রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর শুনে বিদেশের মাটিতে বসে শহীদ শামসুজ্জোহার মেয়ে সাবিনা জোহা খান (ডালিয়া) আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। মৃত্যুর প্রায় ছয় দশক পরও একজন ছাত্র তাঁর বাবার আদর্শকে এমনভাবে ধারণ করে আন্দোলনে মারা গেছেন, এটা তাঁকে আপ্লুত করেছিল। সে সময় দেশে ফিরতে না পারলেও আবু সাঈদের মা–বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছিলেন তিনি।

১৮ ফেব্রুয়ারি বাবা ড.

শামসুজ্জোহার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা সাবিনা জোহা খান প্রথম আলোকে এ কথা বলেন। ১৯৬৯ সালে যখন শামসুজ্জোহা শহীদ হন, তখন তিনি মাত্র তিন বছরের শিশু। বাবার শাহাদাতবার্ষিকীতে নানা আয়োজনে যোগ দেন তিনি, বক্তৃতা করেন, শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন। বাবার কবর, ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন জায়গায় যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুলের ‘দাবানল’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত ছিলেন সাবিনা জোহা খান। সেখানে প্রথম আলো কথা বলে তাঁর সঙ্গে।

শহীদ জোহাকে স্মরণ করে গত বছরের ১৫ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যাঁরা ছিলেন, সবাই তো মরে গেছেন, কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত। এ প্রজন্মে যাঁরা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যত দিন বেঁচে আছেন, মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন শামসুজ্জোহা হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।’ এই স্ট্যাটাসের পরদিনই তিনি গুলিতে নিহত হন। আবু সাঈদের মৃত্যু শোকগ্রস্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সাবিনা জোহা খানকেও।

জোহার কন্যা সাবিনা জোহা বলেন, এই প্রজন্ম তাঁর বাবাকে দেখেনি, শুধু তাঁর আত্মত্যাগের ঘটনা শুনে, ইতিহাস পড়ে তাঁর বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আবু সাঈদের মতো হয়তো আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাঁদের কথা তিনি জানেন না। তবে বিষয়টি তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তাঁর কথায়, ‘আবু সাঈদের বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে আমি কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। কোথাও যেন একটা যোগসূত্র আছে, যা আমার মনকে অস্থির করে রাখছে।’

সাবিনা জোহা খান বলতে থাকেন, ‘আমি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবু সাঈদকে সম্মানিত করে অনুভূতি প্রকাশ করেছিলাম। যা একান্ত, আমি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চাইনি। আবু সাঈদের মতো এ রকম শত শত অনুপ্রেরণার ঘটনা থাকতে পারে। এটা ভেবে মনের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল। আমি জানতাম, বাবাকে মানুষ ভালোবাসেন। আদর্শ হিসেবে ধারণ করেন। কিন্তু এখনো মানুষ এমনভাবে বাবার আদর্শকে ধারণ করে, এটা বুঝতে পারিনি।’

কথায় কথায় সাবিনা জোহা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর মা তাঁদের নিয়ে আসতেন। ১০–১২ বছর পর্যন্ত প্রতি ১৮ ফেব্রুয়ারিতে এখানে এসেছেন। এরপর ঢাকায় চলে যাওয়ায় সেভাবে আর তাঁদের এখানে আসা হয়নি। তাঁর মা চাইতেন না তিনি জনসমক্ষে বেড়ে উঠুন। তাঁর মা শুধু বলতেন, যখন সময় হবে, নিজেই রাজশাহীতে যাবেন। এই শিকড় কেটে দেওয়ার মতো নয়।

বহুদিন ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার কথা ভাবছিলেন জানিয়ে সাবিনা জোহা বলেন, ‘রাজশাহী আসার জন্য বহুদিন ধরেই ভাবছিলাম। কিন্তু বাচ্চাদের পড়াশোনা, নিজের চাকরি, জীবনের ব্যস্ততায় আর আসা হয়ে ওঠেনি। যখন আমার স্বামী মারা গেলেন, তখন উপলব্ধি করলাম যে আমার যদি কিছু একটা হয়ে যায়, তাহলে অনেক কিছু অপূর্ণ থেকে যাবে। আমার বাবার যে অবদান, তাঁর আদর্শকে এখনো যে মানুষ তাদের মনে ধারণ করে আছে, আমার সন্তানদের কাছে অজানাই থেকে যাবে। এটা তাদের জানা, বোঝা অনেক প্রয়োজন। অনুভব করা দরকার, ধারণ করা দরকার।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আদর শ আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

আমাকে কেন বাজে কথা শুনতে হলো, প্রশ্ন কাজী মারুফের

গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে সিনেমা দেখে বের হওয়ার সময় বরেণ্য নির্মাতা কাজী হায়াতের গাড়ি আটকে রাখেন শাকিব ভক্তরা। এরপর কাজী হায়াৎ গাড়ি থেকে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে ‘তুমি কে আমি কে, শাকিবিয়ান, শাকিবিয়ান’ বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা। কেবল তাই নয়, এই পরিচালকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় শাকিব ভক্তদের।

এ ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করেন কাজী হায়াতের পুত্র চিত্রনায়ক কাজী মারুফ। প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী, ডিপজলও। তারপরও কাজী মারুফ, কাজী হায়াতকে নিয়ে ট্রল করছেন নেটিজেনরা। এসব নজরে পড়েছে আমেরিকা প্রবাসী কাজী মারুফের। ফের এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।    

কাজী মারুফ বলেন, “আমি আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বসবাস করি। আমি কি বাংলাদেশ সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য? আমি কি ‘বরবাদ’ সিনেমার কেউ? কার সিনেমা আসলো কার আসলো না এতে আমার কি কোনো লাভ-ক্ষতি আছে? আমি কি কোনো সিনেমার প্রমোশনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত? আমার কি কোনো সিনেমা এই ঈদে বা আগামী ঈদে মুক্তি পাচ্ছে? তাহলে আমাকে কেন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মানুষের বাজে কথা শুনতে হলো?”

আরো পড়ুন:

জটিলতা কাটিয়ে আসছে ‘কৃষ-ফোর’, নয়া অবতারে হৃতিক

এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক-নিন্দনীয়, কাজী হায়াৎ প্রসঙ্গে ডিপজল

কাজী হায়াতের হার্টে ৯টি রিং পরানো হয়েছে। বাবার অসুস্থতার তথ্য জানিয়ে কাজী মারুফ বলেন, “৭৮ বছর বয়সি একজন মানুষ কাজী হায়াৎ(আমার বাবা)। একবার স্ট্রোক করেছে, একবার ওপেন হার্ট করা, ৯টা রিং পড়ানো একজন মানুষ, তার গাড়ি আটকানো কেন হলো? সেন্সর বোর্ডে কি উনি একাই ছিলেন সদস্য? সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক, বোর্ডের সদস্যদের সাথে কেন ভিতরে মিটিং করলো না? তবে কি এটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল?”

শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’। ঈদুল ফিতরে সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার সিনেমাটির প্রদর্শনী দেখতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে যান নির্মাতা ও বোর্ড সদস্য কাজী হায়াৎ। আর সেদিন দুপুরে আনকাট সেন্সর সার্টিফিকেটের দাবিতে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সামনে মানববন্ধন করেন শাকিবভক্তরা। সেখানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রীনগরে অটোরিকশা ‘ছিনতাই চক্রের’ তিন সদস্যকে স্থানীয়দের পিটুনি, একজনের মৃত্যু
  • মুন্সীগঞ্জে অটোরিকশা ছিনতাই, ‘গণপিটুনিতে’ নিহত ১
  • ড. ইউনূসকে এক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই: সারজিস
  • বিএমডিএর আরো ২ প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত, ব্যাখ্যা তলব
  • লুঙ্গি পরার কারণ ব্যাখ্যা করলেন বুবলী
  • হলান্ড, এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস—কার বেতন বেশি
  • শখের কলের গান ও একজন আব্দুল আলী
  • বাল্যবিয়ে: সক্ষমতার বিলুপ্তি, সম্ভাবনার অপমৃত্যু
  • প্রকাশ্যে ‘চাঁদ মামা’, নেটিজেনরা বলছেন ‘আগুন’
  • আমাকে কেন বাজে কথা শুনতে হলো, প্রশ্ন কাজী মারুফের