প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। তার ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে বন্ধুর সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌর শহরের এ ঘটনায় অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত দুই বন্ধু মধুপুর উপজেলার পঁচিশা গ্রামের সাইদুর রহমান খান রুবেলের ছেলে ফাহাদ খান ফাহিম এবং গোপালপুর উপজেলার চরমোহাইল হেমনগর গ্রামের মনিরুজ্জামানের ছেলে নাঈম মাহাদী সাফি। সাফি মধুপুর উপজেলার মালাউড়ী কাজীপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

ব্ল্যাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনায় গত বুধবার রাত ১২টার দিকে মধুপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী তরুণীর মা।

জানা গেছে, ৮ মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় ফাহিমের। ক্রমে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন স্থানে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলে, শারীরিক সম্পর্ক করে। বন্ধু সাফির কাছে ওইসব ছবি শেয়ার করে ফাহিম। এসব ছবি নিয়ে ফাহিমের বন্ধু সাফি ওই তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। ছবি ডিলিট করার কথা বলে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ফাহিম বন্ধু সাফির পরিবারের ভাড়া বাসায় নিয়ে তরুণীর সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করে। এর পর গত বুধবার দুপুরে বিয়ের কথা আলাপ করতে ওই তরুণীকে সাফির বাসায় আমন্ত্রণ জানায় ফাহিম। আলাপের এক পর্যায়ে ফাহিম আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে। গোপনে আপত্তিকর ছবি তোলে সাফি। পরে সেই ছবি দেখিয়ে সাফি সুযোগ নিতে চাইলে ফাহিম বাধা না দিয়ে সম্মতি জানায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

মামলার বাদীর দাবি, সেখান থেকে বের হয়ে তাঁর মেয়ে বাসায় ফিরে সব জানিয়েছে। বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে, ভুক্তভোগী তরুণী নিজে থানায় গিয়ে পুলিশকে মৌখিক অভিযোগ করে। পরে মধুপুর থানার পুলিশ তার সহযোগিতায় কৌশলে অভিযুক্ত ফাহিম ও সাফিকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবির। তিনি জানান, মামলা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা জানার পরই অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ কৌশলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ব্ল্যাকমেইল করে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে টাকাও দাবি করত।

এদিকে গ্রেপ্তার দু’জনকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাসেল আহমেদ। জ্যেষ্ঠ বিচারক রোমেলা সিরাজাম অভিযুক্ত ফাহাদ খান ফাহিমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে নাঈম মাহাদী সাফির বয়স কম থাকায় রিমান্ড না দিয়ে শিশু আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা স্বাধীনতাপূর্ব অভিন্ন সম্পদের জন্য বকেয়া অর্থ দাবির’ মতো বিষয় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তাতে এই অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ নেই।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ে ফরেন অফিস কনসালটেশন বা আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় দশক পর হওয়া এই বৈঠকে ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদারের জন্য অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান চেয়েছে বলে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।

জসিম উদ্দিন জানান, স্বাধীনতাপূর্ব ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে চার দশমিক তিন দুই বিলিয়ন বা ৪৩২ কোটি ডলার চেয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব

পাকিস্তানের তিন ভেন্যুতে বাংলাদেশের ছয় ম্যাচ

এছাড়া, এফওসিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ও তুলেছে ঢাকা।

একদিন পর শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা এমনকি জম্মু ও কাশ্মির ‘ভারতের অবৈধ দখলে' রয়েছে দাবি করে এর সমাধানের মত ইস্যু নিয়ে ঢাকার বৈঠকে আলোচনার কথা বলা হলেও মুক্তিযুদ্ধে ‘গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া' কিংবা ‘বকেয়া অর্থের’ বিষয়ে কিছু বলা নেই ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সাথে বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন জানিয়েছিলেন, আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয়ের মধ্যে ছিল, "আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বৈদেশিক সাহায্য তহবিল হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া।’

‘বাংলাদেশের আগের একটি হিসাবে ৪০০ কোটি ডলার এবং আরেকটা হিসাবে ৪৩২ কোটি ডলার। এ হিসাব আলোচনায় বলেছি,’ যোগ করেন তিনি।

তবে, এসব ইস্যুতে একটি শব্দও ব্যয় করেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, অতীতের ইস্যুর চেয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকেই বেশি নজর দিয়েছে ইসলামাবাদ। তাদের ভাষ্য, দেশ দুটির সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন ইতিহাস ও জনআকাঙ্ক্ষার কথা এসেছে আলোচনায়।

‘বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছে দুই পক্ষ,’ বলা হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের প্রসঙ্গও এসেছে সেখানে। ‘নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দার ওই সব আলাপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে।’

সম্পর্কের গতিশীলতা ধরে রাখতে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ, ঝুলে থাকা চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করা এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও কানেক্টিভিটির (সংযোগ) ক্ষেত্রে সহায়তা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেশটির কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর, বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের। কানেক্টিভিটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলেছে দেশ দুটি।

করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আকাশপথে ফের সরাসরি যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সন্তোষ জানানো হয়েছে, ভ্রমণ ও ভিসা সহজীকরণে অগ্রগতির ব্যাপারে। বৈঠকে সার্ক এবং কাশ্মির প্রসঙ্গেও আলাপ হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উভয় দেশ সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

‘পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশকে ভারতের অবৈধ দখলে থাকা জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মিরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দ্রুত এর সমাধানের ওপর জোর দেন তিনি,’ বলা হয়েছে ইসলামাবাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

ফিলিস্তিনি এলাকা বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে দুই দেশ।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সাক্ষাতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

আরো জানানো হয়, দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী ফরেন অফিস কনসালটেশন ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পূর্ব পাকিস্তান পর্ব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও সেই ইতিহাস দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বারবার আলোচনায় এসেছে।

এসব কারণে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কখনোই সরলরেখায় চলেনি। আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদে তা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।

গত পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ দুটির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ এপ্রিল (বুধবার) ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ