ভাগ্যিস রোহিত শর্মা ক্যাচটা মিস করেছিলেন! নয়তো স্কোরবোর্ডের যে চিত্র ছিল ওখানেই ম্যাচটি শেষ হয়ে যেতে পারত। ৮.৩ ওভারে বাংলাদশের রান ৫ উইকেটে ৩৫।

জাকের আলী পরের বলে এসে স্লিপে ক্যাচ দেন। রোহিত ক্যাচ ছেড়ে বাংলাদেশকে ‘জীবন’ দিলেন। সেই জীবনে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে শেষ পর্যন্ত রান ২২৮। যার কৃতিত্ব তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলী অনিকের।

ধ্বংস্তুপে সেঞ্চুরির ফুল ফুটিয়েছেন তাওহীদ। তীব্র লড়াইয়ে জাকের পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রান ১৫৪। যা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রান। তাতেই বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তির পরশ।

আরো পড়ুন:

কোহলিকে পেছনে ফেলে শীর্ষে বাবর

অভিষেকে ১৫০ করে ব্রিটজকের বিশ্বরেকর্ড

সৌম্য, শান্ত, মুশফিক রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন সাজঘরে। মিরাজ থেমে যান সিঙ্গেল ডিজিটে। তানজিদ চেষ্টা করে ২৫ রান করলেও তাকেও থেমে যেতে হয়। সেখান থেকে তাওহীদ ও জাকেরের লড়াই শুরু হয়।

উইকেট বাঁচিয়ে চলে তাদের ইনিংস মেরামতের কাজ। শুরুতে দুজনই থিতু হয়েছেন। পরে ধীরে ধীরে রান তুলেছেন। প্রতিপক্ষ শিবিরে শামি, অক্ষর, রানার মতো বোলারদের তাদের খেলতে হয়েছে ধীরে সুস্থে। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর নিজেদের সহজাত খেলাটা খেলে অনায়েসে রান তুলেছেন। এক পর্যায়ে প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান তুলেছেন।

৮৭ বলে জাকের ও তাওহীদ ৮৫ বলে ফিফটি তুলে নেন। জাকের ফিফটির পর ৬৮ রানে থেমে গেলেও তাওহীদ সেঞ্চুরি তুলে ক্ষান্ত হন। নব্বইয়ের ঘরে ঢোকার আগে কুলদীপ, জাদেজার বলে তার ছক্কা দর্শকদের আনন্দে ভাসায়। আবার পেসারদের পুল ও কাট শটেও মু্গ্ধতা ছড়ান।

কিন্তু সেঞ্চুরির আগে ক্র্যাম্প পড়ে মনোযোগ নড়ে যায় তার। শরীর আগাচ্ছিল না তার। রান নিতে ভুগছিলেন। এর আগে তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছিল ৯৬ নট আউট। এবারও কী তার সেঞ্চুরি পাওয়া হবে না? না দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এমন কিছু হলো না। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে, শামির করা বোলিংয়ে এক রান নিয়ে সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্কে পৌঁছান। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন তাওহীদ। ১৮৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ১১৮ বলে ১০০ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

বাংলাদেশের এই দুই ব্যাটসম্যানের লড়াই ছাপিয়ে আলোচনায় মোহাম্মদ শামি। ৫ উইকেট নিয়ে ডানহাতি পেসার ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। তাতে অন্যরকম এক রেকর্ডকেও সঙ্গী করেছেন। আইসিসি ইভেন্টে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন তার। ৬০ উইকেট পেয়েছেন শামি। ছাড়িয়ে গেছেন জহির খানের ৫৯ উইকেটের রেকর্ড।

এছাড়া চ্যাম্পিয়নিস ট্রফিতে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডটাও তারই দখলে। ৫৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন শামি। জাদেজা ২০১৩ সালে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন ৩৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র ক ট র কর ড ৫ উইক ট র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ