দেড় মাসের মাথায় বিস্কুট-কেকের ওপর থেকে ভ্যাটের হার কমানো হয়েছে। মেশিনে প্রস্তুত ও হাতে বানানো—উভয় ধরনের বিস্কুটের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। বিস্কুটের মতো কেকের ওপরও একই হারে ভ্যাট আরোপ হবে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। এর আগে ৯ জানুয়ারি বিস্কুট ও কেকের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এখন তা আবার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে ভ্যাটের হার কমানো হলেও তা আগের জায়গায় আর আসেনি। আগের চেয়ে ভ্যাটের হার কিছুটা বাড়তিই থাকল।

ভ্যাট বাড়ানো হলেও গত দেড় মাসে বিস্কুট ও কেক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্কুট-কেকের দাম বাড়ায়নি। বরং তারা ভ্যাটের হার কমানোর জন্য এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার করে আসছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বর্ধিত ভ্যাট হার কমানোর পরও তা আগের ভ্যাট হারের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিস্কুট-কেকের বিদ্যমান দাম বহাল রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

গত মাসে আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ার ও কলার পাল্পসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়। এরপর বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে আপত্তি করে আসছিলেন।

ভ্যাট কমানো–সংক্রান্ত এনবিআরের আদেশে বলা হয়েছে, মেশিনে প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট (প্রতি কেজি ২০০ টাকার বেশি) এবং কেকের (প্রতি কেজি ৩০০ টাকার বেশি) ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করার কথাও বলা হয় আদেশে।

এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বিস্কুটের চাহিদার ৮০-৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হয়। বাজারে ৫, ১০ ও ১৫ টাকা দামের বিস্কুটের প্যাকেটের চাহিদা বেশি। সীমিত আয়ের মানুষ এসব বিস্কুট বেশি খান। তাই ভ্যাট বাড়ানোর ফলে এসব বিস্কুটের দাম বাড়লে তাতে সীমিত আয়ের মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ কারণে তাঁরা বিস্কুট–কেকের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ক র ওপর হ র কম ন

এছাড়াও পড়ুন:

সিএসআর ব্যয়ে মার্কেন্টাইল শীর্ষে

চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই–ডিসেম্বরে দেশি–বিদেশি ব্যাংকগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর খাতে প্রায় ৩০৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এ ব্যয়ের বড় অংশই গেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে। এ খাতের আওতায় ব্যাংকগুলো শীতার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কম্বল এবং বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে। সাধারণ ব্যাংকগুলো তাদের মুনাফার একটি অংশই সিএসআর খাতে ব্যয় করে। আর শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো মুনাফার পাশাপাশি সন্দেহজনক আয় ও জাকাত তহবিলের অর্থ সিএসআর খাতে ব্যয় করে থাকে।

দেশের সরকারি, বেসরকারি, বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে ২০২৪ সালের শেষ ছয় মাসের (জুলাই–ডিসেম্বর) সিএসআর ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক সিএসআর ব্যয় যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি ব্যাংকভিত্তিক আলাদা আলাদা খরচের তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।

গত বছরের শেষার্ধে বন্যার কারণে কিছু এলাকায় সহায়তা বেড়েছিল। এর ফলে খরচ বেড়েছে। সিএসআর ব্যয়ের পুরো অংশ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পেয়েছেন। মতিউল হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক

ব্যাংকগুলোর সিএসআর–সংক্রান্ত খরচের গত কয়েক বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের জুলাই–ডিসেম্বরের পর সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে কম অর্থ খরচ করেছে গত বছরের শেষ ছয় মাসে। ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসে এই খাতে ব্যাংকগুলো খরচ করেছিল প্রায় ২৯৮ কোটি টাকা। এরপর ২০২২ সালের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১৪ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালের জুলাই–ডিসেম্বরে সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলোর খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫৩ কোটি টাকা। তা গত বছরের শেষ ছয় মাসে কমে ৩০৭ কোটি টাকায় নেমেছে।

সিএসআর কার্যক্রমে গত বছরের শেষ ছয় মাসে খরচ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত রাজনৈতিক সরকারের সময়ে এ খাতে অর্থ খরচে ব্যাংকগুলোর ওপর নানামুখী চাপ থাকে। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য হয়ে বেশি খরচ করতে হয়। কিন্তু গত বছরের জুলাই আন্দোলন ও আগস্টে সরকার বদলের পর সিএসআরের অর্থ খরচে রাজনৈতিক চাপ কমে যায়। ফলে সিএসআর ব্যয়ও কমে। তবে গত বছরের আগস্টে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার ফলে ব্যাংকগুলো বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ায়। এ কারণে সিএসআর ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেনি।

সিএসআর ব্যয়ের শীর্ষে মার্কেন্টাইল ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের শেষ ছয় মাসে দেশে সিএসআর ব্যয়ের শীর্ষে ছিল বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকটি এ খাতে প্রায় ৩১ কোটি টাকা খরচ করেছে। এই তালিকায় ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক দ্বিতীয়, এক্সিম ব্যাংক তৃতীয়, ব্র্যাক ব্যাংক চতুর্থ ও যমুনা ব্যাংক পঞ্চম স্থানে ছিল। এ ছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডই শুধু বিদেশি ব্যাংক, বাকিগুলো দেশি। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু ব্যাংকের সিএসআর খাতে অতীতে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটেছে। সিএসআরের অর্থ লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সিএসআরের অর্থ ব্যয় নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের শেষ ছয় মাসে নতুন করে কিছু ব্যাংক সিএসআর ব্যয়ে ওপরের দিকে উঠে এসেছে। সাধারণত এসব ব্যাংক নিয়মিতভাবে তালিকার প্রথম দিকে থাকে না। আগে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো সিএসআর ব্যয়ে এগিয়ে ছিল। তাদের মাধ্যমে আগের সরকারের সুবিধাভোগীরা এ খাতের অর্থ হাতিয়ে নেন। ফলে অন্য ব্যাংকগুলো এখন শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। হঠাৎ এসব ব্যাংকের তালিকার শুরু দিকে উঠে আসার কারণ হলো, ডলারের অতিরিক্ত মুনাফার অর্থ সিএসআর খাতে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা। আবার ব্যাংকারদের উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণেও অর্থ জোগান দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মতিউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের শেষার্ধে বন্যার কারণে কিছু এলাকায় সহায়তা বেড়েছিল। এর ফলে খরচ বেড়েছে। সিএসআর ব্যয়ের পুরো অংশ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পেয়েছেন।

শর্ত মানেনি নতুন ব্যাংক

ব্যাংকগুলোকে প্রকৃত মুনাফার ১০ শতাংশ অর্থ সিএসআর খাতে খরচ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু সে শর্ত ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই মানেনি। এ রকম ব্যাংকগুলো হলো এসবিএসি, মধুমতি, মিডল্যান্ড, সীমান্ত, এনআরবি কমার্শিয়াল, ইউনিয়ন, মেঘনা, গ্লোবাল ইসলামী ও সিটিজেনস ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, শর্ত মেনে শুধু এনআরবি ও কমিউনিটি ব্যাংক মুনাফার ১০ শতাংশ সিএসআর খাতে খরচ করেছে। পদ্মা ও সিটিজেনস ব্যাংক মুনাফা না করায় সিএসআর ব্যয় করেনি।

দুটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, ২০২৪ সালের বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফায় বড় ধাক্কা এসেছে। পর্ষদ পুনর্গঠন হওয়া ইসলামি ও প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংকই লোকসানে পড়েছে। ফলে এসব ব্যাংক সিএসআর খাতে খরচ করতে পারেনি। এ জন্য সামনে অনেক ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় কমতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ