বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক আসামিকে গুম করে বন্দি রাখা অবস্থায় তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

আজ জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানসহ ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। 

সাবেক পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী ও বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকেও হাজির করা হয়। ৮ পুলিশ কর্মকর্তার মামলা ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এবং আলেপ উদ্দিন ও মহিউদ্দিন ফারুকীর মামলার তদন্ত ২৮ মে’র মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

শুনানি শেষে তাজুল ইসলাম বলেন, “আজ ট্রাইব্যুনালে কার্যতালিকায় প্রথমে ছিল পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে। সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ২৩ জন আসামিকে হাজির করার আদেশ ছিল। সেই মামলায় ৮ জন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের হাজির করা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রার্থণা করা হয়। আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। ৮ পুলিশ কর্মকর্তার তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন। আগামী ২৮ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। আলেপ উদ্দিন ও মহিউদ্দিন ফারুকীর মামলার তদন্ত ২৮ মে'র মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।”

পরে মহিউদ্দিন ফারুকীর বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, “তিনি অসংখ্য মানুষকে গুম করার সঙ্গে জড়িত। গুমের শিকার ভিকটিমদের তার অফিসে এবং আয়না ঘরে নির্যাতন সেলে অমানবিক নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করতেন। নির্যাতন করার ব্যাপারে তিনি একজন মাস্টারমাইন্ড।” 

আলেপ উদ্দিনের বিষয়ে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে মারাত্মক। তিনি অসংখ্য মানুষকে গুম এবং নির্যাতনের সাথে জড়িত। আজ আমাদের পেছনেও অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন। যাদের আলেপ উদ্দিন অপহরণ, গুম করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিলো। তাদের নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করেছিলো। ইলেকট্রিক শক দেওয়া, চোখ বেঁধে রাখা, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো,  বিদ্যুতায়িত করা হয়। সবচেয়ে মারাত্মক যেটা করেছিলেন সেটা হলো, একজন আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে তার স্বামীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করে। এই তথ্য প্রমাণাদি প্রসিকিউশনের কাছে এসেছে। এরকম  নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম অপরাধী যারা তাদের তদন্ত কাজ পরিচালনা করতে সময় লাগবে।”

বিসিএস পুলিশের ৩১ ব্যাচের আলেপ উদ্দিন ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ ও র‌্যাব-১১ তে কর্মরত ছিলেন। সরকার পতনের পর থেকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে ডিবি পরিচয়ে তাকে আটকের দুই দিন পর গত ১৪ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসে আলেপ।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ সম্পর্কিত একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন।

আলজাজিরার সাংবাদিক মউদুদ সুজন ফেসবুকে পোস্টটি লিখেছেন। সেই পোস্টে লেখা হয়, গুম হওয়া স্বামী বলছেন, পবিত্র শবেকদরের দিন রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করা হয় তার স্ত্রীকে। এর আগেও প্রায় তিনবার ধর্ষণ করা হয়েছে স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে। শেষবার ধর্ষণের পর স্ত্রীর মানসিক অবস্থার অবনতি হয় এবং কিছুদিন পরে মৃত্যুবরণ করেন।

সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ধর্ষক র‍্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাম আলেপ। স্বামী সবকিছু হারিয়ে যখন আলেপকে বারংবার ফোন দিতে থাকে আলেপ রিপ্লাইয়ে জানান, বন্দি মেয়ে বা বন্দি পুরুষদের স্ত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ এখানে অলিখিতভাবে স্বীকৃত।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, মানুষ কতটা নীচুতে নামলে নিজের মা/স্ত্রী/মেয়ে থাকা সত্ত্বেও একজন বন্দির স্ত্রীকে এমনভাবে ট্রিট করে! এই র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপের বিচার সবার আগে হওয়া উচিত।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ জ র কর র তদন ত গ ম কর অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদল সভাপতি হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি

নুর ইসলামকে সভাপতি ও রীমন আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এই কমিটি ঘোষণার পরপরই সভাপতি পদ পাওয়া নুর ইসলামের কিছু পুরোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা এসব ছবি নিয়ে সংগঠনের ভেতরে সমালোচনা চলছে।

নুর ইসলাম ছাত্রলীগের কোনো পদে না থাকলেও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজ ছাত্রদলের একটি পক্ষ। তিনি কলেজের একটি হলে ‘ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও’ ছিলেন বলে অভিযোগ তাঁদের। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বলছে, নূর ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আসছেন।

রোববার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম (রাকিব) ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রামেক ছাত্রদলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে। সভাপতি পদ পাওয়া নুর ইসলাম ২০২৩ সালে এমবিবিএস শেষ করেছেন।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নূরের ছবিগুলো আমরাও পেয়েছি। রাতেই আমরা দেখেছি। এখন তার কলেজের অধ্যক্ষ এবং একজন স্বাচিপ নেত্রী-তাদের সঙ্গে তো ছবি তুলতেই পারে। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে যায়নি; বরং ওই ফ্যাসিস্টের আমলে সে আমাদের দলে কর্মসূচিতেই দীর্ঘদিন থেকে আছে।’

দরিদ্র মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচিতে নূর ইসলাম (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রাবন্তীর শরীরে আপত্তিকর স্পর্শ, তেড়ে গেলেন নায়িকা
  • দিনে ব্যাংকে চাকরি, রাতে ইজিবাইক চালান খসরু
  • বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তির আইন সংশোধনের দাবি
  • মেসি–নেইমার নেই ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচে, নায়ক হবেন কে
  • চান্দিনায় এনজিও কর্মী নারীকে নগ্ন করে নির্যাতনের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • টেস্ট ড্রাইভের কথা বলে গাড়ি ছিনতাই, বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার
  • সন্‌জীদা খাতুন—শ্রদ্ধা ও সমীহের সঙ্গে উচ্চারিত একটি নাম
  • কাজ শেষ করতে পারেনি স্বাস্থ্যের সংস্কার কমিশন
  • অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা-গ্রেপ্তার
  • ছাত্রদল সভাপতি হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি