দিনাজপুরের বিরামপুরে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম ওরফে রাজুকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল বুধবার রাত সোয়া একটার দিকে বিরামপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব জগন্নাথপুর মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

খায়রুল ইসলাম বিরামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ২৫ অক্টোবর রশিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে বিরামপুর থানায় একটি মামলা করেন বিপ্লব আলম ওরফে বিলু (৪৭)। মামলার বাদী একই উপজেলার ২ নম্বর কাটলা ইউনিয়নের উত্তর দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় বিএনপি কর্মী।

ওই হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক বলেন, তদন্তের পর ওই হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্টতা আসায় খায়রুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর আদালতে পাঠানোর কথা আছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রলবোমা হামলার মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের শাহাজাহান আলী ওরফে শ্যাম (৪০) নামের সাবেক এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে পৌর শহরের আজাদ মোড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শাহাজাহান আলী ঘোড়াঘাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও ছাত্রলীগের ঘোড়াঘাট উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক। আজ তাঁকে আদালতে পাঠানোর কথা আছে।

গত বছর ২৪ আগস্ট ঘোড়াঘাট পৌর ছাত্রদলের সদস্য সহিদ শেখ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় এ মামলা করেন। এতে উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান, ২ সাংবাদিকসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আওয় ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখতে চান ব্লগার ওয়াশিকুরের বাবা

টিপু সুলতানের বয়স প্রায় ৮০ বছর। জীবনে একের পর এক আঘাত পেয়েছেন। ৯০ দশকের শুরুর দিকে মারা যান বড় ছেলে। এরপর ১৯৯৫ সালের দুই সন্তানসহ তাকে রেখে চলে যান স্ত্রী। সন্তানদের ওপর সৎ মায়ের আঁচড় যেন না পড়ে, সেজন্য আর নতুন সংসার গড়েননি টিপু সুলতান। কোলে-পিঠে করে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন। ১০ বছর আগে ছেলে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান ওয়াশিকুর রহমান বাবুর বাবা।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ঘটনায় ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। পরের বছরের ২০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক এস এম জিয়াউর রহমান। সাড়ে চার বছর বিচারকাজ চলার পর রায় ঘোষণার জন্য ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখ ধার্য করা হয়। কিন্তু, তখন চার্জ গঠনে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে পুনরায় চার্জ গঠন করা হয়। এরইমধ্যে মামলাটি ওই আদালত থেকে ১২তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। এরপর আর তেমন অগ্রগতি নেই এ মামলার বিচারকাজে। 

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ মামলায় চার আসামি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি মামলাটির ধার্য তারিখ ছিল। ওইদিন শুনানির তারিখ পিছিয়ে ৮ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়াশিকুর রহমান বাবুর বাবা টিপু সুলতান বলেন, “ছোটবেলায় ছেলে-মেয়েকে ফেলে তার মা চলে যায়। কোলে-পিঠে করে ওদের বড় করেছি। ওয়াশিকুরকে ঢাকায় কলেজে ভর্তি করি, যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। সেই ছেলেটাকে খুন করল। ১০ বছর হয়ে গেছে। বিচার পেলাম না। বয়সও হয়েছে। মৃত্যুর আগে যেন ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি। বিচার হলে কিছুটা শান্তি পাব।”

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এসব মামলার বিচারে যত্ন নেয়নি৷ তারা মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা নিয়েই ব্যস্ত ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব মামলার বিচার নিশ্চিতে কাজ করছে৷ ইতোমধ্যে মামলার তালিকা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে৷

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মরিয়াম লাকি বলেন, “আমাদের স্যার যথেষ্ট আন্তরিক মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে। তিনি কোনো মামলা ঝুলিয়ে রাখার পক্ষে না। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ও এলাকাবাসী। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করার কথা বলেছে আটককৃত দুই জন। ওয়াশিকুর রহমানের লেখালিখির অন্যতম বিষয় ছিল—ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনা। তার বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতো।

ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান, সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর, মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে জুনায়েদ আহম্মেদ মামলার শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামিরা জামিনে আছেন।

আসামি জিকরুল্লাহ ও আরিফের আইনজীবী আব্দুর রশীদ মোল্লা বলেছেন, “তারা ঘটনাস্থলে ছিল না। এ হত্যাকাণ্ডের আগেই দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এ মামলায় প্রতিটি পদে পদে ভুল হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, বিচার প্রক্রিয়া শেষে তারা খালাস পাবেন।”

ওয়াশিকুর রহমান বাবু রাজধানীর মতিঝিলে ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাবার সঙ্গে বেগুনবাড়ীর ৪/৩-এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপেজলার উত্তর হাজীপুরে।

মামলার বাদী ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ ফ্রান্স প্রবাসী বলে জানিয়েছেন টিপু সুলতান। তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেননি।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ