“প্রথমে সুতা দিয়ে আবু সাঈদের অবয়ব তৈরি করি। পরে সেই গঠন অনুযায়ী, রোপণ করা হয় দুই জাতের ধানের চারা। আমার সাথে ধান রোপণে সহযোগিতা করেন আরও কয়েকজন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাইদকে উৎসর্গ করেই ফসলের মাঠে ফুটিয়ে তুলেছি।”

এভাবেই নিজের অনুভূতির কথাগুলো বলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো.

এনামুল হক (৪১)। তিনি তার ফসলি মাঠে ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি।

তিনি কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল বেকাসাহারা গ্রামের মরহুম আবদুল আউয়ালের ছেলে। মা জোহরা বেগম (৬৫) ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তার শস্যচিত্র দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন, প্রশংসাও করছেন কেউ কেউ। এর আগে এনামুল গত বছর একই জমিতে শস্যচিত্রে ‘জাতীয় পতাকা’ ও ২০২২ সালে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তোলায় বেশ আলোচনায় আসেন।

এনামুল হক জানান, ২০২১ সালে প্রথম এক বিঘা জমিতে বেগুনি ধান রোপণ করেন। পরের বছর মাকে ভালোবেসে ব্যতিক্রম কিছু করার পরিকল্পনা করেন। সেই চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে বাংলায় ‘মা’ শব্দটি শস্যচিত্রে রূপ দেন। তখন তার মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। অনেক দর্শনার্থী সেই শস্যচিত্র দেখে প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে পরের বছর জাতীয় পতাকার শস্যচিত্র তৈরি করেন। আর এবার আঁকলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি।

উপজেলার টেংরা বাজার পাড় হলেই বেকাসাহারা গ্রামে মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের দক্ষিণ পাশের বিস্তীর্ণ ধানখেতে সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা শহীদ আবু সাঈদের অবয়ব চিত্র দেখে অনেকে থমকে যান। সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ ধানের জমিতে যেন দুই হাত প্রসারিত করে বিভিন্ন দাবি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুকে বুলেট পেতে নেওয়ার দৃশ্য দেখতে পেয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।

ফসলের মাঠ থেকে আবু সাঈদের ছবি তুলছিলেন ফরিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, “বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে শস্যচিত্র দেখতে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই এসেছেন। চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন এনামুল হক।”

আরেক দর্শনার্থী ইব্রাহীম খলিল জানান, ধান রোপণের সময় তিনি এ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে ধান গাছ রোপণের দৃশ্য দেখেছেন। এরপর ধান গাছ বড় হওয়া অবস্থায় এই দৃশ্য আবারও দেখতে এসেছেন।

সন্তানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে এনামুল হকের মা জোহরা বেগম বলেন, “আমার ছেলে শখ করে এগুলো করেছে। মা হিসেবে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। খারাপ তো কিছু করছে না। মানুষ তার প্রশংসা করে। আমিও তাকে উৎসাহ দিই।”

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, “কৃষক এনামুল হকের শস্যচিত্রের কথা শুনেছি। এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কৃষি শুধু খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম নয়, সৃজনশীলতারও একটি ক্ষেত্র বলা চলে।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৬১ বছরের ‘চিরকুমার’ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ‘একরোখা নেতা’ হিসেবে পরিচিত দিলীপ ঘোষ আজ নিজের চিরকুমারের তকমা ঘোচাবেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের বাসভবনে বিয়ে হবে। এ বিয়ে হবে অনাড়ম্বরভাবে। পাত্রী তাঁর দল বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী রিঙ্কু মজুমদার।

দিলীপ ঘোষের বাড়ি ঝাড়গ্রামে। এখন তিনি থাকছেন কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের আবাসিক এলাকায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছু বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

গ্রামের বাড়ি ঝাড়গ্রাম থেকে সপ্তাহখানেক আগে দিলীপের মা চলে এসেছেন কলকাতায়। ছেলের সংসার গুছিয়ে তিনি পরে ফিরে যাবেন তাঁদের ঝাড়গ্রামের বাড়িতে।

বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, দিলীপ ঘোষ দেখিয়ে দিলেন রাজনৈতিক জীবনের মতো তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও একই রকম ‘কালারফুল’। তিন কাউকে রেয়াত দিয়ে কথা বলেন না। দিলীপ ঘোষ তিন মাস ধরে প্রেমে হাবুডাবু খাচ্ছিলেন।

দিলীপ ঘোষ বহু বছর আগে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসে নাম লিখিয়েছিলেন। তখন শপথও নিয়েছিলেন তিনি ‘অকৃতদার’ থাকবেন।

আরএসএস অবশ্য ২০১৪ সালে দিলীপ ঘোষকে বিজেপিতে পাঠায়। ২০১৫ সালেই পেয়ে যান পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ। ২০২১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে লড়ে। পেয়ে যান ৭৭টি আসন। নতুন এক রেকর্ড গড়েন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়েছেন, লোকসভার সংসদ সদস্য হয়েছেন। হয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা।

এই বিয়ে নিয়ে দিলীপ ঘোষ মুখ না খুললেও তাঁর হবু স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দিলীপদাকে বহুদিন ধরে চিনি। ওকে ভালোও লাগে। মনের কথা খুলে বলা যায়। গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে প্রপোজ করেছিলাম। তিনি তিন মাস সময় চেয়েছিলেন। তারপর সেই সময় এসে গেল কিছুটা বিলম্বে।’

বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি সংঘমিত্রা চৌধুরী বলেছেন, ‘দিলীপদাকে অনেক শুভেচ্ছা। ওর দাম্পত্যজীবন অনেক সুখের ও সুন্দর হোক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ