এমআরটি লাইন-১ বা বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল প্রাথমিকভাবে তিনটি রুটে চলাচল করবে। প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেল প্রতিবার ১২টি স্টেশনে থেমে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর, ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিটে ৩০ সেকেন্ডে নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত এবং ১৬টি স্টেশনে থেমে ৩৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে কমলাপুর থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত যাতায়াত করবে। এই মেট্রোরেল ২০২৬ সালে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দৈনিক আট লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক মো.

আবুল কাসেম ভূঁঞা আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের দূরত্ব ১৮ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার। যাতায়াতে মোট সময় লাগবে ৩৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। স্টেশনে যাত্রাবিরতির সময় ৩০ সেকেন্ড থেকে ৪৫ সেকেন্ড। দুই স্টেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৯৯ কিলোমিটার।

উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশনগুলোতে যাত্রাবিরতি করা না হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ঐকিক নিয়মে মেট্রোরেলের গতিবেগ হিসাব যুক্তিযুক্ত নয়।

এমআরটি লাইন-১–এর বিমানবন্দর রুটের পাশাপাশি টানেল মাটির উপরিভাগ থেকে কমবেশি ১০ মিটার থেকে ১৩ মিটার গভীরতায় নির্মাণ করা হবে। তবে কমলাপুর থেকে রামপুরা পর্যন্ত এলাকায় সড়কের প্রশস্ততা কম থাকায় ওপর-নিচ পদ্ধতিতে মাটির উপরিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩৪ মিটার গভীরতায় টানেল নির্মাণ করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কুড়িল থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত উড়াল অংশের উচ্চতা সড়কের স্তর থেকে ১৪ দশমিক ১ মিটার থেকে ১৮ দশমিক ৩ মিটার রাখা হয়েছে। প্রতিটি মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। সর্বনিম্ন ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড ফ্রিকোয়েন্সিতে মেট্রোরেল চলাচল করতে পারবে। এমআরটি লাইন-১–এর পাতাল মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ পরিচালন গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ পরিচালন গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।

পাতাল মেট্রোরেল চালু হলে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার কম হবে। যানজট অনেক কমবে। ঢাকা মহানগরীর জীবনযাত্রায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ হবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয়কৃত কর্মঘণ্টা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৩০ স ক ন ড ল ইন ১

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র

নদী মাতৃক বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ এক সময় ছিল ঘড়িয়ালের আপন ঠিকানা। বর্তমানে এই জলজ সরীসৃপ প্রাণীটি মহাবিপন্ন। প্রজনন হার কমে যাওয়ায় একপ্রকার বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ঘড়িয়াল। এমন সংকটময় প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গড়ে তোলা হয়েছে ঘড়িয়ালের প্রজনন কেন্দ্র। সামাজিক বন বিভাগের রাজশাহীর পবা নার্সারির একটি পুকুরে এটি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা একটি পুরুষ ও একটি নারী ঘড়িয়াল অবমুক্ত করা হয় এই প্রজনন কেন্দ্রে। ঘড়িয়াল দুইটি অবমুক্ত করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। 

তিনি বলেন, “নদী দূষণ, নাব্যতা হ্রাস, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, পাচার, ডিম নষ্ট হওয়া ও খাদ্যের সংকটের কারণে ঘড়িয়ালের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণেই আজ তারা বিলুপ্তির পথে। রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে যেন এ প্রাণীর অস্তিত্ব টিকে থাকে।”

আরো পড়ুন:

১৫ সাঁতারুর কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি

শামুক সংগ্রহে গিয়ে নদীতে ২ জনের মৃত্যু

ঘড়িয়াল অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, সামাজিক বন অঞ্চল বগুড়ার বন সংরক্ষক মুহাম্মদ সুবেদার ইসলাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ. এম সালেহ রেজা, আইইউসিএনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবিএম সরোয়ার আলম এবং সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফ, রাজশাহীর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

ঘড়িয়াল মূলত খুবই শান্ত ও উপকারী জলজ প্রাণী। এটি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর তালিকাভুক্ত একটি রক্ষিত প্রজাতি। আন্তর্জাতিকভাবে এটি সাইটিস-এর অ্যাপেন্ডিক্স-১ ভুক্ত প্রাণী এবং বর্তমানে “মহাবিপন্ন” হিসেবে চিহ্নিত। এর ইংরেজি নাম Gharial এবং বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus।

ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়ালের প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুইটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, যার নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, তার নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। আর রাজশাহীতে আগে থেকেই থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’।

এই আন্তঃচিড়িয়াখানা বিনিময়ের মাধ্যমে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’-কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি, কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। তাই এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র।

নতুন ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন প্রাণিবিজ্ঞানীরা ও পরিবেশবাদীরা। যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তবে ঘড়িয়াল আবার ফিরতে পারে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে—পদ্মা-মেঘনায়।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ