ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের দুই দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ও গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের কামালদিঘী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় একটি পক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, মাদকের পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে পুলিশের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এই সংঘর্ষ হয়েছে। একটি পক্ষ ঘটনাটিকে ইয়াবা বড়ি বিক্রির ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামের রুবেল শাহ একজন মাদক ব্যবসায়ী। কয়েক দিন আগে রুবেলের কাছ থেকে একই গ্রামের শাফায়েত মিয়া কিছু ইয়াবা বড়ি কেনেন। পাওনা টাকা চাওয়ায় কিছুদিন পরপর তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। মাদক বিক্রির পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল রাত ১০টার দিকে রুবেল শাহ ও শাফায়েতের এক স্বজন পারভেজ মিয়ার মধ্যে ফান্দাউক গ্রামের কামালদিঘী পাড়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েন। সে সময় উভয় পক্ষের নারী-পুরুষসহ ৩০ জন আহত হন। সেই সংঘর্ষের জেরে আজ বেলা ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় শাফায়েতের পক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

সংঘর্ষের পর দুই পক্ষের আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
সংঘর্ষের বিষয়ে রুবেল শাহ অভিযোগ করেন, ‘আমার বড় ভাই নাইম শাহ পাশের বাড়ির শাফায়েত ও পারভেজের কাছে ৭০ হাজার টাকা পাওনা আছেন। টাকা ফেরত চাওয়ায় শাফায়েতের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালান। দুই দফায় হামলায় আমাদের ৭০ থেকে ৮০ জন আহত হয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাফায়েত মিয়া ও পারভেজ মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে পাওনা টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে আজ আবার দুই পক্ষের লোকজন জমায়েত হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতির কারণে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ২০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। একটি পক্ষ এটিকে ইয়াবার ঘটনা বলে প্রচার করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র জন আহত

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর-সংলগ্ন মহাসড়কে চলন্ত বাসে ছিনতাই, চালকসহ আটক ৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ফটক এবং সিঅ্যান্ডবি এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শুভযাত্রা নামে একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন ছুরিকাহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাসটির চালকসহ তিনজনকে আটক করে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আটক তিনজন হলেন শুভযাত্রা বাসের চালক আলী হোসেন, তাঁর সহকারী মো. সোহেল ও কন্ডাক্টর আতিকুর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শী বাসের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শুভযাত্রা বাসটি সাভারের সিটি সেন্টার এলাকায় এলে চারজন যাত্রী বাসে ওঠেন। এরপর বাসটি সিঅ্যান্ডবি এলাকায় এলে তাঁরা বাসের লাইট বন্ধ করে দিয়ে যাত্রী রবিউল হায়দারকে ছুরি ধরে তাঁর কাছে যত টাকা আছে তা দিতে বলেন। রবিউল টাকা বের করতে করতে তাঁরা পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নেন এবং হাতে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় বাসের আরও কয়েকজনের কাছ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও বাসে থাকা দুটি নতুন টেলিভিশন সেট ছিনিয়ে নিয়ে তাঁরা বাস থেকে নেমে যান। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে পৌঁছালে বাসে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও যাত্রীরা বাসটি আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে যান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাসের চালক ও তাঁর দুই সহকারীকে আটক করে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

ছুরিকাহত রবিউল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সাভারের গেণ্ডা এলাকা থেকে বাসে উঠি। ছিনতাইকারীরা বাসে উঠে সরাসরি আমার কাছে এসে ছুরি ধরে বলে, যা টাকা আছে দে। আমি টাকা বের করতে করতে তারা আমার পকেটে হাত দিয়ে ১৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং আমার হাতের বাহুতে ছুরি মারে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছি।’

আরেক ভুক্তভোগী মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের একজন আমার গলায় ছুরি ধরে বলে মোবাইল দিয়ে দিতে। আমি ভয়ে ভয়ে মোবাইল দিয়ে দিছি। তারা আরও দুজনের কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে গেছে। এ ছাড়া বাসে থাকা দুটি টেলিভিশন সেটও নিয়ে গেছে।’

বাসে থাকা যাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একটা প্রোগ্রাম শেষে আমরা সাভারের মডেল মসজিদের সামনে থেকে বাসে উঠি। বাসটি সিটি সেন্টার এলাকায় এলে চারজন বাসে ওঠে। বাসে থাকা একজন মেয়ের পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা করে উত্তেজনা তৈরি করে। পরে বাসটি সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পৌঁছালে তারা বাসের হেলপারের গলায় ছুরি ধরে এবং আমার পাশে থাকা এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমার ধারণা, তারা আগে থেকেই জানত, আমার পাশে যিনি বসা তার কাছে টাকা আছে।’

তানজিল হায়দার আরও বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা তিন মিনিটের মধ্যে ছিনতাই করে বাস থেকে নেমে যায়। আমরা বাস থেকে নেমে তাদের ধাওয়া দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ছিনতাইকারীরা বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বাস ড্রাইভার বাসটি ছেড়ে দেয়। আমার ধারণা বাসের হেলপারের গলায় তারা যে ছুরি ধরে ছিল, সেটা নাটক হতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা টাকা ও মোবাইল নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানা-পুলিশ বাসের চালক, তাঁর দুই সহকারীকে আটক করেছে। তদন্ত করে দ্রুত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগর-সংলগ্ন মহাসড়কে চলন্ত বাসে ছিনতাই, চালকসহ আটক ৩
  • জাবিতে মেট্রোরেলের স্টেশন দাবি শিবিরের