গাজাযুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। দেশটিতে গত বছর মুসলিমবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ছয় হাজার, যা এর আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতি থেকে সংঘটিত নানা ঘটনার ওপর নজর রাখে এমন একটি সংগঠন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ‘টেল মামা’ নামের এ সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। তারা বলেছে, গত বছর নারীদের তুলনায় মুসলিমবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের শিকার বেশি হয়েছেন পুরুষেরা।

সামনাসামনি যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বিদ্বেষমূলক আচরণ, শারীরিক নিপীড়ন, বিভেদ সৃষ্টি ও ভাঙচুরের। অধিকাংশ হামলা হয়েছে সড়ক এবং উদ্যানের মতো খোলা জায়গায়, যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকে। কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনা কম ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজাযুদ্ধ শুরু হওয়া ও সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষী কথাবার্তা অনেক বেড়েছে, মুসলিমদের সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলেও মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে।

সরকারের একজন মুখপাত্র এ পরিস্থিতিকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক ঘটনা যেখানেই ঘটুক সরকার তা নির্মূল করতে চায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষের ৬ হাজার ৩১৩টি ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। এসব ঘটনার মধ্যে ৫ হাজার ৮৩৭টি অভিযোগ যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে টেল মামা।

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের এক বড় অংশ সড়ক ও অনলাইনে মুসলিমবিরোধী ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। যাঁরা শিকার হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ও তাঁদের জন্য কাজ করা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন।ইমান আতা, টেল মামার পরিচালক  

সংগঠনটি বলেছে, তাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী অফলাইনে এসব ঘটনার মাত্রা বেড়েছে। তারা এমন ৩ হাজার ৬৮০টি ঘটনার কথা জেনেছে, দুই বছর আগের তুলনায় যা ৭২ শতাংশ বেশি।

প্রত্যক্ষ যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বিদ্বেষমূলক আচরণ, শারীরিক নিপীড়ন, বৈষম্য ও ভাঙচুরের। অধিকাংশ হামলা হয়েছে সড়ক ও উদ্যানের মতো খোলা জায়গায়, যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকে। কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনা কম ঘটেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেদিন থেকে তারা এ ধরনের ঘটনার ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে, সেদিন থেকে এবারই (২০২৪ সাল) প্রথম নারীদের তুলনায় পুরুষদের মুসলিমবিদ্বেষের শিকার বেশি হতে দেখছে তারা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজাযুদ্ধ শুরু হয়। আর সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ড হয় গত বছরের জুলাই মাসে। সেখানে একটি নাচের ক্লাসে তিনটি ছোট্ট মেয়েকে হত্যা করা হয়। গত বছর ইসলামভীতি থেকে অনলাইনে মুসলিমবিদ্বেষের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার অর্ধেকের বেশি ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ডের পর।

ওই হত্যাকাণ্ডের পর হামলাকারীর পরিচয় নিয়ে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে নাগরিক জীবনে তীব্র বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খলা পরে যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়ায়।

সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ডে আদালত এক্সেল রুডাকুবানা নামে ১৮ বছরের এক তরুণকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। রুডাকুবানার জন্ম কার্ডিফে। তাঁর মা–বাবা রুয়ান্ডা থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজাযুদ্ধ শুরু হয়। আর সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ড হয় গত বছরের জুলাই মাসে। সেখানে একটি নাচের ক্লাসে তিনটি ছোট্ট মেয়েকে হত্যা করা হয়। গত বছর ইসলামভীতি থেকে অনলাইনে মুসলিমবিদ্বেষের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার অর্ধেকের বেশি ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ডের পর।

টেল মামার পরিচালক ইমান আতা মুসলিমবিদ্বেষের ঘটনা কমাতে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের এক বড় অংশ সড়ক ও অনলাইনে মুসলিমবিরোধী ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। যাঁরা শিকার হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ও তাঁদের জন্য কাজ করা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন।’ জনগণকে ঘৃণা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মুসলিমদের ওপর হামলা ও ঘৃণার প্রকাশ সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের সমাজে এর কোনো জায়গা নেই।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে মুসলিমবিদ্বেষ ০২ এপ্রিল ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য সব ঘটন গত বছর বছর র ইসল ম সরক র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসকদের জন্য আলাদা ক্যাডারের সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন

চিকিৎসকদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য ক্যাডার প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশন, যার নাম হবে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস’।

কমিশনের প্রতিবেদনে কিছু রোগনির্ণয় পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া, ওষুধের দাম সাশ্রয়ী রাখা, চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির সম্পর্কের বিষয়ে নীতিমালা করা, বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা এবং সেখানে দরিদ্রদের চিকিৎসার সুযোগ রাখাসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ থাকবে।

স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনের এসব বিষয় সম্পর্কে জানা গেছে। কমিশন তাদের প্রতিবেদন পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির আগেই জমা দিতে পারে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশন তাদের কাজের সুবিধার্থে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সিক্স বিল্ডিং ব্লকস’ নামে পরিচিত কাঠামোকে বেছে নিয়েছে। এই কাঠামোয় আছে ছয়টি উপাদান, যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তি বা মৌলিক উপাদান বলে গণ্য করা হয়। এগুলো হলো স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য জনবল, স্বাস্থ্য তথ্যব্যবস্থা, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, স্বাস্থ্যে অর্থায়ন এবং নেতৃত্ব-সুশাসন। একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের পরিস্থিতি কী, তা জানা-বোঝার জন্য এগুলোকে নজরদারি ও পর্যালোচনার হাতিয়ার বা টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কমিশনের ছয়জন সদস্যকে ছয়টি বিষয়ের প্রধান করে দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে প্রত্যেক সদস্য একে অন্যকে তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করার কাজে সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে।

কমিশনের একাধিক সদস্য এবং কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন জনগণের মনোভাব, চাহিদা ও পরামর্শ জানার জন্য সাত বিভাগে (ঢাকা বিভাগ বাদ) সাতটি কর্মশালা বা সেমিনার করেছে। ঢাকায় পৃথকভাবে বিভিন্ন সংগঠন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে সভা-সেমিনার করে পরামর্শ নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটি বা সংগঠনের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছে বা তাদের কাছ থেকে লিখিত মতামত নিয়েছে কমিশন।

কমিশনের অনুরোধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশব্যাপী একটি জনমত জরিপ করেছে। ওই জরিপে উঠে আসা মানুষের মতামত ও চাহিদাকেও কমিশনের প্রতিবেদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা নিজেরা অন্তত ৩৫টি বৈঠক করেছেন।

তবে অভিযোগ আছে, দেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্যবিদ ও ওষুধবিশেষজ্ঞকে এই কমিশন এড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে কাজ করছেন, এমন বিশেষজ্ঞকে অর্থায়নের পরামর্শ সভায় আহ্বান না জানিয়ে ডাকা হয়েছে নেতৃত্ব-সুশাসনবিষয়ক সভায়। অন্যদিকে খাদ্য, কৃষি ও পানির সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্কের বিষয়গুলো সংস্কার কমিশনের কাছে গুরুত্ব পায়নি বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে। তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের একজন সদস্য ছাত্র প্রতিনিধি, তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। একজন সাবেক আমলা। অন্য সবাই চিকিৎসক। ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে ৩১ মার্চ করা হয়।

নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশে কী থাকছে

সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের সুপারিশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করে তিনজন সিনিয়র সচিব নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বিভাগ তিনটি হলো চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাশিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য। এখন বিভাগসংখ্যা দুটি (স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ)।

কমিশনের সুপারিশে তিন বিভাগের সমন্বয়ের জন্য একজন মুখ্য সচিবকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হতে পারে। মুখ্য সচিব ও সচিবেরা হবেন চিকিৎসক। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রয়েছেন।

এর আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের পরিবর্তে স্বতন্ত্র বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস নামকরণ করার সুপারিশ করেছিল। এ ক্ষেত্রে তারা সার্ভিসের জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি ও পরীক্ষার কাজের জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন করার সুপারিশ করেছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তিনটি বিভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমলাদের খবরদারি কমানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তিনটি বিভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছি—ক্লিনিক্যাল বিভাগ, প্রশাসন বিভাগ এবং চিকিৎসাশিক্ষা ও গবেষণা বিভাগ। চিকিৎসকেরা যেন একটি নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নেন, তার জন্য সুনির্দিষ্ট বিভাজনের কথা আমরা বলেছি।’

জামায়াত–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) সংস্কার কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবে তিনটি পৃথক অধিদপ্তর করার বলেছিল—জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাসপাতালসেবা অধিদপ্তর ও চিকিৎসাশিক্ষা অধিদপ্তর।

সূত্র জানায়, কমিশন একটি স্বাস্থ্য কমিশনের প্রস্তাব করবে। এই কমিশন পুরো স্বাস্থ্য খাত তদারকি করবে, এর কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। এই কমিশন থাকবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহীর অধীন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে ফুড, ড্রাগ অ্যান্ড ডিভাইস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করার প্রস্তাব করবে কমিশন।

কমিশন ‘রিজিওনাল হেলথ সার্ভিসেস’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করবে। পাশাপাশি থাকবে বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বোর্ড করা, শয্যার ১০ শতাংশ গরিব রোগীর জন্য রাখা, ওষুধ কোম্পানির মালিকদের হাসপাতালের মালিক হওয়া থেকে বিরত রাখা, চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির সম্পর্কের ক্ষেত্রে নীতিমালা করা এবং উপহারসামগ্রী দেওয়া ও নেওয়া থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ।

কমিশনের একাধিক সদস্য বলেছেন, দেশের সব মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকার যেন আইনগতভাবে বাধ্য থাকে, তার সুপারিশ কমিশনের প্রতিবেদনে রাখা হচ্ছে। এই বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা তাঁরা বলবেন। তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সংজ্ঞা বা পরিধি কী হবে, তা বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার পর ঠিক করতে হবে।

একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ওষুধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ থাকছে কমিশনের প্রতিবেদনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা দেশের মানুষের প্রয়োজনমতো হালনাগাদ করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। কমিশন বলছে, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় থাকা প্রায় ৩০০টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করবে সরকার। এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) শক্তিশালী করার প্রস্তাবও কমিশন রাখছে। পাশাপাশি জাতীয়ভাবে ওষুধ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওষুধের কাঁচামাল বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপারে কমিশন প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

কমিশনের একজন সদস্য গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ওষুধের মান ও দামের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের প্রস্তাব থাকবে, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে যেন ওষুধের জেনেরিক নাম (মূল বৈজ্ঞানিক নাম) ব্যবহার করা হয়।

সরকার কী করতে চাইছে

স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিশন প্রতিবেদনে মূলত সাতটি গুচ্ছে ভাগ করে সংস্কারের যৌক্তিকতা ও সুপারিশ করবে। গুচ্ছগুলো হলো স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য জনবল, স্বাস্থ্য জনবল উন্নয়ন, স্বাস্থ্য তথ্যব্যবস্থা, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, স্বাস্থ্যে অর্থায়ন এবং সুশাসন।

দেশের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার জরুরি—এমন আকাঙ্ক্ষা বেশ পুরোনো। চিকিৎসার মান নিয়ে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে নানা অভিযোগ রয়েছে। আছে জনবলসংকট। দেশের বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর দেশের বাইরে যান। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বহুল আলোচিত একটি বিষয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর পুরো স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করার এমন সুযোগ আসেনি।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তারা নিজেরা কিছু সংস্কারকাজের প্রস্তুতি নিয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা সংস্কারে হাত দেবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য একটি পৃথক সেল গঠন করার চিন্তাও মন্ত্রণালয়ের আছে। রাজনৈতিক সরকারের জন্য করা কঠিন, এমন কিছু সংস্কারকাজ অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করে দিয়ে যেতে চায়।

এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া ও করণীয় জনসমক্ষে প্রকাশ করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ