জাতিকে অস্থির না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন: মির্জা ফখরুল
Published: 20th, February 2025 GMT
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিকে আর অনিশ্চিয়তার মধ্যে না রেখে দয়া করে দ্রুত নির্বাচন দিন। যতটুকু দরকার, ততটুকু সংস্কার করেন। কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচন দেন, ভোটের একটা রোডম্যাপ জনগণকে জানিয়ে দেন। দেশটাকে অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিবেন না। আমি অনুরোধ করবো, জাতিকে অস্থির অবস্থায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন। যে সরকার গঠিত হবে, তার পেছনে জনগণ থাকবে। জনগণ না থাকলে সে সরকার কাজ করতে পারবে না। তাই জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বলবো, আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না; যাতে জাতির ঐক্য নষ্ট হয়। এই মুহুর্তে দেশে ঐক্যের বড় প্রয়োজন। এই ক্রান্তিকালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে দিল্লিতে বসেও ষড়যন্ত্র করছে। ভারত আমাদের বৃহত্তর প্রতিবেশি। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এখন আমাদের দরকার এই সরকারকে সমর্থন করা।
লাকসাম মনোহরগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় সবচেয়ে বেশী অত্যাচারের শিকার হয়েছে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের মানুষ। রীতিমতো ভয়াবহ ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল এখানকার সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সে এখন কোথায় পালিয়েছে, কেউ জানে না। এ সময় মঞ্চে ছিলেন গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান ও হুমায়ুন পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলাম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। শেখ মুজিব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার শাসনামলে সব শেষ করে দিয়েছে। কেউ ভোট দিতে পারেনি। ভোটের আগের রাতে সিল মেরে আওয়ামী লীগের সবাইকে নির্বাচিত করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনটা ছিল ডামি নির্বাচন। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। এই সময় তারেক রহমান একটা স্লোগান দিয়েছিল ‘টেক ব্যাক’। আরেকটা স্লোগান দিয়েছিল, ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’। ঠিকই রাজপথে ফয়সালা হয়েছে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা হিরু-হুমায়ূনের সন্তানদের কথা স্মরণ করিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছিল। তার মধ্যে সিলেটের নেতা ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২ হাজার মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তাই তাকে জেল খাটতে হয়েছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সংস্কার-সংস্কারের কথা বলছেন, সত্যিকার অর্থে আপনারা বলেন তো; মানুষ সংস্কার বলতে কতটুকু বুঝে। মানুষ বুঝে, দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, মোটা কাপড়, মাথার উপরে ছাদ, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া- এগুলোই হলো সংস্কার। এখন যে ব্যবস্থা চলছে, তাতে শান্তি আসবে না। রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তাতেই সমাধান আছে। দয়া করে দেশকে আর নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবেন না। সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যখন আন্দোলন চলে তখন জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেনাবাহিনী।
জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। দলটির কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম ব এনপ র র ব এনপ জনসভ য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে বিএনপি ও এনসিপির শোডাউন-জনসভা ঘিরে উত্তেজনা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুরাদনগরের রাজনৈতিক মাঠ ক্রমেই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। শনিবার মুরাদনগরে বিএনপি ও এনসিপি শোডাউন করে জনসভা আহ্বান করেছে। তবে দুই দলের কেউই প্রশাসনের কাছে শোডাউন ও জনসভার অনুমতি চেয়ে লিখিত কোনো আবেদন করেনি বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সংঘাতের আশংকায় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, ১৯ এপ্রিল শনিবার আন্দিকোট ইউনিয়নের হায়দরাবাদ সামসুল হক কলেজ মাঠে পূর্ব থেকেই জনসভার ডাক দিয়েছে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের। জনসভা সফল করতে এলাকায় পোষ্টার সাটানো ও মাইকিং করে চালানো হয়েছে প্রচারণা।
অপরদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনপিসি) নেতারা বলেন, তারাও একই দিনে (শনিবার) একই সময়ে বিএনপির সভাস্থলের পার্শ্ববর্তী আকবপুর ইউনিয়নের পীর কাশিমপুর হাইস্কুল মাঠে বাঙ্গরা দলটির বাজার শাখার উদ্যোগে জনসভার ডাক দিয়েছে। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন মাষ্টারের নামে পোষ্টার সাটানোসহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
বিএনপির সাথে একই দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির জনসভা ডাক দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি নতুন দল। তাদেরকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি তাদেরকে কখনোই প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করে না। মুরাদনগরে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পাবে দাদা কায়কোবাদ।
বিএনপির জনসভার আয়োজনের খরচের উৎস জানতে চাইলে মহিউদ্দিন অঞ্জন সমকালকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত টাকা এবং দলীয় ফান্ড থেকেই এই জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে। এ সময় তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির জনসভার খরচের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, মুরাদনগরে প্রত্যেকটি জায়গা থেকে এখন চাঁদাবাজি করছে জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজন।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজনের চাঁদা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মুরাদনগর উপজেলা শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবাইদুল হক সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিটি অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের চাঁদাবাজি আড়াল করতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করবে জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার মধ্য দিয়ে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান জানান, জনসভা করার বিষয়ে দুই দলের কারো পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি চাওয়া হয়নি। বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি।
অনুমতি না চাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসভা বন্ধ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।