বরিশাল বিভাগকে বলা হতো ‘বাংলার শস্যভান্ডার’ আর পটুয়াখালী তারই অংশ। জলবায়ু পরিবর্তন ধীরে ধীরে পটুয়াখালীকে দেশের অন্যতম দরিদ্র জেলা বানিয়েছে; কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পুরোনো প্রভাবের পাশাপাশি নতুন নতুন সমস্যার মুখে ফেলছে পটুয়াখালীর মানুষকে। ফলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে জীবন-জীবিকা, ঝরে পড়ছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য। নারীরা পড়ছেন যৌনস্বাস্থ্যের জটিল সব সমস্যার মুখে। বাধ্য হয়ে জলবায়ু আর দারিদ্র্যের কাছে মানুষ অসহায় আত্মসমর্পণ করছে অথবা এলাকা ছাড়ছে।

ডিসেম্বরের হিম হিম সকাল। দোচালা টিনের ঘরের বারান্দায় কাঁথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন এক বয়োজ্যেষ্ঠ। চরের সবাই তাঁকে একনামে চেনেন—মতলেব মল্লিক। প্রবীণ মতলেবের চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে শ্রম আর লড়াইয়ের চিহ্ন। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করা মতলেবের চোখে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় গোর্কির স্মৃতি এখনো ভয় ধরায়। তিনি বলেন, ‘সে কি ভয়ংকর ঝড়। কোথাও মাটি দ্যাহা যায় না; ঘরবাড়ি দ্যাহা যায় না। চারদিক পানি আর পানি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার এমন গল্প পটুয়াখালীর ঘরে ঘরে আছে। গত ৩ থেকে ৯ ডিসেম্বর জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে জলবায়ু যুদ্ধের মুখোমুখি হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পটুয়াখালী এখন দেশের অন্যতম দরিদ্র জেলায় পরিণত হয়েছে।

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়ায় মতলেব মল্লিকের সঙ্গে কথা হয়। ’৭০–এর ঘূর্ণিঝড়ে নারকেলগাছের আগায় লটকে বেঁচে ছিলেন মতলেব; কিন্তু পরদিন বাড়ি ফিরে দেখেন—মা, স্ত্রী, এক ছেলে ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘মাইয়াডা নাই, বোনডাও নাই, ঘরবাড়ি উধাও; ১৫ জোড়া গরু–মহিষ, ধানের গোলা কিচ্ছু নাই’—এখনো দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বিশাল জমিতে আমনের সময় ৫০০-৬০০ মণ ধান হতো তাঁদের, সেই জমিজমা সব পানিতে।

দুর্যোগের ধাক্কা থামে না মতলেবের জীবনে। আরও চারবার ঘরবাড়ি ভেঙেছে তাঁর। জমিজমা, সম্পত্তি যা কিছু ছিল, সব ছিনিয়ে নিয়েছে ঝড়, বন্যা আর নদীভাঙন। ঘরের ভিটা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল; পরে চালিতাবুনিয়া বাজারের পশ্চিমে একখণ্ড জমি কিনে বাড়ি করে সেখানেই ছেলেদের সংসারে পড়ে আছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার এমন গল্প পটুয়াখালীর ঘরে ঘরে আছে। গত ৩ থেকে ৯ ডিসেম্বর জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে জলবায়ু যুদ্ধের মুখোমুখি হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পটুয়াখালী এখন দেশের অন্যতম দরিদ্র জেলায় পরিণত হয়েছে।

২০১৯ সালে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) বেসরকারি এক জরিপে দেখা যায়, পটুয়াখালীতে দরিদ্র খানার হার ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে কুড়িগ্রাম ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ এর আগের কয়েক বছর কুড়িগ্রামই ছিল দেশের দরিদ্রতম জেলা। নিপোর্ট, আইসিডিডিআরবি এবং মেজার ইভ্যালুয়েশন যৌথভাবে বাংলাদেশের সামাজিক জনমিতি ও স্বাস্থ্যসেবা সূচক নিয়ে ২০১৮ সালে এই জরিপ করে।

অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সঙ্গে নিপোর্টের জরিপের ব্যবধান অনেক। বিবিএসের বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২ অনুসারে, পটুয়াখালীতে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে নিপোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সূচকের ভিন্নতার কারণে বিবিএসের সঙ্গে নিপোর্টের জরিপের পার্থক্য হওয়া স্বাভাবিক। বিবিএস মূলত জনশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে খানা আয়–ব্যয়ের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে জরিপ করে থাকে। নিপোর্টের জরিপে জনশুমারির তথ্যের বাইরে পারিবারিক আয় ছাড়াও ঘরের অবস্থা, বিদ্যুৎ-সংযোগ, টয়লেটের ধরন, বাসার ধরন, টেলিভিশন ও মুঠোফোন আছে কি না, এসব বিষয় সূচক হিসেবে নেওয়া হয়।

মতলেব মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের দশ গ্রামে আমার মতো অনেক গেরস্ত ছিল, যাদের গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু-মহিষ ছিল। একের পর এক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রায় সবাই নিঃস্ব হয়েছে। গেরস্তের বংশধরদের অবস্থা হয়েছে আরও খারাপ।

এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়ে পটুয়াখালীর মানুষদের স্বাস্থ্যও এখন হুমকির মুখে। একশনএইড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চলমান এক জরিপে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ৪৫ শতাংশ মানুষ এখন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন। চর্মরোগ, ঘন ঘন জ্বর, ঠান্ডা ও সর্দিজনিত অসুখ, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, ফুসকুড়ির মতো রোগ এখানকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের ঘটনা।

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের তথ্যে দেখা গেছে, ১৫৫৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ দেশে অন্তত ৭০টি ঘূর্ণিঝড়ের অর্ধেকই সরাসরি আঘাত হেনেছে পটুয়াখালীতে। ২০০৭ সালে সিডরের পর থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা যায়, এই দেড় যুগে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসগুলোতে পটুয়াখালীর হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, এক লাখের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে, নষ্ট হয়েছে হাজার কোটি টাকার ফসল ও মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়ে পটুয়াখালীর মানুষদের স্বাস্থ্যও এখন হুমকির মুখে। একশনএইড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চলমান এক জরিপে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ৪৫ শতাংশ মানুষ এখন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন। চর্মরোগ, ঘন ঘন জ্বর, ঠান্ডা ও সর্দিজনিত অসুখ, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, ফুসকুড়ির মতো রোগ এখানকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের ঘটনা।

নদীভাঙনে নিঃস্ব

রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ ইউনিয়নের প্রবেশমুখ থেকে ৫০০ মিটার এগিয়ে হাতের ডানে একটি ছোট মসজিদ, পাশে পুকুর। গত ৭ ডিসেম্বর সকালে পুকুরলাগোয়া ধানখেতে শুয়ে পড়া ধান কাটছিলেন নূরুল হাওলাদার (৬০)। দুই প্রয়াত বন্ধু খালেক হাওলাদার ও রশীদ খাঁর কথা স্মরণ করে নূরুল বললেন, ‘এলাকায় ধনসম্পদে আমরা তিন বন্ধু আগায়া ছিলাম। আমার নিজের ১০ কানি (১৬ একর) জমি দরিয়ায় লইয়া গ্যালো। তাও ভালো, ততদিনে পোলামাইয়াগুলা বড় অইয়া গ্যাছিলো। নাইলে হ্যাগোরে লইয়া পথে বওয়া লাগতো।’

চালিতাবুনিয়া দ্বীপের নজরুল ইসলামের (৪৫) গল্প আরও করুণ। পৈতৃক সূত্রে তাঁদের অন্তত ১০০ কানি (১৬০ একরের বেশি) জমি ছিল, নদীভাঙনে সব জমিই হারিয়েছে তাঁর পরিবার। এখন ১০ শতক জমি কিনে কোনোরকমে ঘর–সংসার টিকিয়ে রেখেছেন নজরুল।

পটুয়াখালীর ভেতরে–বাইরে মোট ৪২টি নদী বয়ে গেছে। এসব নদীর বেশির ভাগই প্রতিনিয়ত চাষাবাদযোগ্য জমিসহ ভিটেমাটি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে জার্নাল অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনফরমেশন ইনফরমেটিকস–এ প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে প্রায় এক হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি, ২১০টি পরিবার, দুটি বাজার, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০টি মসজিদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজের তেঁতুলিয়া নদী ঘেঁষে একমাত্র হিন্দুপাড়ায় এখন ১২০টি পরিবারের বাস। ১০–২০ হাত দূরে দূরে করা বাড়ির এই পাড়া আগে ছিল বনজঙ্গল। তাদের আদি পাড়া এখন তেঁতুলিয়া নদীর গর্ভে। এ পাড়ার মানুষের আকুতি— সরকার যেন একটা শক্তপোক্ত বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা সেখানে করে, নাহলে এলাকাছাড়া হতে হবে তাঁদের।

মরিচ বা অন্যান্য খেতে যখন পানি দেওয়া লাগে, ওই সময়ে এমন গরম শুরু হয় যে ঘরেই থাকা যায় না। দিনের বেলায় মাঠে পা দেওয়া যায় না। মনে হয়, মাটির মধ্যে আগুন লাইগা রইছে। কাজকাম সব বন্ধ কইরা গাছের ছায়া খোঁজা লাগে, তা–ও যদি নিস্তার পাওয়া যাইতোকুয়াকাটার চর কাউয়া চরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌকিদার

গরমে মাঠে থাকা দায় কৃষকের

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে এ জেলায় গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে গড়ে ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এই দুই সালের শুধু এপ্রিল মাসের বৃষ্টিপাতের পার্থক্য দেখা দিয়েছে ৩৫ মিলিমিটারের বেশি।

আবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ ছিল ১১৫ দিন। গ্রীষ্মের বাকি দিনগুলোর অধিকাংশ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে গরমকালে কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে পারেন না বলে জানান কুয়াকাটার চর কাউয়া চরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌকিদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মরিচ বা অন্যান্য খেতে যখন পানি দেওয়া লাগে, ওই সময়ে এমন গরম শুরু হয় যে ঘরেই থাকা যায় না। দিনের বেলায় মাঠে পা দেওয়া যায় না। মনে হয়, মাটির মধ্যে আগুন লাইগা রইছে। কাজকাম সব বন্ধ কইরা গাছের ছায়া খোঁজা লাগে, তা–ও যদি নিস্তার পাওয়া যাইতো!’

পেশা পরিবর্তন, চাপ বেড়েছে নদী–সাগরে

চালিতাবুনিয়ার আগুনমুখা নদীর পাড়ে বেল্লাল গাজীর (৫০) বাড়ি। গেরস্ত পরিবারের সন্তান বেল্লাল এখন অন্যের নৌকায় দিনমজুর খাটেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমগো বাড়িতে আগে কাজের লোক রাখা লাগত। দিন–রাত কাজ করত তারা!’

বেল্লাল গাজীর মতো কৃষকেরা এখন পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পটুয়াখালীতে কৃষক পরিবার কমেছে প্রায় ৪০ হাজার বা ১৫ শতাংশ। আবার পেশা পরিবর্তন করা কৃষকদের বড় অংশ এখন জেলে হিসেবে নিজেদের পেশা বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়। রাঙ্গাবালীর আবদুল মালেক হাওলাদারের (৪৫) কথায় তার প্রতিফলনও দেখা গেছে। মালেক হাওলাদার বলেন, ‘আমার বাবা রুস্তম আলী হাওলাদার বড় গেরস্ত বংশের পোলা আছিল। সাত–আট বছর আগেও নিজের জমি থেকে ধান আসত। নদীতে সব হারায়ে এখন শুধু নামের লগে হাওলাদারই রইয়া গ্যাছে, কপালে হাওলাদার বংশের মর্যাদাটা নাই। এহন আমি অন্যের নৌকায় মাছ ধরি।’

জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮–১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩–২৪ পর্যন্ত ছয় বছরে সরকারি হিসাবে পটুয়াখালীতে ১০ হাজার জেলে বেড়েছে। সরকারের এই তালিকার বাইরেও অনেক জেলে আছেন। আগের তুলনায় জেলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.

কামরুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, উপকূলীয় এই জেলার মানুষেরা ছোটবেলা থেকেই মাছ, জাল ও নৌকার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন, ফলে তাঁরা মাছ ধরায় পারদর্শী হন। কোনো উপায় না থাকলে তাঁরা নৌকা ও জাল নিয়ে নদী বা সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী–সাগরে মাছ কমলেও জেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলে নদী ও সাগরে চাপ বেড়েছে।

দুঃখ বাড়ানো বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র

পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর অধীন কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। আশুগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সেগুলোর মধ্যে একটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে কলাপাড়ার ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের ৯২৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। পুরো এলাকাটিই নদীভাঙনপ্রবণ। এভাবে অন্যান্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অন্তত ৯ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার।

গত ৯ ডিসেম্বর চম্পাপুরের ঠিক মাঝামাঝি বাংলাবাজার নামের ছোট বাজারে শিপন হাওলাদারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তাঁর আড়াই একর জমির বেশির ভাগই অধিগ্রহণে নিয়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা ইতিমধ্যে নানা খাতে খরচ হয়েছে। এখন রুজি–রোজগারের ব্যবস্থা নেই।

প্রথম আলোকে শিপন হাওলাদার বলেন, ‘সব শেষ করে আধা কানি (৮০ শতক) জমি অবশিষ্ট আছে। জমিটা পাওয়ার প্ল্যান্টের (বিদ্যুৎকেন্দ্র) পাশে হওয়ায় আগের মতো ধান হয় না। দেখা যায়, গাছ কুঁকড়ায়ে গেছে বা ধানের শিষ ঠিকমতো বের হচ্ছে না। কয়টা কলাগাছ লাগাইছিলাম, কলার ছড়া বের হইছে কিন্তু কলা নাই।’

নজরুল ইসলামদের জমি ছিল ১০০ কানির ওপর। সব হারিয়ে এখন এই ঘর আর সামান্য কিছু জমি অবশিষ্ট আছে। গত ৫ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিয়াবুনিয়ায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য র ম খ ড স ম বর ঘ র ণ ঝড় ত হয় ছ পর ব র ব ব এস দর দ র সরক র মতল ব জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

আজ সকাল ৯টায় শুরু ঢাবির বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে।

এতে বলা হয়, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ এবং সাতটি ছোট মোটিফ।

ঢাবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদের সামনে ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সামনের রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেট বন্ধ থাকবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। 

নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।

নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ