১৯ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
Published: 20th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফে ফেরার পথে নাফ নদ থেকে মাছ ধরার চারটি নৌকাসহ ১৯ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, ঘোলারচর ও নাফ নদ নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি নাফ নদের মোহনা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া চার বাংলাদেশি জেলেকে এখনও ছাড়েনি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল বলেন, টেকনাফের ফেরার পথে আজকেও আমাদের ঘাটের মাছ ধরার দুটি ট্রলারসহ ৯ জন মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার। এর আগে ধরে নিয়ে যাওয়া ৬ জেলেকে এখনো ছেড়ে দেয়নি। তার ওপর এ ধরনের ঘটনা মাছ ব্যবসায়ীসহ জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া এটি সমাধানে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি আমরা।
এছাড়া শাহপরীর দ্বীপ মাঝপাড়া দুটি নৌকাসহ ১০ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শাহপরীর দ্বীপ মাঝারপাড়া নৌঘাটে সাধারণ সম্পাদক আবদুর গফুর।
তিনি বলেন, তার ঘাটের দুটি নৌকার মো.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ সীমান্তের বিজিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নাফ নদী থেকে ট্রলারসহ জেলেদের নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি তাদের দ্রুত ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এইমাত্র শুনেছি। এ ঘটনায় বিজিবির সাথে আলোচনা করে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চালানো হবে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মো. তারেক উর রহমান বলেন, প্রায় সময় জেলেদের মিয়ানমারে ধরে নিয়ে ঘটনা ঘটছে। এতে আমরা খুব চিন্তিত। কেননা এটি সমাধান না হলে জেলেরা মাছ শিকারে যাবে না। তাই এটি সমাধান না হলের জেলেদের মাঝে আবারও হতাশা দেখা যাবে।
এর আগে গত বছর ৬ অক্টোবর সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে ছয়টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ৫৮ জেলে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যান। তাদের ৯ অক্টোবর অপহরণ করে সে দেশের নৌবাহিনী। এ সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিড বোট থেকে বাংলাদেশি একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তাতে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে জেলেদের ফেরত দেওয়া হয়। তখন এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। এছাড়া সব শেষ ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত এনেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ফ নদ শ হপর র দ ব প আর ক ন আর ম
এছাড়াও পড়ুন:
নর্ববষের প্রথম প্রহরে ঘর আলো করে আসা ছোট মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে চান রাকিবুল
‘বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে আমাদের পরিবারে এসেছে স্বর্গীয় অতিথি, আসমানি পরী। এতে পহেলা বৈশাখের আনন্দে ভিন্ন মাত্র যুক্ত করেছে। সদ্য ভূমিষ্ঠ দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনের মাঝে বাসা বেঁধেছে নতুন স্বপ্নের। স্বল্প আয়ের সংসারে যত সংকট আসুক না কেনো ছোট মেয়েকে চিকিৎসক বানাবো।’
সোমবার পহেলা বৈশাখের দিনে মিরপুর-১ নম্বরে অবস্থিত মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার স্বাভাবকি প্রসব রুমের সামনে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সমকালের সঙ্গে এসব কথা বলেন বাবা রাকিবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অর্থ সংকটে নিজে পাড়াশোনায় ঠিকভাবে এগোতে পারেনি। তবে সন্তানকে সেই সংকট দেখতে হবে না। নিজের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ছোট সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে চাই। সন্তান চিকিৎসক হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনামূ্ল্যে সেবা করবে, এটা আমার স্বপ্ন। সে গর্ভে আসার আগে থেকে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছি। আশা করি, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি আমার দুই সন্তানকে সুস্থ রাখুক। আর কোনো সন্তান নিতে চাই না। আমরা এই দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।’
সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় ২নং শয্যায় শুয়ে রয়েছেন রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তার পাশে রয়েছে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান। সাদা দুধের মতো গায়ের রং। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানটির নাম রাখা হয়েছে। বাবা রাকিবুল ইসমালের বড় ভাই রাজীব আহমেদ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু নাম জেবিন তাবাসসুম রেখেছে। তাবাসসুমের বাবা বলেন, সন্তান গর্ভে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ও গর্ভের সন্তান যাতে সুস্থ এজন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়েছি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। নয় মাসে এই হাসপাতালের তিন বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। সব পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল। কোনো জটিলতা ছিল না।
গত রোববার বিকালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ভর্তি হয় জেসমিন আক্তার। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে সন্তান হওয়ার কথা ছিল। রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চিকিৎসকরাও আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। তারপর অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সকাল সাড়ে সাতটায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। আমিনবাজার থেকে ইজিবাইকে করে ১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে আসতে পেরেছি। নিজের ইজিবাইক থাকার কারণে যাতায়াতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গত সাত বছর ধরে ঢাকাতে থাকি। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসা। ভাড়া বাসায় থাকি। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। অল্প পড়াশোনা করার কারণে কোনো চাকরি হয়নি। ২০২২ সালে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। নিজে এখন ইজিবাইক চালাই। আমাদের প্রথম সন্তানের বয়স দেড় বছর। তার নাম রাবেয়া খাতুন। দ্বিতীয় সন্তান বৈশাখের প্রথম দিনে হবে এমন ধারণ বা কল্পনাও ছিল না। তবে বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে সন্তান হওয়ার কারণে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকেরা এসে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নার্স ও চিকিৎসকরা মা ও শিশুর আলাদা যত্ন নিয়েছেন। আর আমার বাবা নাতিনের জন্য নতুন জমা উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন। যদিও এখনও পরানো হয়নি। বাচ্চা হওয়ার পর বাজার থেকে নতুন তোয়ালে কেনা হয়েছে। এটি দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। এখন শিশুটি সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, শুধু ক্ষুধা লাগলে কান্না করে। মায়ের দুধই তার একমাত্র খাবার।
রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার গৃহিণী। বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকায় থাকেন। জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ভোলা। তিনি পড়াশোনা করেননি। জেসমিন সংসার সামলায় আর রাকিবুলের সময় কাটে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। শুধু রাতে স্বামী স্ত্রীর দেখা হয়। বাচ্চা দেখভাল করার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন জেসমিনের মা-বাবা।
জেসমিন আক্তার বলেন, বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম নেওয়াতে আলাদা আনন্দ আছে। তবে সুস্থ বাচ্চা পৃথীবিতে এসেছে, এটা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। প্রথম সন্তানটিও এই হাসপাতাল থেকে প্রসব করা।
জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. ইকবার কবীর বলেন, নবজাতকের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম। সাধারণত নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি হলে স্বাভাবিক ওজন ধরা হয়। তবুও আমরা এরইমধ্যে কিছু মৌলিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। অন্য কোনো জটিলতাও নেই। নবজাতক যদি সঠিকভাবে খেতে পারে তাহলে রক্ত পরীক্ষা লাগে না। স্বাভাবিক প্রসবের পর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার জেসমিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।