চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নাবিলাকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না: জয়
Published: 20th, February 2025 GMT
অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলার ভূয়সী প্রশংসা করলেন অভিনেতা, নির্মাতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। বলা যায়, প্রশংসায় পঞ্চমুখ! মূলত, বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জয় তার অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে ‘আয়নাবাজি’খ্যাত অভিনেত্রীকে নিয়ে সুখ্যাতি করেন।
এ ধরনের স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণ লেখার শুরুতে ব্যাখ্যা করেছেন নেটিজেনরা। জয় বলেন, “সবাই বলে জীবিত অবস্থায় মানুষের প্রশংসা করা উচিত। কিংবা তাকে নিয়ে দুই-চার লাইন লেখা উচিত। শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ভক্তদের কিংবা বন্ধু-বান্ধবের। জন্মদিনে আমরা ছোট করে কিছু লিখি আবার অনেকেই লিখি না। আজকে ওর জন্মদিন না, যাকে নিয়ে আমি লিখলাম। আমি ভাবছি, আমার চেনাজানা সকলকে নিয়ে সময় পেলে কিছু না কিছু লিখব।”
মাসুমা রহমান নাবিলা
আরো পড়ুন:
মা হচ্ছেন স্বাগতা, প্রকাশ্যে বেবি বাম্পের ছবি
মেহজাবীনের বিয়ে: আদনান আল রাজীবকে কতটা জানেন?
নাবিলার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে জয় বলেন, “আজ যাকে নিয়ে লিখছি, সেই অভিনেত্রীর নাম নাবিলা। অনেক অনেক ছোটাছুটি তাড়াহুড়ো তাকে করতে হয়নি ক্যারিয়ারে। কাজের সংখ্যা বাড়াতে হয়নি অনেক। খুব অ্যাভারেজ কাজে কখনই দেখা যায়নি তাকে। হোস্ট হিসেবেও উজ্জ্বল নাবিলা। মায়া, টেরা চোখ কিংবা দাঁতের সৌন্দর্য— তার কথা বলাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল, সঙ্গে ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষা এই দুটোর ছাপ বোঝা যেত। হাসিটাও আকর্ষণীয়।”
জয় মনে করেন চলচ্চিত্রের ইতহাস থেকে নাবিলা হারিয়ে যাবেন না। তার ভাষায়, “অনেক শিল্পী আছেন, যারা হাজার হাজার কাজ করে আবার সামান্য বিরতিতেই দর্শক এবং ইতিহাস থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে হারিয়ে যায়। নাবিলা মাত্র দুটি কাজ দিয়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিহাস মনে রাখবে ‘আয়নাবাজি’ এবং ‘তুফান’। চলচ্চিত্রের ইতিহাস যতদিন লেখা হবে, ততদিন এই দুই সিনেমার নায়িকা নাবিলাকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না।”
বিস্ময় প্রকাশ করে জয় বলেন, “আমার অবাক লাগে, এরকম বড় কাজ করার পর একজন শিল্পী স্বাভাবিক জীবনে কীভাবে ফিরে যায়? কারণ তার ভেতর চরিত্রের ট্রমা কাজ করে। দীর্ঘদিন কাজ করে। তখন ইচ্ছে করে সব ভেঙেচুরে শুধু অভিনয় করতে। কিন্তু নাবিলারা পারে না। সমাজ-সংসার-বাস্তবতা, সিন্ডিকেট ও মিডিয়া পলিটিক্স এবং অসংখ্য কম্পিটিটার অতিক্রম করা সবার পক্ষে সম্ভব না। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কাজ করলেই প্রেমের তকমা লাগিয়ে দেওয়া, সব পরিবার গ্রহণও করে না। এইসব সীমাবদ্ধতার বাইরে শুধু পরিপূর্ণ শিল্পী হওয়া, শিল্পকর্ম করা, শিল্পে খাওয়া, শিল্পে ঘুমানো ভারতবর্ষের সম্ভব হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গত ২৫ বছরে এর সম্ভাবনা দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া একেবারেই অসম্ভব।”
প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জয় বলেন, “নাবিলা যেমন কাজের ছাপ চিরস্থায়ীভাবে অল্প কাজ দিয়ে রেখে গেল সবাই কি তা পারে? নাবিলার দুইটি কাজ নয় অন্তত ছয়টি কালজয়ী কাজ তার জীবদ্দশায় তৈরি হোক। শুভকামনা।”
মাসুমা রহমান নাবিলা
শাহরিয়ার নাজিম জয়ের প্রশংসাসূচক লেখাটি নাবিলার নজরে পড়েছে। লেখাটি পড়ে মন্তব্যের ঘরে নাবিলা লেখেন, “শাহরিয়ার নাজিম জয় ভাইয়া, মৃত্যুর পর অনেকেই অনেক কিছু লিখে, বলে। এই মৃত্যুর পর লেখা বা বলাটা একটা ট্রেন্ড আর বেঁচে থাকতে কাউকে মুখ ফুটে প্রশংসা না করা আরেকটা ট্রেন্ড। আপনার এই লেখা আমাকে অনেক উৎসাহ দিল, বেঁচে থাকতে অন্তত ৬টা কাজ (আরো বেশি হলে তো কথাই নেই) করে যেতেই হবে! অনেক ধন্যবাদ, আমাকে নিয়ে এই সুন্দর কথাগুলোর জন্য।”
সৌদি আরবের জেদ্দায় জন্মগ্রহণ করেন মডেল-অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। বাবার চাকরির সূত্রে সেখানে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকায় ফিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। তারপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
২০০৬ সালে একটি টিভি অনুষ্ঠান সঞ্চালনার মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পথচলা শুরু করেন নাবিলা। একই বছর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে আলোচনায় উঠে আসেন। এরপর অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। তা ছাড়া খেলা বিষয়ক কিছু অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেও প্রশংসা কুড়ান। এরই মাঝে নাম লেখান টিভি নাটকে।
মাসুমা রহমান নাবিলা
২০১৬ সালে অমিতাভ রেজা নির্মাণ করেন ‘আয়নাবাজি’ সিনেমা। এতে হৃদি চরিত্রে অভিনয় করেন নাবিলা। সিনেমাটিতে চঞ্চল চৌধুরীর বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এটি তার অভিষেক চলচ্চিত্র হলেও দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ান নাবিলা। এরপর বিয়ে-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
দীর্ঘ চার বছর কোনো চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি নাবিলাকে। কেবল চলচ্চিত্র নয়, বলা যায় অভিনয় থেকেই দূরে ছিলেন তিনি। তবে বিরতি ভেঙে ২০২১ সালে ‘১৯৭৫ অ্যান আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এ সিনেমা নিয়ে বিশেষ আলোচনা না হলেও গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন নাবিলা। কারণ ওই সময়ে ‘তুফান’ সিনেমায় শাকিব খানের নায়িকা হিসেবে নাবিলার নাম ঘোষণা করা হয়। সিনেমাটি মুক্তির পরও প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র রহম ন ন ব ল চলচ চ ত র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রদূতের প্রতারণার শিকার মেঘনা
মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমিরকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। সমির সানজানা ম্যানপাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা মেঘনার মুক্তি এবং বিতর্কিত আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে মেঘনা আলম সদ্য বিদায়ী সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের প্রতারণার শিকার বলে অভিযোগ করছেন তাঁর বাবা বদরুল আলম। শনিবার রাতে তিনি সমকালকে বলেন, ছয় মাস ধরে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর মেয়ের ঘনিষ্ঠতা। এর দুই-তিন মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে পরিচয়। ‘মিস বাংলাদেশ’ নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন মেঘনা। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এসব আয়োজনে বিশিষ্টজন, গুণী ব্যক্তিরা আসতেন। ঢাকায় সেই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার প্রথম দেখা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সব জানেন। তিনি দু’জনকে সহযোগিতা করেন। এরপর মেঘনার সঙ্গে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। এরপর বিয়ে করতে চান। গত ৪ ডিসেম্বর মেঘনা ও দুহাইলানের আংটি বদল হয়েছিল বলে দাবি করেন বদরুল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তিনি।
বদরুল বলেন, ‘মেঘনার বসুন্ধরার বাসায় আসা-যাওয়া ছিল রাষ্ট্রদূতের। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেঘনা জানতে পারে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে রয়েছে। এরপর তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। সে আংটি ফেরত দেয়। মেঘনা রাষ্ট্রদূতের দ্বিতীয় স্ত্রী হতে চায়নি। এক পর্যায়ে সৌদিদূতের স্ত্রীকে ঘটনাটি জানায় মেঘনা। এরপরই বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। রাষ্ট্রদূত ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এক পর্যায়ে মেঘনা ফেসবুকে এ সম্পর্কে কিছু লেখা পোস্ট করে। তখন মেঘনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন দুহাইলান।’
মেঘনার বাবা আরও বলেন, প্রতারণার শিকার হয়েছে এটা জেনেও মেঘনা চেয়েছিল বিদায়ী রাষ্ট্রদূত তার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করুক। কিন্তু সেটা করেননি তিনি। উল্টো বিনা অপরাধে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে বদরুল বলেন, ‘কেন আমার মেয়ে তাঁকে ফাঁসাবে। তাঁর কাছে টাকা চেয়েছে– এমন কোনো প্রমাণ আছে? যদি মেঘনা অন্যায় করত, তাহলে তার বিরুদ্ধে তো সুনির্দিষ্ট মামলা হতো। আইন সবার জন্য সমান। ন্যায়বিচার চাই। সরকার আমার মেয়ের নিরাপত্তা দেবে, এটা আমার দাবি।’ তিনি জানান, নর্থ সাউথে পড়াশোনার সময় বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে মেঘনা থাকতেন। সেখানে মাঝে মাঝে তিনি যেতেন। পরিবারের অন্যরা বেইলি রোডে থাকেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারায় প্রতিরোধ আটকাদেশে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আছেন। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত দুহাইলান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনাকে আটক করেছে পুলিশ। একজন নারী তাঁর কাছ থেকে ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য’ সম্পর্ককে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ ছিল তাঁর। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। এটি তদারকির দায়িত্ব পালন করেন একজন বিশেষ সহকারী। তিনিই ডিবিকে ঘটনাটি জানান। এরপর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হলে তাঁকে আটক করা হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তাঁর বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেওয়ান সমিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, আসামি গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়।
কাশিমপুর-২ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আল মামুন সমকালকে বলেন, প্রতিরোধমূলক আটকাদেশের বন্দিদের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়। মেঘনাও আলাদা কক্ষে আছেন। অন্যান্য বন্দির মতো তারা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দারা থাকেন।
নিন্দা-প্রতিবাদ
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তিসহ এই আইন বিলোপের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিবৃতিতে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী পক্ষ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দ্রুত এই কালো আইন বাতিল, মেঘনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। যে বা যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় ইস্যু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনোই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।