সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে যা জানা গেল
Published: 20th, February 2025 GMT
ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপের সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মতো সৌরজগতের বাইরে থাকা টাইলোস বা ওয়াসপ-১২১বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, টাইলোস একটি বড় গ্যাসীয় গ্রহ, যা নক্ষত্রের বেশ কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করছে। উত্তপ্ত গ্রহটির বায়ুমণ্ডল প্রধানত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে তৈরি হয়েছে। আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল এভাবেই বিকশিত হয়েছে। আর তাই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের ত্রিমাত্রিক কাঠামো নতুন তথ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে।
টাইলোস গ্রহের বায়ুমণ্ডলে তিনটি স্তর রয়েছে। অবিশ্বাস্য তাপের কারণে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের একেবারে নিচের স্তরে গ্যাসীয় আকারে লোহা ও মাঝের স্তরে সোডিয়াম রয়েছে। শুধু তা–ই নয়, গ্রহটির চারপাশে সোডিয়ামের একটি স্রোত বৃত্তাকারভাবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ হাজার কিলোমিটার গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তাই আমাদের সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের তুলনায় টাইলোস গ্রহে বাতাসের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি।
ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির বিজ্ঞানী জুলিয়া ভিক্টোরিয়া সিডেল বলেন, ‘এমন কাঠামো আগে কখনো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। অন্য গ্রহে বায়ুমণ্ডল কীভাবে আচরণ করে, তার সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় আকারে টাইটানিয়ামের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে লোহা বা টাইটানিয়াম পাওয়া যায় না। আমাদের গ্রহের নিম্ন তাপমাত্রার কারণে এসব ধাতু এখানে কঠিন আকারে অবস্থান করছে। যদিও পৃথিবীর ওপরের বায়ুমণ্ডলে একটি সোডিয়াম স্তর রয়েছে।’
টাইলোস গ্রহের ভর মোটামুটি বৃহস্পতির সমান। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৯০০ আলোকবর্ষ দূরে পপিস নক্ষত্রমণ্ডলের কাছে অবস্থিত। গ্রহটির এক পাশের তাপমাত্রা প্রায় ৪ হাজার ৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অন্য পাশের তাপমাত্রা প্রায় ২ হাজার ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। গ্রহটি পৃথিবীর হিসেবে ১ দশমিক ৩ দিনে নিজ কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে থাকে। আর তাই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের গঠন নিয়ে আরও জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে: দাবি বিজ্ঞানীদের
সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বিজ্ঞানীরা এমন গ্যাসের রাসায়নিক চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন, যা কেবল পৃথিবীতে জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে করা এক পর্যবেক্ষণে এমন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটিকে বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহে সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্বের সবচেয়ে শক্ত প্রমাণ বলে উল্লেখ করেছেন।
ওয়েব টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে কে২-১৮ বি নামের একটি গ্রহে দুটি গ্যাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এগুলো হলো ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (ডিএমডিএস)। এসব গ্যাস পৃথিবীতে জীবন্ত প্রাণী, বিশেষ করে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের (একধরনের শৈবাল) মতো জীবন্ত অণুজীব থেকে উৎপন্ন হয়। এসব গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়ার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহটিতে বিপুল পরিমাণে অণুজীব থাকতে পারে।
ওয়েব টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে কে২-১৮ বি নামের একটি গ্রহে দুটি গ্যাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এগুলো হলো ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (ডিএমডিএস)। এসব গ্যাস পৃথিবীতে জীবন্ত প্রাণী, বিশেষ করে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের (একধরনের শৈবাল) মতো জীবন্ত অণুজীব থেকে উৎপন্ন হয়। এসব গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়ার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহটিতে বিপুল পরিমাণে অণুজীব থাকতে পারে।বিজ্ঞানীরা অবশ্য জোরালোভাবে বলেছেন, তাঁরা প্রকৃত জীবন্ত প্রাণীর অস্তিত্ব আবিষ্কারের ঘোষণা দিচ্ছেন না। বরং তারা সম্ভাব্য জৈব চিহ্নের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা বলছেন, যা একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার সংকেত। তাঁরা মনে করেন, এ কারণে এই আবিষ্কারকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত এবং আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
এরপরও বিজ্ঞানীরা এ আবিষ্কারের বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোনমি ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট এবং ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’ এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক অধ্যাপক নিক্কু মধুসুদন বলেছেন, এটি প্রথম কোনো ভিনগ্রহের ইঙ্গিত, যা সম্ভবত বসবাসযোগ্য।
মধুসুদন আরও বলেন, ‘এটি সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। আমরা প্রমাণ করেছি, বর্তমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহে জৈব চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব। আমরা পর্যবেক্ষণমূলক অ্যাস্ট্রোবায়োলজির (মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা) যুগে প্রবেশ করেছি।’
সৌরজগতে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার জন্য নানা প্রচেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেছেন মধুসূদন। এর মধ্যে মঙ্গল, শুক্র এবং বরফাচ্ছাদিত চাঁদের মতো স্থানগুলোয় প্রাণের অস্তিত্ব থাকার উপযোগী বিভিন্ন পরিবেশ শনাক্ত করার মতো দাবিগুলো আছে।
কে ২- ১৮ বি গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ৮ দশমিক ৬ গুণ বড় এবং এর ব্যাসার্ধ আমাদের গ্রহের চেয়ে প্রায় ২ দশমিক ৬ গুণ বড়। গ্রহটি একটি লাল বামন তারার চারপাশে এমন কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে, যাকে ‘বাসযোগ্য অঞ্চল’ বলা হয়। সেখানে তরল পানির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য। ওই তারাটি আমাদের সূর্যের চেয়ে আকারে ছোট এবং কম উজ্জ্বল। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। জোতির্বিদ্যার ভাষায় এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকেই আলোকবর্ষ বলা হয়। আলো এক বছরে প্রায় ৫ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মাইল (৯ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার) অতিক্রম করে। লাল বামন তারার চারদিকে আরেকটি গ্রহের অস্তিত্বও শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
‘হাইসিয়ান জগৎ’১৯৯০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫ হাজার ৮০০টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যেগুলোকে এক্সোপ্ল্যানেট বলা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হাইসিয়ান জগৎ নামে পরিচিত এক্সোপ্ল্যানেটগুলো তরল পানির একটি মহাসাগর নিয়ে গঠিত এবং সেখানে অণুজীব বসবাসের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে। এই গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল অণুজীব ও হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ বলে মনে করা হয়।
২০২১ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের যাত্রা শুরু হয়। এটি ২০২২ সালে কার্যক্রম শুরু করে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে আগের পর্যবেক্ষণে কে২-১৮ বি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শনাক্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত পুরোনো ও নতুন সব তথ্য বিশ্লেষণ করে একমাত্র যে ব্যাখ্যাটি যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে, তা হলো কে২-১৮ বি একটি হাইসিয়ান জগৎ, যা প্রাণে পরিপূর্ণ হতে পারে।’ তবে তিনি মনে করেন, অন্যান্য সম্ভাবনাও অনুসন্ধান করে যেতে হবে।