বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য বলছে, ক্রোক করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে এস কে সুর চৌধুরীর নামে সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট আর ধানমন্ডিতে তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর একটি ফ্ল্যাট। এর বাইরে এস কে সুরের মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর নামে থাকা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া এস কে সুর চৌধুরীর নামে থাকা ১২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর বাইরে এস কে সুরের স্ত্রী ও মেয়ের নামে থাকা ২৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

দুদক আদালতকে জানিয়েছে, এস কে সুর ও তাঁর স্ত্রী–মেয়ের নামে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, এস কে সুর চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজ নামে ও স্ত্রী–কন্যার নামে সম্পদ গড়েছেন।

গত ১৯ জানুয়ারি সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে দুদক। এ সময় সঞ্চয়পত্র ও বিমার প্রায় চার কোটি টাকার কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

১৪ জানুয়ারি এস কে সুর চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। আলোচিত পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের মার্চে তাঁকে দুদকে তলব করা হয়। এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এলডিসি উত্তরণ পেছানো যায় কি না—এই প্রশ্ন অবান্তর: আনিসুজ্জামান চৌধুরী

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এলডিসি উত্তরণ পেছানো যায় কি না—এই প্রশ্ন এখন অবান্তর। ২০২৬ সালে বাণিজ্য সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে, তা নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা দেবে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। ব্যবসায়ীরা যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত, তা দূর হয়ে গেছে।

আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এলডিসি উত্তরণ পর্যায়ে এবং উত্তরণ–পরবর্তীকালে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটি সার্বক্ষণিক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। এলডিসি উত্তরণে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের ব্যবস্থার সুপারিশ করবে। এ ছাড়া প্রস্তুতির বিষয়টিও দেখভাল করবে এই কমিটি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘তৈরি পোশাক রপ্তানি নিয়ে বেশি ঝাপটা আসবে বলে মনে করি না। প্রধান উপদেষ্টা এ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনও নানা ধরনের প্রস্তুতির সুপারিশ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এ জন্য একটি সেল গঠন করা হবে। আবার শুধু বাণিজ্য বিষয়ে দর-কষাকষির জন্য দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।’

‘আমরা এলডিসি উত্তরণের বিষয় আত্মবিশ্বাসী’—এমন মন্তব্য করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘উত্তরণ হব কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা ইতিমধ্যে “উড়তে” শুরু করেছি।’

আনিসুজ্জামান চৌধুরী উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘২০১৮ সালে জাতিসংঘের এলডিসি উত্তরণের প্রথম পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হয় বাংলাদেশ। এর মানে হলো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বিমানের পাইলটকে (বাংলাদেশ) বলা হয়েছে, আপনি রানওয়ের দিকে যেতে পারেন। ২০২১ সালে দ্বিতীয় পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বলা হলো, আপনি এবার টেক অফ করতে পারেন। এখন আমরা উড্ডয়ন অবস্থায় আছি। সামনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে।’

বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সুশাসনের অভাব, ব্যবসায় খরচ বেশি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব—এমন মত দেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি নিয়ে এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।

প্রো বাংলাদেশ কূটনীতি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সার্ককে পুনর্জীবিত করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ সার্কভুক্ত সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান তিনি। জাতিসংঘ, ডি-৮, ডেভোস—যেখানেই গেছেন, সার্কের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশের কূটনীতি হবে প্রো বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গ সংস্কার

কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে নির্বাচন, বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন—এমন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে। কবে নির্বাচন, তা নির্ভর করবে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সংস্কারে ঐকমত্যে পৌঁছাবে তার ওপর।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ