অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের সুচনা করেছে। আগামীতে দেশটাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সর্তক থাকতে হবে ফ্যাসিস্টরা যেন আর ফিরে আসতে না পারে। এজন্য ছাত্র-জনতার ঐক্য দরকার। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ সেই ঐক্য গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্টে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় কমডেকার উদ্বোধন উপলক্ষে রেকর্ড করা ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্র ও যুবকদের দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের শিশু, কিশোর ও যুবদের স্কাউটিং পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল, সৎ, চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। কমডেকা হচ্ছে রোভার স্কাউটদের এমন এক মিলনমেলা যেখানে অংশ গ্রহণকারীরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সমাজসেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করবে। এই কমডেকায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে সক্ষম হবে। বর্তমানে স্কাউটসে মাত্র ১৩ শতাংশ নারী রয়েছেন জানিয়ে এখানে নারীদের অংশগ্রহন আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

সপ্তম জাতীয় কমডেকা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম.

সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কাউটস আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম, ফরিদা ইয়াসমিন, অধ্যাপক ফাহমিদা, মু. তৌহিদুল ইসলাম, মো0. রেজাউল করিম, আবু সালেহ মো. মহিউদ্দিন, সমন্বয়ক খান মো. মাইনুদ্দিন সোহেল ও স্কাউটসের উপ-পরিচালক মো. হামজার রহমান শামীম প্রমুখ।

এর আগে বিকেলে কমডেকার সার্বিক বিষয়ে অবহিতকরণ প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্য দেন স্কাউটস আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। সম্মেলনে হয়, বাংলাদেশ স্কাউটসের ব্যবস্থাপনায় ৭ দিনব্যাপী (১৯-২৫ ফেব্রুয়ারী) এই ক্যাম্পে সারাদেশ থেকে ৪ হাজার রোভার স্কাউট, ১৫ শ’ স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মারমাদের মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব যে কারণে হয়, যেভাবে এল

মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে আছে ‘মৈতা রিলং পোয়ে’ বা মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব। এই উৎসবে পরস্পরের দিকে পানি ছিটিয়ে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন মারমারা। ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’(এসো হে সাংগ্রাইংয়ে সবাই মৈত্রী পানিবর্ষণে) গানটিও দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে এই উৎসবের ‘থিম সং’।

গবেষক ও মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবের শুরু গত শতকের সত্তরের দশকে। কিছু তরুণ মিয়ানমারে সাংগ্রাইং উৎসবে এ ধরনের আয়োজন দেখে দেশেও এর প্রচলন করেন। আর ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’ উৎসবের থিম সং হয়েছে ১৯৮৪ সালে।

মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবকে অনেকেই ‘জলকেলি’ ও ‘পানি খেলা’ বলে থাকেন। তবে এসব নাম আপত্তিকর বলে মনে করেন মারমা সমাজের অনেকেই। তাঁদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে ধর্মের যোগ থাকা অনুষ্ঠানটি ভুলভাবে উপস্থাপন হয়।

এবারের সাংগ্রাইং উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে বান্দরবান জেলা শহরে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব শুরু হয়েছে। তবে জেলার অন্যান্য জায়গায় গতকাল মঙ্গলবার এই উৎসব শুরু হয়। খাগড়াছড়িতে কোথাও কোথাও সোমবার শুরু হয়েছে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব।

মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণদের একজন শিক্ষাবিদ থোয়াইংচ প্রু। তিনি প্রথম আলকে বলেন, সাংগ্রাইং আখ্যেয়া বা মূল সাংগ্রাই দিনে বুদ্ধমূর্তি স্নানের আগে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব হয় না। এটা প্রথাসিদ্ধ রীতি। তাই মৈত্রী পানিবর্ষণের সঙ্গে ধর্মের যোগ বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, পানিকে মারমারা পবিত্র মনে করে। তাই সাংগ্রাইং উৎসবে বন্ধুত্বের বন্ধন এবং পরস্পরের প্রতি মৈত্রী ভাবনা নবায়ন ও সুদৃঢ় করার জন্য একে-অপরের দিকে পানি ছোড়েন। পানি ছিটানোর পর কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালে বোঝা যাবে, বন্ধুত্বের সম্পর্কে ও বন্ধনে টানাপোড়েন আছে। এটিই মৈত্রী পানিবর্ষণের মূল্যবোধ। এ কারণে অনেক সময় অযাচিত কাউকে পানিবর্ষণ করলে আগে সালিসের মুখোমুখিও হতে হতো।

মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবে মেতেছেন মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। গতকাল বান্দরবানের ডলুপাড়ায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ