধ গড়েছেন। এরপর রান বের করার চেষ্টা করেছেন। তারপর প্রতি আক্রমণে গিয়ে স্কোরবোর্ড সচল করেন।
৮৭ বলে জাকের ও তাওহীদ ৮৫ বলে ফিফটি তুলে নেন। জাকের ফিফটির পর ৬৮ রানে থেমে গেলেও তাওহীদ সেঞ্চুরি তুলে ক্ষান্ত হন। নব্বইয়ের ঘরে ঢোকার আগে কুলদীপ, জাদেজার বলে তার ছক্কা দর্শকদের আনন্দে ভাসায়। আবার পেসারদের পুল ও কাট শটেও মু্গ্ধতা ছড়ান।
সেঞ্চুরির আগে ক্র্যাম্প পড়ে মনোযোগ নড়ে যায় তার। শরীর আগাচ্ছিল না। রান নিতে ভুগছিলেন। এর আগে তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছিল ৯৬ নট আউট। এবারও কী তার সেঞ্চুরি পাওয়া হবে না? না, দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এমন কিছু হলো না। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে, শামির করা বোলিংয়ে এক রান নিয়ে সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্কে পৌঁছান। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন তাওহীদ। ১৮৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ১১৮ বলে ১০০ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
ধ্বংসস্তুপে সেঞ্চুরির ফুল ফুটিয়েছেন তাওহীদ। তীব্র লড়াইয়ে জাকের পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রান ১৫৪। যা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রান। তাতেই বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তির পরশ। কিন্তু স্বল্প এই পুঁজি নিয়ে জয়ের স্বপ্ন তো আর আঁকা যায় না। বোলাররা লড়াই করলেও শেষ হাসিটা হেসেছে টিম ইন্ডিয়াই।
রোহিত ও গিল শুরুতে চড়াও হয়ে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে পাওয়ার প্লে কাজে লাগান দুর্দান্তভাবে। তাসকিন আহমেদ এ জুটি ভাঙেন রোহিতকে ফিরিয়ে। ৩৬ বলে ৭ চারে ৪১ রান করেন রোহিত। তিনে নামা কোহলি বেশিদূর যেতে পারেননি। ৩৮ বলে ২২ রান করে রিশাদের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দেন। আইয়ারকে থামান মোস্তাফিজ। ১৫ রানে ক্যাচ দেন মিড অফে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া অক্ষর পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে। ৮ রানে তাকে সাজঘরের পথ দেখান রিশাদ।
১১২ থেকে ১৪৪ রানে যেতে ভারত ৩ উইকেট হারালেও গিল ও রাহুল ৯৮ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান সহজেই। গিল অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি সাজান ৯ চার ও ২ ছক্কায়। জাকের আলীর হাতে জীবন পাওয়া রাহুল অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে।
ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে আরেকটি শোচনীয় হার বাংলাদেশের নামের পাশে যুক্ত হতো। গিলের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে আলোচনায় থাকতে পারতেন তাওহীদ। কিংবা জাকের আলী। কিন্তু দুবাইয়ে সব আলো কেড়ে নিলেন ওই গিলই।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর য টসম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি সামনে রেখে শেষ হলো 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের আয়োজনে রাজধানীতে পালিত হয়েছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। এবার ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি মোটিফটি সবার সামনে রাখা হয়েছে। শোভাযাত্রার শুরুতে স্বজাতীয় নাচে গানে অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী। এ ছাড়া রঙ বেরঙের পোশাকে আপামর জনতা, বিদেশি নাগরিকদেরও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টা ৩ মিনিটে শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর এটি শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে সাড়ে ১০টায় পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। শেষে মোটিফগুলো সবার দেখার জন্য চারুকলায় রাখা হয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রাকে শুধু বাঙালির নয়, বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ফারুকী বলেন, এটাকে আমরা অনেকদিন বাঙালির প্রাণের উৎসব বানিয়ে রেখেছি। এটা শুধু বাঙালির প্রাণের উৎসব আর নয়। এটা বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব। বাঙালি, চাকমা মারমা গারোসহ সকল জাতিগোষ্ঠী বর্ষবরণ পালন করে। ফলে আমরা এটাকে আমরা বাংলাদেশের উৎসব হিসেবে পালন করা শুরু করলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং সম্মিলনের একটি বড় ধাপ। আমরা হয়ত ২০-৩০ বছর পর থাকবো না, কিন্তু আজকের বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এরপর থেকে বাংলাদেশ এভাবেই চলবে।
শোভাযাত্রার শুরুতে মারমা, ম্রো, চাকমা, বম, খুমি, ত্রিপুরা, পাঙখুয়া, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, মনিপুরী, খাসিয়া, চা জনগোষ্ঠীসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠী নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর নাচ গানে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাবুক দল নিয়ে অংশ নেয় ফরহাদ মজহার।
জাতিগোষ্ঠীর পরের অংশে ছিল শোভাযাত্রার মূল দল। এতে সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নিয়েছে।
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, এবারের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন। একটু মুক্ত পরিবেশে আমরা একত্র হয়েছি। কিছু বাধা-ষড়যন্ত্র ছিল। তবে আমরা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছি। আজকের দিনে কারো প্রতি বিরোধ নেই। পিছনে তাকাচ্ছি না, সামনে তাকাচ্ছি। আমাদের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, জাতি, ধর্ম, পেশা সব ক্ষেত্রে যত অবারিত অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়।
এরপরে হাতে বহনকারী ঘোড়ক দল অংশ নেয়। এরপরে প্রধান মোটিফগুলো রাখা হয়েছে।
মোটিফগুলোতে যথাক্রমে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, এরপরে যথাক্রমে বাকি ছয়টি প্রধান মোটিফ- বাঘ, মাছ, পাঁচটি পাতার শান্তির পায়রা, পালকি, গণঅভ্যুত্থানে মুগ্ধর ‘পানি লাগবে’, ৩৬ জুলাই, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তরমুজের পালি’ রাখা হয়েছে।
মোটিফের পরে রাখা হয়েছে ১০০ ফুটের পটচিত্রগুলো। পটচিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- পটচিত্র আকবর, পটচিত্র বেহুলা, গাজীর পট, পটচিত্র বনবিবি, পটচিত্র বাংলাদেশ ইত্যাদি।
এ ছাড়াও আপামর ছাত্রজনতা, ব্যান্ড দল, কৃষকদের একটি অংশ, রিকশা দল, ঘোড়ার গাড়ির দল অংশ নিয়েছে। শোভাযাত্রার একদম শুরুতে ছিল ডিএমপির অশ্বারোহী দল। এছাড়াও র্যাব, পুলিশের সোয়াট টিম, প্রক্টরিয়াল টিম নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।
শোভাযাত্রায় ‘হাসিনার বিচার কর’, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার কবে?’, ‘ভারতের সঙ্গে সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, নদী বাঁচাও—ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখানো হয়। এ ছাড়া মাঝারি-ছোট সাইজের ১৪টি মোটিফ, নানা মুখোশ, চিত্র ইত্যাদি দেখানো হয়।
শোভাযাত্রা ছাড়াও ঢাবিতে ছিল নানা আয়োজন। সকাল ৮টায় কলা ভবনের সম্মুখে বটতলায় বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়। ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজনটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ।
তবলায় নিরূপম প্রামাণিকের তবলায় কাননের বাঁশীবাদন অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে, এসো হে বৈশাখ এসো এসো’সহ নানা সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক প্রিয়াঙ্কা গোপ।