অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বিগত সময় (আওয়ামী সরকার) পুলিশ বাদী হয়ে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ৩৬ জুলাইয়ের পর রাজনৈতিক মামলা ও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হয়নি। বিগত সময় ৭০০ মানুষ গুম হয়েছে, বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। বিগত সরকার সাড়ে চার হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। ৩৬ জুলাইয়ের পর বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখনো মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি। ময়মনসিংহ নগরের একটি রিসোর্টে আজ বৃহস্পতিবার এক কর্মশালায় এ কথাগুলো বলেন তিনি।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক দিনব্যাপী এই কর্মশালা বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়। এতে বিভাগের চার জেলার বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মো.

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘১৯৭১ সালে লাখো মানুষের রক্ত ঝরেছিল। বিগত ১৫ বছরে যেসব মানুষ গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাঁদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। যারা ৩৬ জুলাই পর্যন্ত পাখির মতো গুলি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষী নিতে সময় লাগছে প্রসিকিউশনের।’ এ সময় তিনি মামলাগুলো ভিন্নভাবে দেখার জন্য বিচারকদের প্রতি অনুরোধ করেন।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সঙ্গে দেখেছি, গত ১৫ বছর কীভাবে ফ্যাসিজমকে লালন করেছেন, এখনো অনেকে মদদ দিচ্ছেন। ফ্যাসিজমকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা আছে। আমরা এসেছি ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করতে। আমরা এসেছি শহীদদের রক্তের দায় থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিতে। এ যাত্রায় ফেল করলে দেশের গণতন্ত্র সার্বভৌমত্ব হারাবে।’

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষক ও আইসিটি) লুৎফন নাহারের সঞ্চালনায় কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মাহবুবুর রহমান।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ কোনো অঙ্গ যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে তার প্রভার অন্যদের ওপর পড়ে। গত ৫ আগস্টের আগে কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে নানা অপকর্ম করেছেন। ৫ আগস্টের পর মামলার হিড়িক পড়ে। তখন মামলায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার আসামি দেওয়া হয়, কিন্তু কিছু করার ছিল না। নিরীহ কোনো লোককে গ্রেপ্তার না করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলাগুলোর তদন্তে যে অসুবিধা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বিচার বিভাগ বিবেচনায় নেবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণি। তিনি জানান, ঢাকার পর ময়মনসিংহে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই কর্মশালা হবে।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন, পুলিশের ডিআইজি আশরাফুর রহমান প্রমুখ।

কর্মশালায় জুলাই-আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতির পর পুলিশ ও বিচার বিভাগের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে এবং মানবাধিকার সমুন্নত রেখে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, জনগণ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব দূর করা, বিচার বিভাগ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার ও শাসন বিভাগ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন 

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন ও বাংলা ১৪৩২ বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে পৃথক পৃথক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দল-মত ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 

বর্ষবরণ সফল করতে বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহে সকাল ৮ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া প্রাঙ্গণ থেকে আরেকটি বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা দুটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।

র‍্যালি শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর কামরুল হাসান মিলন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মাহবুবুর রহমানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

র‍্যালি শেষে উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বেলুন উড়িয়ে শুভ নববর্ষের ঘোষণা করেন। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় জমান। পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানে বৈশাখী মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

এছাড়াও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পদযাত্রা ও নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে উপস্থিত ক্লাব সদস্যদেরকে বিনামূল্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিকেলে সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানো, লাঠি খেলা, রশি টানাটানি ও হা-ডু-ডু প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে পাঁচ দিন বজ্রসহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহে বাবা-ছেলে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি এক দিনের রিমান্ডে
  • ময়মনসিংহে বাবা-ছেলেকে হত্যার পর মাজার ও বাড়ি ভাঙচুর, নেপথ্যে কী
  • পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জেলায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি
  • ময়মনসিংহে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির ৮ সদস্যের অনাস্থা
  • ফুলবাড়িয়ায় বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তা‌র ৩
  • ময়মনসিংহে সালিসে না যাওয়ায় বাবা-ছেলেকে হত্যার ঘটনায় ৮৭ জনের নামে মামলা
  • ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন 
  • সালিশে না আসায় বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা
  • সালিসে না আসায় বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা