বিভিন্ন নফল নামাজের পরিচয় ও ফজিলত
Published: 20th, February 2025 GMT
নফল নামাজের পরিচয় ও প্রকারভেদ
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তে সতেরো রাকাত ফরজ নামাজ, তিন রাকাত ওয়াজিব বিতির নামাজ, চার ওয়াক্তে বারো রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা নামাজ, দুই ওয়াক্তে আট রাকাত সুন্নতে জায়েদা নামাজ ছাড়া অন্যান্য নামাজ হলো নফল নামাজ। নফল নামাজের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত হলো নির্ধারিত নফল নামাজ; যথা: তাহাজ্জুদ নামাজ, ইশরাক নামাজ, চাশত নামাজ, জাওয়াল নামাজ, আউওয়াবিন নামাজ। এ ছাড়া রয়েছে আরও কিছু অনির্ধারিত নফল নামাজ। ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ ছাড়া বাকি সব নামাজকেই নফল নামাজ বলা হয়। (কিতাবুস সালাত)।
নফল নামাজের নিষিদ্ধ সময়
সূর্যোদয়ের সময় সব নামাজ নিষিদ্ধ, সূর্য মাথার ওপর স্থির থাকা অবস্থায় নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি, সূর্যাস্তের সময় চলমান আসর ব্যতীত অন্য কোনো নামাজ বৈধ নয়। এ ছাড়া ফজর নামাজের ওয়াক্ত হলে তখন থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসর ওয়াক্তে ফরজ নামাজ পড়া হলে তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো ধরনের নফল নামাজ পড়া নিষেধ। এই পাঁচটি সময় বাদে অন্য যেকোনো সময় নফল নামাজ পড়া যায়। (আওকাতুস সালাত)।
নফল নামাজের নিয়ত
নফল নামাজগুলো অধিকাংশই সুন্নত। তাই নিয়তে সুন্নত বলা যাবে, নফল বললেও হবে; সুন্নত–নফল কোনো কিছু না বলে শুধু তাকবিরে তাহরিমা দিয়ে আরম্ভ করলেও হয়ে যাবে। দুই রাকাতের বেশি নফল নামাজের নিয়ত করে তা ছেড়ে দিলে বা যেকোনো জোড় সংখ্যা পূর্ণ হওয়ার পর বিজোড় সংখ্যায় নফল নামাজ ভেঙে গেলে; পরে এ জন্য শুধু দুই রাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে। (হিদায়া)
নফল নামাজের সুরা কিরাআত
নফল নামাজ যেকোনো সুরা বা আয়াত দিয়ে পড়া যায়। নফল নামাজে সূরার তারতিব বা ধারাক্রম জরুরি নয়। নফল নামাজের সূরা কিরাআত নীরবে পড়তে হয়; তবে রাতের নফল নামাজ ইচ্ছা করলে সরবেও পড়া যায়। বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন নফল নামাজের বিভিন্ন সূরা কিরাআত ও বিশেষ বিশেষ নিয়ম বর্ণিত আছে। সম্ভব হলে তা অনুসরণ করা উত্তম; তবে জরুরি নয়। নফল নামাজে যত ইচ্ছা তত দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করা যায়। এতে রাকাত দীর্ঘ করার জন্য এবং তিলাওয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একই রাকাতে বিভিন্ন সূরা ও বিভিন্ন আয়াত পড়া যায় এবং একই রাকাতে একই সূরা বারবার পড়া যায়। নফল নামাজে কিরাআতে তিলাওয়াতের তারতিব বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়। নফল নামাজে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘায়িত করা সুন্নত ও মোস্তাহাব। এ জন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য পর্বে বেশি পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া (যা কোরআন-হাদিসে আছে) পাঠ করা যায়। (কানজ)
তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ
অজু করার পরপরই এই নামাজ দুই রাকাত পড়তে হয়। ওয়াক্ত মাকরুহ হলে, মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নবী করিম (সা.
দুখুলিল মাসজিদের নামাজ
মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে, বসার আগেই দুই রাকাত দুখুলিল মাসজিদ নামাজ পড়তে হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন বসার আগেই তার দুই রাকাত নামাজ পড়া উচিত।’ (হাদিস)। তবে যদি মাকরুহ ওয়াক্ত হয়, তাহলে মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হলে পড়বে। এ জন্য বসে অপেক্ষা করতে পারবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)।
সালাতুস সফর এবং দুখুলিল মানজিল ও
খুরুজুল মানজিলের নামাজ
বাড়ি থেকে সফরে বের হওয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়া অতীব বরকতময়। এই নামাজকে সালাতুস সফর বা সফরের নামাজ বলা হয়। সফর থেকে বাড়ি ফিরলে বা সফরে গন্তব্যে পৌঁছালে অথবা সফরে কোথাও অবস্থান করলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে। এই নামাজকে সালাতু দুখুলিল মানজিল বা মঞ্জিলে প্রবেশের নামাজ বলে। একইভাবে বাড়ি থেকে সফরে বের হওয়ার সময় কিংবা সফর থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় বা সফরের মাঝে অবস্থান থেকে রওনা দেওয়ার সময় দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। এই নামাজকে সালাতুল খুরুজিল মানজিল বা মঞ্জিল থেকে প্রত্যাবর্তনের নামাজ বলে। (তান্বিহুল গাফিলিন)।
আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সালাতুল হাজাত
সালাতুল হাজাত প্রসঙ্গটি বুখারি, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাতসহ বহু হাদিস গ্রন্থে রয়েছে। পাক-পবিত্র হয়ে দোয়া, ইস্তিগফার ও কয়েকবার দরুদ শরিফ পড়ে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শেষে ১১ বার ‘ইয়া কাজিয়াল হাজাত’ (হে প্রয়োজন পূর্ণকারী) পড়বে এবং আরও কয়েকবার দরুদ শরিফ পড়ে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার জন্য দোয়া ও মোনাজাত করতে হবে। ইনশা আল্লাহ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।
সালাতু কাজায়িদ দাঈন বা ঋণ পরিশোধের নামাজ
হজরত আবু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার ঋণ আছে; কিন্তু তা পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই। উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি দুই রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করো; ইনশা আল্লাহ তোমার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে।
সালাতুল ফাকা
হজরত হুসাঈন (রা.) পুত্র আলী (রা.) কে বলেন, বত্স! শোনো, যখন তোমার ওপর কোনো বালা-মুসিবত আপতিত হয় অথবা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন তুমি চার রাকাত নফল নামাজ পড়বে। আলী ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি এই নামাজ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার বিপদ ও অভাব দূর করবেন।
সালাতুস শোকর
মনের কোনো আশা বা ইচ্ছা পূর্ণ হলে অথবা কোনো বিপদাপদ বা বালা-মুসিবত দূর হলে এবং আল্লাহর তরফ থেকে কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হলে দুই রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করতে হয়। একে সালাতুস শোকর বা কৃতজ্ঞতার নামাজ বলে।
সালাতুত তাওবা
সালাতুত তাওবা বিষয়টি আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদসহ অনেক গ্রন্থেই রয়েছে। কোনো গোনাহ হয়ে গেলে; দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে, তাওবা ইস্তিগফার করে, দরুদ শরিফ পড়ে কান্নাকাটিসহ আল্লাহর কাছে দোয়া ও মোনাজাত করলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। এই নামাজকে সালাতুত তাওবা বা তাওবার নামাজ বলা হয়।
সালাতুল মাতার
হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আকাশে মেঘ দেখে যদি কোনো ব্যক্তি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে; আল্লাহ তাকে বৃষ্টির প্রতি ফোঁটায় ১০টি করে নেকি দান করবেন। বৃষ্টির পানিতে গাছপালায় ও তৃণলতায় যত পাতা গজাবে প্রতি পাতার বিনিময়ে তাকে আরও ১০টি করে নেকি দেওয়া হবে।
সালাতুল নাউম
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শোয়ার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তা তার জন্য এক হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও এক হাজার জামাকাপড় (পোশাক) দান করার চেয়ে উত্তম।
সালাতুল সাকরাতুল মউত
হাদিস শরিফে আছে, যে ব্যক্তি মাগরিব ও এশার মাঝখানে দুই রাকাত নামাজ পড়বে; তার মৃত্যুযন্ত্রণা কম হবে। (সূত্র: ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, খাজিনাতুল আসরার, নফল সালাতের ফজিলত)।
পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজের ফজিলতমুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক: আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
সাত দিবস ও বিভিন্ন মাসের নফল নামাজউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নফল ন ম জ র র ন ম জ বল আল ল হ ত এই ন ম জ বল ছ ন র জন য ম কর হ হওয় র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
সেরা ধনীদের প্রমোদতরি বিলাস, কোনটির দাম কত
ধনীদের নানা রকম শখ থাকে। একসময় বাংলাদেশের অভিজাত ধনীরা বিদেশি কুকুর পালতেন এবং বাড়ির সামনে ছোট্ট সাইনবোর্ডে ঝোলানো থাকত, ‘কুকুর হইতে সাবধান’। অভিজাত হওয়ার ক্ষেত্রে এটা ছিল অব্যর্থ লক্ষণ।
সময় পাল্টেছে। এখন দেশের ধনীদের শখ বদলেছে। নতুন শখের তালিকায় যুক্ত হয়েছে গাড়ি কেনা, রিসোর্টে ঘুরতে যাওয়া, বাগানবাড়ি করা—এ রকম আরও কত কী! সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনীদের শখও পাল্টেছে। সেই শখের তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত বিমান থেকে শুরু করে প্রমোদতরি। মোদ্দাকথা, দৈনন্দিন জীবনের ঝামেলা থেকে রেহাই বা নিষ্কৃতি পেতে ধনীরা প্রায়ই পার্টি করেন। সেই পার্টিতে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্রমোদতরি।
দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় সব অতি ধনীর প্রমোদতরি আছে। দিন কয়েকের খাবারদাবার ও পার্টির নানা অনুষঙ্গ সঙ্গে করে এই অতি ধনীরা সাগরে প্রমোদতরি নিয়ে ভেসে পড়েন।
ধনীরা বিলিয়ন বিলিয়ন বা শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেন এসব প্রমোদতরি নির্মাণে। ফোর্বস ম্যাগাজিন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৪০০ ধনীর প্রমোদতরি নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৪০০ ধনীর অন্তত ৬০টি প্রমোদতরি আছে। কারও কারও আছে একাধিক। এসব প্রমোদতরির দাম ৬০০ কোটি ডলার। ভেসেলস ভ্যালু নামের এক প্রতিষ্ঠান এসব প্রমোদতরির মূল্যমান নির্ধারণ করে থাকে। তাদের হিসাব অনুসারে, এসব প্রমোদতরির দাম ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এই ধনীদের কেউ কেউ একাধিক প্রমোদতরির মালিক। প্রমোদতরিকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলেন তাঁরা। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, এসব প্রমোদতরির দাম ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত। সুইমিংপুল থেকে শুরু করে হেলিপ্যাড—কী নেই এসব প্রমোদতরিতে। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরি কোনগুলো।
কোরুমালিক: জেফ বেজোস
দৈর্ঘ্য: ৪১৭ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৫০ কোটি ডলার
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এই প্রমোদতরির মালিক। এ তরির নির্মাণকারী ডাচ কোম্পানি ওশেনাকো। এটি চালানোর জন্য ঐতিহাসিক রটারডাম সেতু আংশিকভাবে ভেঙে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। এ নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছিল। এ তরির সাহায্যকারী তরির নাম আবেওনা। এর দাম ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ তরির দাঁড়ে এক নারীর ভাস্কর্য খোদিত আছে। ধারণা করা হয়, এটি বেজোসের বর্তমান বান্ধবী লরেন সানচেজের, যদিও তিনি এ দাবি অস্বীকার করেছেন।
কিসমেতমালিক: শহীদ খান
দৈর্ঘ্য: ৪০০ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৩৯ কোটি ডলার
কিসমেত নামের এই প্রমোদতরি তৈরি করা হয়েছে আরাম-আয়েশের জন্য। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, এ প্রমোদতরিতে সাত তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা আছে। এতে ম্যাসাজ থেকে শুরু করে ক্রায়োথেরাপি (অতি শীতল তাপমাত্রায় টিস্যুর চিকিৎসা) চেম্বার আছে। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা থিয়েটার, যাকে বলে ‘নেমে সিনেমা’। এই থিয়েটারে আছে ১৫০ ইঞ্চি টেলিভিশন, আছে জাহাজের ডুবে থাকা অংশে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ।
লঞ্চপ্যাডমালিক: মার্ক জাকারবার্গ
দৈর্ঘ্য: ৪০০ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৩৯ কোটি ডলার
এই প্রমোদতরির জগতে মার্ক জাকারবার্গ নতুন মানুষ, যদিও তিনি শুরু করেছেন বড় ছক্কা দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম প্রমোদতরি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফেডশিপ জাকারবার্গের এ প্রমোদতরি; অর্থাৎ লঞ্চপ্যাড তৈরি করেছে। বিলাসব্যসনের যা যা দরকার বা প্রমোদতরিতে যা যা থাকতে পারে, তার সবই জাকারবার্গের এ প্রমোদতরিতে আছে। যেমন দুটি হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল, চলন্ত মেঝে ও ডেক।
প্রজেক্ট ওয়াই ৭২২মালিক: গ্যাবে নিউয়েল
আকৃতি: ৩৬৪ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ৩৩ কোটি ৫০ লাখ
মূল্যের দিক থেকে এটি চতুর্থ প্রমোদতরি, যদিও এটি এখন পর্যন্ত মালিকের হাতে পৌঁছায়নি। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি ওশানো তরিটি তৈরি করছে। এতে নিজস্ব ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র আছে। সেই সঙ্গে আছে ব্যাটারিতে শক্তি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে দীর্ঘ সময় কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ না করে এ তরি চলতে পারে। চলতি বছরেই এ তরি হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
নর্নমালিক: চার্লস সিমিওনি
দৈর্ঘ্য: ২৯৫ ফুট
সম্ভাব্য মূল্য: ২৫ কোটি ডিলার
এ প্রমোদতরি তৈরি করেছে লারসেন নামের এক কোম্পানি। এর দাঁড় অনেকটা সামরিক যানের মতো। এর মালিক চার্লস সিমিওনি একসময় মাইক্রোসফটের মালিক ছিলেন। নর্নে আছে সিনেমা থিয়েটার, সুইমিংপুল ও উঁচুতে ওঠানো যায়—এমন মেঝে। এ মেঝেকে নাচের মেঝে হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
মার্কিন ধনীদের ব্যবহৃত দামি প্রমোদতরিগুলোর মধ্যে আরও আছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মুনরাইজ। এর মালিক হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কৌম। এরপর আছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের কাওস। ৩৬১ ফুট দীর্ঘ এ তরির মালিক ন্যান্সি ওয়ালটন লরি। ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার সম্ভাব্য মূল্যের ব্রাভো ইউজেনিয়ার মালিক জেরি জোন্স। ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের রাইজিং সান আছে এরপর। এর মালিক ডেভিড গেফেন। দশম স্থানে আছে ১৯ কোটি ডলার মূল্যের ফ্রাঙ্ক ফেরিতা-৩। এ জাহাজের দৈর্ঘ্য ২০৮ ফুট এবং এর মূল্য ১৯ কোটি ডলার।
অর্থনীতিতে অবদানদামি এসব প্রমোদতরি বা সুপারইয়ট নির্মাণের ব্যয় রীতিমতো পিলে চমকে দেওয়ার মতো। মার্কিন ধনীদের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এটি কেন্দ্র করে একধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আছে। এসব প্রমোদতরি নির্মাণে উচ্চমানের প্রকৌশল, নকশা ও দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এর বদৌলতে জাহাজনির্মাণ কারখানা, উপকরণ সরবরাহকারী ও দক্ষ শ্রমিকদের বিপুল আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দরকার হয় ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ইলেকট্রনিকস, অভ্যন্তরীণ সজ্জা ও বিলাসবহুল আসবাবের। তার সঙ্গে আছে রক্ষণাবেক্ষণ ও জাহাজের নাবিক-সহকারীদের বেতন–ভাতা—সব মিলিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম হয় এ শিল্প কেন্দ্র করে।