নাফ নদী থেকে আবারও ১৯ জেলেকে অপহরণ করল আরাকান আর্মি
Published: 20th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে ফেরার পথে আবারও চারটি মাছ ধরার নৌকাসহ ১৯ বাংলাদেশি জেলে অপহৃত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রলার মালিক সমিতির অভিযোগ, এই অপহরণের সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা জড়িত। তাঁরা অস্ত্রের মুখে জেলেদের নিয়ে গেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ও বেলা ৩টায় পৃথক দুই সময়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকাল ১০টার দিকে প্রথমে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘোলারচর থেকে দুটি নৌকাসহ ১০ জেলেকে অপহরণ করা হয়। বেলা তিনটার দিকে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে আরও দুটি নৌকাসহ ৯ জেলে অপহরণের শিকার হন।
শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া ১০ জেলের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো.
সকালে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়া নৌঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুর গফুর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সদস্যরা দুটি মাছ ধরার নৌকাসহ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১০ জনকে নিয়ে গেছে। নৌকা দুটির মালিক মো. কালাইয়া ও জাফর আলম।
আর টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল বেলা তিনটার দিকে হওয়া অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ফেরার পথে কায়ুকখালিয়া ঘাটের মো. সালমান ও আলী জোহারের মালিকানাধীন মাছ ধরার দুটি ট্রলারসহ ৯ জেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়েছে। আরাকান আর্মির সদস্যরা এতে জড়িত।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান বলেন, জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিজিবির সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। আরকান আর্মির সঙ্গে কথা বলে জেলেদের ফেরত আনার কাজ চলছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব এলাকায় ঘটনাগুলো ঘটছে সেখানে কোস্টগার্ডের দায়িত্ব রয়েছে। মূল ঘটনা কী ছিল, তা বিজিবি খতিয়ে দেখছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সরকারি জান্তা বাহিনীর সঙ্গে টানা ১১ মাস সংঘাতের পর গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ দখলে নেন স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা। এর পর থেকে নাফ নদীতে তাঁদের জলসীমায় নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর মোহনা থেকে একটি নৌকাসহ চার বাংলাদেশি জেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর মোহনার কাছাকাছি নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে তাঁদের জিম্মি করা হয়। তাঁদের এখনো ফেরত আনা যায়নি। ওই চার জেলে হলেন শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাছান (৩০), আব্দু রকিম (২০), মোহাম্মদ জাবের (২৬) ও মোহাম্মদ হাসান (১৬)।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প অপহরণ র ন ক সহ
এছাড়াও পড়ুন:
অপহরণের মুক্তিপণ নিয়ে পালানোর সময় ৫ পুলিশ আটক
বগুড়ার ধুনট উপজেলা থেকে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে তিন লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার পাঁচ সদস্যসহ ছয় জনকে আটক করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ও পুলিশের একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে বীরগ্রাম এলাকা থেকে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশ তাদের আটক করে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
পুলিশ ফাঁড়ির জানালা ভেঙে পালাল আসামি
বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, পরে উদ্ধার
আটকরা হলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই শাহিন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, মাহবুব আলম, বাশির আলী এবং মাইক্রোবাস চালক মেহেদী হাসান।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, আরএমপির গোয়েন্দা শাখার পাঁচ সদস্য রবিবার (২৩ মার্চ) রাতে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামের রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ক্যাসিনো খেলার অভিযোগে আটক করে মাইক্রোবাসে উঠায়। এরপর শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরে মাইক্রোবাস থামিয়ে তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দর কষাকষি করে নগদ দুই লাখ টাকা এবং বিকাশ ও নগদ অ্যাপসের মাধ্যমে আরো এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। বগুড়া জেলা পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে শেরপুর ও শাজাহানপুর থানা এলাকায় তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস আটক করার চেষ্টা করে। দুই থানা পুলিশ মাইক্রোবাস আটক করতে না পেরে হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে শাজাহানপুর থানার বীরগ্রাম এলাকায় মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়।
পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, মাইক্রোবাসে থাকা পাঁচজন নিজেদের রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্য পরিচয় দেন। পরে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তারা কাউকে না জানিয়ে বগুড়ায় অসৎ উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। পরে তাদের আটক করা হয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে নেওয়া নগদ দুই লাখ টাকা ও একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ধুনট উপজেলার বাসিন্দা ওয়াহাব নামে একজন কনস্টেবল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত। তিনি ছুটি নিয়ে দুই দিন আগে বাড়িতে আসেন। তার তথ্য মতেই রাজশাহী থেকে পাঁচ পুলিশ ধুনটে আসেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধনে জানা গেছে।
তিনি জানান, আটকদের হাইওয়ে পুলিশ ধুনট থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের নামে ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে অপহরণ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঢাকা/এনাম/বকুল