‘স্বপ্নে’ অবসান হলো সেই ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট
Published: 20th, February 2025 GMT
গত ৯ জানুয়ারি এনবিআরের মূসক আইন ও বিধি শাখার এক নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সুপারশপগুলোর ক্ষেত্রেও এই হার প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়।
এরপর সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সুপারমার্কেটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় ভ্যাটের হার কমানোর জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে সুপারশপের প্রতিনিধিগণ তিনটি সুনির্দিষ্ট ক্রেতাবান্ধব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেন এবং তারা ভ্যাটের যে আদর্শ পদ্ধতি রয়েছে তা অনুসরণের পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, ভ্যাটের স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে ১৫ শতাংশ মূসক পরিশোধ করে ক্রয়ের ওপর রেয়াত গ্রহণ করা। সেই নীতি অনুসারে সুপারশপগুলো যদি ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করে, তাহলে তারা অন্যান্য নিয়ম মেনে সহজেই ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবে। এই পদ্ধতিতে ক্রেতাদের বাজার করার পর সেই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বা বর্তমানে কার্যকর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট আর দিতে হবে না। পণ্য মূল্যের মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটির বাস্তবায়নে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দুপক্ষ আলোচনা করে নিরসনের জন্য সম্মত হন।
স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘‘দেশের সার্বিক অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি বিশাল চাপের মধ্যে আছে। আমি মনে করি, ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে মর্যাদার সাথে নিরাপদ, পুষ্টিমানসম্মত খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার অধিকার আপামর জনগণ সবার। আগে ৫ শতাংশ যে ভ্যাট ছিল সুপারশপে, সেটা সবার জন্য বাড়তি একটা খরচ ছিল। এখন সেই অতিরিক্ত খরচ আর থাকবে না। আশা করছি, এতে করে বাজার ব্যবস্থায় একটা সমতা আসবে।’’
সাব্বির নাসির আরো বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এনবিআর এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ভ্যাট বৈষম্যের বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। স্বপ্নে এখন থেকে ক্রেতাদের সেই ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে না। এ সাফল্য আপনার, আমার, আমাদের, সবার, সারা দেশের। ‘কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজার’ এই স্লোগান এখন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হতে চলেছে।’’
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সেরা ধনীদের প্রমোদতরি বিলাস, কোনটির দাম কত
ধনীদের নানা রকম শখ থাকে। একসময় বাংলাদেশের অভিজাত ধনীরা বিদেশি কুকুর পালতেন এবং বাড়ির সামনে ছোট্ট সাইনবোর্ডে ঝোলানো থাকত, ‘কুকুর হইতে সাবধান’। অভিজাত হওয়ার ক্ষেত্রে এটা ছিল অব্যর্থ লক্ষণ।
সময় পাল্টেছে। এখন দেশের ধনীদের শখ বদলেছে। নতুন শখের তালিকায় যুক্ত হয়েছে গাড়ি কেনা, রিসোর্টে ঘুরতে যাওয়া, বাগানবাড়ি করা—এ রকম আরও কত কী! সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনীদের শখও পাল্টেছে। সেই শখের তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত বিমান থেকে শুরু করে প্রমোদতরি। মোদ্দাকথা, দৈনন্দিন জীবনের ঝামেলা থেকে রেহাই বা নিষ্কৃতি পেতে ধনীরা প্রায়ই পার্টি করেন। সেই পার্টিতে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্রমোদতরি।
দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় সব অতি ধনীর প্রমোদতরি আছে। দিন কয়েকের খাবারদাবার ও পার্টির নানা অনুষঙ্গ সঙ্গে করে এই অতি ধনীরা সাগরে প্রমোদতরি নিয়ে ভেসে পড়েন।
ধনীরা বিলিয়ন বিলিয়ন বা শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেন এসব প্রমোদতরি নির্মাণে। ফোর্বস ম্যাগাজিন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৪০০ ধনীর প্রমোদতরি নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৪০০ ধনীর অন্তত ৬০টি প্রমোদতরি আছে। কারও কারও আছে একাধিক। এসব প্রমোদতরির দাম ৬০০ কোটি ডলার। ভেসেলস ভ্যালু নামের এক প্রতিষ্ঠান এসব প্রমোদতরির মূল্যমান নির্ধারণ করে থাকে। তাদের হিসাব অনুসারে, এসব প্রমোদতরির দাম ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এই ধনীদের কেউ কেউ একাধিক প্রমোদতরির মালিক। প্রমোদতরিকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলেন তাঁরা। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, এসব প্রমোদতরির দাম ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত। সুইমিংপুল থেকে শুরু করে হেলিপ্যাড—কী নেই এসব প্রমোদতরিতে। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরি কোনগুলো।
কোরুমালিক: জেফ বেজোস
দৈর্ঘ্য: ৪১৭ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৫০ কোটি ডলার
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এই প্রমোদতরির মালিক। এ তরির নির্মাণকারী ডাচ কোম্পানি ওশেনাকো। এটি চালানোর জন্য ঐতিহাসিক রটারডাম সেতু আংশিকভাবে ভেঙে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। এ নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছিল। এ তরির সাহায্যকারী তরির নাম আবেওনা। এর দাম ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ তরির দাঁড়ে এক নারীর ভাস্কর্য খোদিত আছে। ধারণা করা হয়, এটি বেজোসের বর্তমান বান্ধবী লরেন সানচেজের, যদিও তিনি এ দাবি অস্বীকার করেছেন।
কিসমেতমালিক: শহীদ খান
দৈর্ঘ্য: ৪০০ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৩৯ কোটি ডলার
কিসমেত নামের এই প্রমোদতরি তৈরি করা হয়েছে আরাম-আয়েশের জন্য। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, এ প্রমোদতরিতে সাত তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা আছে। এতে ম্যাসাজ থেকে শুরু করে ক্রায়োথেরাপি (অতি শীতল তাপমাত্রায় টিস্যুর চিকিৎসা) চেম্বার আছে। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা থিয়েটার, যাকে বলে ‘নেমে সিনেমা’। এই থিয়েটারে আছে ১৫০ ইঞ্চি টেলিভিশন, আছে জাহাজের ডুবে থাকা অংশে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ।
লঞ্চপ্যাডমালিক: মার্ক জাকারবার্গ
দৈর্ঘ্য: ৪০০ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৩৯ কোটি ডলার
এই প্রমোদতরির জগতে মার্ক জাকারবার্গ নতুন মানুষ, যদিও তিনি শুরু করেছেন বড় ছক্কা দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম প্রমোদতরি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফেডশিপ জাকারবার্গের এ প্রমোদতরি; অর্থাৎ লঞ্চপ্যাড তৈরি করেছে। বিলাসব্যসনের যা যা দরকার বা প্রমোদতরিতে যা যা থাকতে পারে, তার সবই জাকারবার্গের এ প্রমোদতরিতে আছে। যেমন দুটি হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল, চলন্ত মেঝে ও ডেক।
প্রজেক্ট ওয়াই ৭২২মালিক: গ্যাবে নিউয়েল
আকৃতি: ৩৬৪ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৩৩ কোটি ৫০ লাখ
মূল্যের দিক থেকে এটি চতুর্থ প্রমোদতরি, যদিও এটি এখন পর্যন্ত মালিকের হাতে পৌঁছায়নি। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি ওশানো তরিটি তৈরি করছে। এতে নিজস্ব ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র আছে। সেই সঙ্গে আছে ব্যাটারিতে শক্তি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে দীর্ঘ সময় কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ না করে এ তরি চলতে পারে। চলতি বছরেই এ তরি হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
নর্নমালিক: চার্লস সিমিওনি
দৈর্ঘ্য: ২৯৫ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ২৫ কোটি ডিলার
এ প্রমোদতরি তৈরি করেছে লারসেন নামের এক কোম্পানি। এর দাঁড় অনেকটা সামরিক যানের মতো। এর মালিক চার্লস সিমিওনি একসময় মাইক্রোসফটের মালিক ছিলেন। নর্নে আছে সিনেমা থিয়েটার, সুইমিংপুল ও উঁচুতে ওঠানো যায়—এমন মেঝে। এ মেঝেকে নাচের মেঝে হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
মার্কিন ধনীদের ব্যবহৃত দামি প্রমোদতরিগুলোর মধ্যে আরও আছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মুনরাইজ। এর মালিক হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কৌম। এরপর আছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের কাওস। ৩৬১ ফুট দীর্ঘ এ তরির মালিক ন্যান্সি ওয়ালটন লরি। ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার সম্ভাব্য মূল্যের ব্রাভো ইউজেনিয়ার মালিক জেরি জোন্স। ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের রাইজিং সান আছে এরপর। এর মালিক ডেভিড গেফেন। দশম স্থানে আছে ১৯ কোটি ডলার মূল্যের ফ্রাঙ্ক ফেরিতা-৩। এ জাহাজের দৈর্ঘ্য ২০৮ ফুট এবং এর মূল্য ১৯ কোটি ডলার।
অর্থনীতিতে অবদানদামি এসব প্রমোদতরি বা সুপারইয়ট নির্মাণের ব্যয় রীতিমতো পিলে চমকে দেওয়ার মতো। মার্কিন ধনীদের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এটি কেন্দ্র করে একধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আছে। এসব প্রমোদতরি নির্মাণে উচ্চমানের প্রকৌশল, নকশা ও দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এর বদৌলতে জাহাজনির্মাণ কারখানা, উপকরণ সরবরাহকারী ও দক্ষ শ্রমিকদের বিপুল আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দরকার হয় ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ইলেকট্রনিকস, অভ্যন্তরীণ সজ্জা ও বিলাসবহুল আসবাবের। তার সঙ্গে আছে রক্ষণাবেক্ষণ ও জাহাজের নাবিক-সহকারীদের বেতন–ভাতা—সব মিলিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম হয় এ শিল্প কেন্দ্র করে।