সচিবালয়ে প্রবেশের নতুন নীতিমালা
Published: 20th, February 2025 GMT
সচিবালয়ে প্রবেশে নতুন নীতিমালা জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন থেকে কোনো দর্শনার্থী যে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের অনুমতি নেবেন, তিনি শুধু সেই মন্ত্রণালয়েই যেতে পারবেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সচিবালয় ত্যাগ করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে দর্শনার্থীর অবস্থান ও বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয় প্রবেশ নীতিমালা ২০২৫ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালে সচিবালয়ে প্রবেশ নীতিমালা করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডসহ বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। সেই প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ে প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি করা হচ্ছে।
প্রবেশপদ্ধতির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়, একজন কার্ডধারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী সচিবালয়ে প্রবেশের আগে তাঁর শরীর আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে এবং তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগ স্ক্যান করা হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মীরা ভেপার ডিটেক্টর/ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে যানবাহন বা ব্যক্তিকে তল্লাশি করবেন।
কার্ডধারীরা কার্ড রিডার স্ক্যানিং ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট গেটের মাধ্যমে প্রবেশ করবেন। কিউআর কোডধারী কর্মকর্তা, কর্মচারী বা ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার আগে ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করে সচিবালয়ে প্রবেশ করবেন।
সচিবালয়ে কারা প্রবেশ করতে পারবেন
নীতিমালা অনুযায়ী স্থায়ী ও অস্থায়ী পাসধারী, সংসদ সদস্য, আগের অনুমতি নেওয়া কূটনীতিক, সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভা–সেমিনারে আগত অংশগ্রহণকারী (সভার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে) সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। পাশাপাশি জেনারেল পোস্ট অফিসের ডাক বহনকারী, সচিবালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ঠিকাদার, শ্রমিক, সংবাদপত্র সরবরাহকারী এবং আগে অনুমতি নেওয়া দর্শনার্থীরাও প্রবেশ করতে পারবেন। একজন দর্শনার্থী দিনে একবার প্রবেশ করতে পারবেন।
নীতিমালায় বলা হয়, একজন দর্শনার্থীর সচিবালয়ে প্রবেশের সময়সীমা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নির্ধারণ করে দেবেন। তবে জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সইয়ে ওই সময়ের আগে দর্শনার্থীকে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে।
কারা পাবেন স্থায়ী প্রবেশ পাস
সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থিত মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা দপ্তরগুলোর নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থায়ী পাস পাবেন। এ ছাড়া সচিবালয়ের বাইরে কর্মরত সরকারের উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব, অবসরপ্রাপ্ত সচিব স্থায়ী পাস পাবেন। মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তির সঙ্গে কর্মরত একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিবও স্থায়ী পাস পাবেন। স্থায়ী প্রবেশ পাসের মেয়াদ হবে ২ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর।
কারা পাবেন অস্থায়ী পাস
সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীনে অধিদপ্তর, দপ্তর ও সংস্থার মনোনীত সর্বোচ্চ চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই পাস দেওয়া হবে। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান নির্বাহী ও মনোনীত দুজন কর্মকর্তা-কর্মচারী; বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি); মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত, খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মনোনীত একজন প্রতিনিধি; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সাপেক্ষে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অস্থায়ী প্রবেশ পাসের মেয়াদ হবে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত। তবে বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর আর সরকারি কর্মচারীদের জন্য দুই বছর।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী যন্ত্রের অভাবে মিয়ানমারে খালি হাতে উদ্ধার অভিযান
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর দুই দিন পেরিয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের বের করে আনতে দিনরাত এক করে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
কিন্তু বেশির ভাগ উদ্ধারকর্মীকে খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হচ্ছে। ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মিয়ানমারের নেই।
গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে বহু ভবন ও স্থাপনা ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চল, দেশটির এক সময়ের রাজধানী মান্দালয়ের কাছে। প্রাচীন এই শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন। সেখানে অনেক ঐতিহাসিক মন্দির ও প্রাসাদ রয়েছে।
মান্দালয়ে ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন ২৫ বছরের হতেত মিন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘সেখানে অনেক ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। কোনো উদ্ধারকারী দল আমাদের এখানে আসেনি।’
হতেত আরও বলেন, তাঁর স্বজনদের কয়েকজন একটি ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তিনি খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাঁদের বের করে আনার চেষ্টা করছেন।
মান্দালয়ের শহরতলি আমারাপুরা। সেখান থেকে একজন উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, তিনি একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিচে চাপা পড়া ১৪০ বৌদ্ধভিক্ষুর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
ওই উদ্ধারকর্মী বলেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করতে পারছি না। কারণ, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার মতো লোকবল ও যন্ত্রপাতি আমাদের নেই। কিন্তু আমরা আশা ছাড়ছি না। আমরা কাজ বন্ধ করব না।’
চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ মিয়ানমারের প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ ভূমিকম্প দুর্গতদের উদ্ধারের সেখানে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বলেছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০–এর বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৪০০ জন। নিখোঁজ প্রায় ১৪০ জন। হতাহতের এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল নিয়ে ছুটছে প্রতিবেশী দেশগুলো৪ ঘণ্টা আগে